বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহরিয়ার শহীদের দাফন সোমবার মরহুমের নিজ গ্রামে সম্পন্ন হয়েছে। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার ডৌকার চর গ্রামে তৃতীয় নামাজে জানাজা শেষে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গনে মরহুমের পৃথক দু’টি নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
সাংবাদিক শাহরিয়ার শহীদ জাতীয় প্রেসক্লাবরে স্থায়ী সদস্য ও ডিআরইউর প্রতিষ্ঠাকালীন কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে শাহরিয়ার শহীদের মরদেহবাহী যান নরসিংদীর রায়পুরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
এদিকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও স্বনামখ্যাত সাংবাদিক শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা।
সোমবার দুপুরে শাহরিয়ার শহীদের মরদেহ রাজধানীর পুরানা পল্টনস্থ তার প্রিয় কর্মস্থল বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর কার্যালয়ে শেষ বারের মত আনা হলে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। এখানে বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ মরহুমের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে মরহুমের দ্বিতীয় নামাজে জানাজার আগে মরহুমের স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, বাসসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাসসের সাবেক প্রধান সম্পাদক গাজীউল হাসান খান ও আজিজুল ইসলাম ভূইয়া, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের সভাপতি মোল্লা জালাল, বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার সাহা ও কামরুল ইসলাম চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূইয়া, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।
নামাজে জানাজা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাব, বিএফইউজে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শাহরিয়ার শহীদের সহপাঠী বন্ধুরা, ডিইউজে, বাসস ডিইউজে ইউনিট, ঢাকাস্থ নরসিংদী জেলা সাংবাদিক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
ডিআরইউতে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এম শফিকুল করিম সাবু ও সাখাওয়াত হোসেন বাদশাসহ মরহুমের সহপাঠীরা।
শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভার শোক :
এদিকে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও স্বনামখ্যাত সাংবাদিক শাহরিয়ার শহীদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘শাহরিয়ার শহীদ একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং ৩০ বছর তিনি বাসসে চাকরি করেছেন। তার অকাল মৃত্যুতে দেশের সাংবাদিকতা পেশার জন্য বিরাট ক্ষতি হল।
শাহরিয়ার শহীদ গত ১৭ নভেম্বর (শনিবার) রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৪ নভেম্বর তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। শাহরিয়ার শহীদ খ্যাতিমান সাংবাদিক ও অধুনালুপ্ত ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমসের সম্পাদক মরহুম একেএম শহীদুল হকের ছেলে। শাহরিয়ার শহীদ আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি ও মানবতাবাদ এবং সুফিবাদের একনিষ্ঠ অনুরাগী ছিলেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবে স্মৃতিচারণ :
ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, অত্যন্ত বন্ধুবৎসল শাহরিয়ার শহীদ আমৃত্যু নীতি-নৈতিকতা মেনে সাংবাদিকতা করেছেন। পেশাদার সাংবাদিকতার মূর্ত প্রতীক ছিলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বলেন, অসাধারণ ভালো মানুষ ছিলেন শাহরিয়ার। আবুল কালাম আজাদ বলেন, মনে-প্রাণে শাহরিয়ার শহীদ একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি অঞ্চলভিত্তিক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাতকার ভিত্তিক ৩০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শাহরিয়ার শহীদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ অন্তঃপ্রাণ ব্যক্তিত্ব। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কিভাবে ধরে রাখা যায় সেজন্য তিনি অনেক কাজ করেছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ব্যক্তিগত জীবন ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে শাহরিয়ার ছিলেন সততার প্রতীক। সমাজের পঙ্কিলতা তাকে কষ্ট দিতো।