নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী এরশাদ কন্যা ও জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
মামলার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম মিয়া।
সোনারগাঁও উপজেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি ফজলুল হক মাস্টার বাদী হয়ে সোমবার গভীর রাতে সোনারগাঁ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ফজলুল হক জাতীয় পার্টির স্থানীয় এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার সমর্থক।
মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, কিছুদিন যাবত অনন্যা হুসেইন মৌসুমী তার ফেসবুকে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা বানোয়াট তথ্য প্রচার করে মানহানি করছেন। তার ধারাবাহিকতায় গত ৬ই নভেম্বর মৌসুমী লিখেন, ‘আমার এলাকায় যারা রাজনীতি করে নিজেদের হাডানে রাজনীতি না করার কারনে, খাল কেটে কুমির এনেছে, এখন সেই কুমিরকে খাবার দিতে দিতে নিজেরা খাবার হয়ে গেছে।’ একই দিন লিখেন, জাতীয়পার্টির ৪/৫ জন নির্বাচনে বানিজ্য ভালই করছেন। একজন মোটা হচ্ছে পয়সা পেয়ে, অন্যজন দিয়ে বোকা হচ্ছে।’ এছাড়াও ১৪ই নভেম্বর মৌসুমী লিখেন, বারবার এই দালালগুলোই কখনও আওয়ামীলীগ, কখনও বিএনপির পা চাটা কুত্তা হয়ে সত্যিকার এরশাদ প্রেমিকদের সরিয়ে দিয়ে জাতীয় পার্টিকে আজকে বিলুপ্তির দিকে নিয়ে গেছে। ১৭ই নভেম্বর লিখেন, আসলে জাতীয়পার্টির ত্যাগী আর তৃনমূল নেতারা পয়সার কাছে হেরে যাবে শুধুমাত্র মহাসচিবের এর ভুল সিলেকশনের কারণে। মহাসচিব যদি তার লোভ আর একক চালাকি বন্ধ না করে তবে আমরাও ওনাকে ক্ষমা করব না। উনার দালাল গ্রুপ দিয়ে স্যারকে যা বুঝায় স্যার তাই বুঝেন। স্যার ইমোশনাল।
এবার একটা কিছু করতে হবে।’ এসব লেখায় জাতীয়পার্টির মানহানি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে বলে বাদি দাবি করেন।
এদিকে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে এখানে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন পান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পান বর্তমান এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার মহাজোটের শরীক দল জাতীয় পার্টিকে এ আসনটি ছেড়ে দিলে এখানে মোশারফ হোসেন তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নেন এবং বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় জাতীয় পাটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি নির্বাচিত হন। এর আগে এখানে অপরিচিতই ছিলেন এমপি খোকা। এক সময় এখানকার জাতীয়পার্টির হাল ধরেছিলেন মৌসুমী। বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে জাতীয়পার্টির নেতাকর্মী সংগ্রহ ও কমিটি গঠন করেছিলেন। কিন্তু ৫ জানুয়ারির সেই নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। এমনকি সাড়ে ৪ বছর তিনি সোনারগাঁয়ে রাজনীতিও করতে পারেননি।এর আগে এখানে লিয়াকত হোসেন খোকা রাজনীতিতে ছিলেন না। ওই সময় সোনারগাঁও উপজেলা জাতীয়পার্টির সভাপতি ছিলেন মৌসুমী। নির্বাচনের কয়েক মাসের মাথায় উপজেলা জাতীয়পার্টির অফিসে হামলার শিকার হন মৌসুমী। ওই সময় তিনি থানায় অভিযোগ দিলেও মামলা গ্রহন করা হয়নি। পরে তিনি কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। গত ৭ সেপ্টেম্বর তিনি সোনারগাঁয়ে নির্বাচনী মাঠে নামেন। তিনি দাবি করেছিলেন, এরশাদ তাকে সবুজ সংকেত দিয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়ে মাঠে নামিয়েছেন। এ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকে মৌসুমী ও এমপি খোকা মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন।
এদিকে দায়ের করা মামলাটি মিথ্যা, বানোয়াট দাবি করে জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনন্যা হুসেইন মৌসুমী বলেন, ‘ক্ষমতার জোরে তারা আমার বিরুদ্ধে এ মামলা করেছে। আমি তৃণমূল থেকে কাজ করে আসছি। কাজ করে মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়েছি। আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। আমাকে নির্বাচন থেকে সরানোর চক্রান্ত করা হচ্ছে। সেই চক্রান্তেরই অংশ এই মামলা।’