ঢাকা: আসন বণ্টন বিএনপির জন্য এবার খুব একটা চ্যালেঞ্জিং হবে না বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। কিছুটা ‘উদার’ মনোভাব নিয়েই এগোচ্ছে। যোগ্য প্রার্থী পেলে আসন ছাড়তে প্রস্তুত থাকবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই বড় শরিক দলটি। বিএনপি বলছে, জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী থাকলে শরিক দলগুলোকে আসন ছাড়তে তাদের কোনো আপত্তি নেই।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে তাদের কাছে যে তথ্য, তাতে তাদের শরিক দলগুলোর ৫০ থেকে ৬০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার মতো সক্ষমতা আছে। তারপরও বিএনপি ৭০টির মতো আসন ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে পাঁচ দলের সমন্বয়ে গড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। দলগুলো ইতিমধ্যে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা শুরু করে দিয়েছে। বিএনপি এবার একই সঙ্গে দুটি ভিন্ন জোটভুক্ত দল। আগে থেকেই তাদের সঙ্গে আছে ২০ দল। সেখানে আরও তিনটি দল যোগ দিয়েছে। এ ছাড়া এক মাস আগে গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নিয়ে বিএনপি গড়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
২০ দলীয় জোটে বিএনপিকে আসনের বড় একটি অংশ ছাড়তে হবে জামায়াতের জন্য। নির্বাচন কমিশন থেকে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে। তবে দলটি বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করেই নির্বাচন করবে। বিএনপি সূত্রে জানা যায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়ার সম্ভাবনা আছে জামায়াতের। এ জোটটিতে এলডিপি, খেলাফত মজলিস, বিজেপি, কল্যাণ পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামিকে কিছু আসন দিতে হবে বিএনপির।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আসন ও অন্যান্য বিষয়ে বিএনপি এবার বেশ উদার মনের পরিচয় দিচ্ছে। সঠিক ও যোগ্য প্রার্থী হলে তারা আসন ছেড়ে দেবে।’ তিনি জানান, ঐক্যফ্রন্টের শরিকরাও ভালো প্রার্থী নিয়ে আসছেন। আসন বিষয়ে ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে এখনো তেমন কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে বলেন, তবে খুব দ্রুতই তা করতে হবে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোর চাওয়াই এবার ১৫০ টির মতো আসন। প্রতিটি দলই মনে করছে, তাদের ‘যথেষ্ট’ যোগ্য প্রার্থী রয়েছে। তবে জোটের শরিকদের চাহিদা অনেক থাকলেও বিএনপি মনে করছে প্রার্থী ও মাঠের ভোট বিবেচনা করলে তাদের খুব বেশি আসন ছাড়তে হবে না।
বিএনপির এক সূত্র জানায়, দুই জোটেই বিএনপি এবার প্রয়োজন অনুযায়ী আসন ছাড়তে রাজি আছে। সে ক্ষেত্রে শরিক দলগুলোকে যোগ্য প্রার্থী আনতে হবে। শরিকদের চাহিদা যেমনই হোক তাদের হিসেব অনুযায়ী বিএনপিকে ৫০ থেকে ৬০টি আসনের বেশি ছাড়ার দরকার হবে না। তবে এই দলটি অন্তত ৭০টি পর্যন্ত আসন ছাড়তে প্রস্তুত। আসন বণ্টন নিয়ে ঝামেলা হওয়ারও সম্ভাবনা নেই বলে জানায় সূত্রটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আসন বণ্টন নিয়ে আমাদের প্রাথমিক কোনো মিটিং হয়নি। আগে নিজেদের দলে এই বিষয়গুলো ঠিক করতে হবে। প্রত্যেক দল ও জোটের সঙ্গে বসতে হবে। তারপর আমরা ঠিক করব।’ তিনি আরও বলেন, জোটের শরিক দলগুলো এখন নিজেরা গোছাচ্ছে। বিএনপিও নিজেদের মধ্যে বসে প্রার্থী বাছাই করবে। যেকোনো দলই যোগ্য বা জেতার মতো প্রার্থী পেলে তাঁকে মনোনয়ন দিতে চাইবে।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণ হবে। ইতিমধ্যে প্রায় সবগুলো দলই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম গণতান্ত্রিক জোট এবারে নির্বাচনের অংশ নেওয়াকে ‘আন্দোলনের অংশ’ বলছে। দুটি জোটই জানিয়েছে তারা শেষ পর্যন্ত তারা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। পরিস্থিতি অনুযায়ী তারা যেকোনো সিদ্ধান্তও নিতে পারে।
ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, একদিকে তারা যেমন নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন ও আলোচনা করে যাচ্ছেন, তেমনি নির্বাচনের প্রস্তুতিতেও পিছিয়ে নেই তারা। আজ মাহমুদুর রহমান মান্না সাংবাদিকদের বলেন, সরকার চায় না বিরোধী দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যত বাধা বিপত্তিই হোক ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে করবে বলে জানান।
ঐক্যফ্রন্ট তফসিল এক মাস পেছানোর দাবিতে গতকাল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে এসেছে। বৈঠক শেষে গতকাল নেতারা জানান, ইসি তাদের দাবি বিবেচনা করবে। তবে আজ ইসি সচিব ঐক্যফ্রন্টের দাবিকে বাস্তবসম্মত ও যুক্তিসংগত নয় বলে উল্লেখ করে নির্বাচন পেছানো হবে না বলে জানান।
নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে জোটের নেতাদের মধ্যে কিছুটা দোটানা থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার ড. কামাল হোসেনের চেম্বারে স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। এর আগে কামাল হোসেনের গণফোরাম ও কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে ইসিতে চিঠি দেয়। অবশ্য সেখানে দল ও জোটের প্রতীকের কথাও উল্লেখ করা হয়।