বিবিসি: বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের নেত্রীর প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার প্রশ্নে তারা আদালত পর্যন্ত যাবেন। বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া দু’টি দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলেও, দলটির নেতারা বলছেন, তাদের নেত্রী তিনটি আসনে নির্বাচন করবেন।
বিএনপির নেতারা বিবিসিকে জানিয়েছেন, খালেদা জিয়া নিজেও নির্বাচন করতে চেয়েছেন।
যদিও দুর্নীতিতে সাজা হওয়ার কারণে আদৌ তার প্রার্থিতা গৃহীত হবে কীনা – তা নিয়ে বিস্তর সন্দেহ এবং বিভ্রান্তি রয়েছে।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেছে। কয়েকদিন আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিশেষ জজ আদালতে তার সাত বছরের সাজা হয়েছে।
কোন ভরসায় খালেদা জিয়া নির্বাচন করতে চাইছেন?
দু’টি মামলারই পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি না পাওয়ায় বিএনপির নেত্রীর পক্ষে এখনও আপিল করা সম্ভব হয়নি।
এখন মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়ের মধ্যে রায়ের কপি পাওয়া এবং আপিলের সুযোগ কম বলে বিএনপি নেতারা মনে করছেন।
একইসাথে তারা বলছেন, এ ধরনের ইস্যুতে আপিল বিভাগের আগের রায় আছে, সেই রায়ের আলোকে নির্বাচন কমিশনই তাদের নেত্রীকে নির্বাচনে যোগ্য ঘোষণা করতে পারে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছিলেন, বিষয়টাতে ভিন্ন ভিন্ন আইনি ব্যাখ্যা থাকলেও তাদের নেত্রী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হবেন বলেই তারা বিশ্বাস করেন।
‘আইনজীবীদের দুই রকমই ভাষ্য আছে। যেমন একপক্ষ বলছেন যে, এটা পারবেন না। আরেক পক্ষ বলছেন, পারবেন। আমরা মনে করছি, এটা বাধা হবে না। তিনি নির্বাচন করতে পারবেন। আমরা এই মুহূর্তে মনে করছি, সেখানে কোনো বাধা নেই।’
কিন্তু দুর্নীতির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজা হওয়ায় সেখানে নৈতিক স্খলনের বিষয় আসে। আর এই ইস্যুতেই নির্বাচনে প্রার্থীকে অযোগ্য বিবেচনা করা হয়।
বিএনপি নেতারা একটি ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়েছেন, তারা বলছেন, রায়ের সার্টিফাইড কপি না পাওয়া পর্যন্ত তারা যদি আপিল করতে না পারেন, সেই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনও বলতে পারে যে, তারা রায়ের কপি পায়নি।
ফলে কমিশন প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করতে পারে। ভিন্নমত বা ভিন্ন ব্যাখ্যা যে আছে, সেটাও বিএনপি নেতারা বিবেচনায় রাখছেন।
তবে তারা শুধু নিজেদের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করছেন।
দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ বলেছেন, আদালতে পুরনো রায় এবং আগের সংসদগুলোর অভিজ্ঞতার উপরও ভরসা করছেন তারা।
‘আমরা মনে করি, এটা একটা ব্যাখ্যার বিষয়। কোনো সাজাপ্রাপ্ত আসামির মামলা যদি আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকে, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে পারেন। এর সুযোগ নিয়ে বর্তমান সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী বা এমপি আছেন।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘আমরা চাই আমাদের নেত্রী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক এবং উনিও নির্বাচন করতে চান। সেজন্য মনোনয়নপত্র নেয়া হয়েছে এবং মনোনয়ন পত্র দাখিলও করা হবে।’
বিএনপি নেতাদের অনেকে বলেছেন, অনিশ্চয়তা এবং বিভ্রান্তি থাকলেও দলের নেতা কর্মী এবং ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করার রাজনৈতিক কৌশল থেকে খালেদা জিয়াকে প্রার্থী করা হচ্ছে।
তারা আওয়ামী লীগের নেতা মহিউদ্দিন খান আলমগীরের উদাহরণ টেনে আনছেন।
সাজা হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে অংশ নিয়ে মহিউদ্দিন খান আলমগীর সংসদ সদস্য হয়েছিলেন এবং তিনি আওয়ামী লীগ সরকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হয়েছিলেন।
সে সময়ের নির্বাচন কমিশনের কমিশনার ছিলেন এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, কমিশন তখন মি. আলমগীরের মনোনয়ন পত্র বাতিল করেছিল।
‘আমাদের অভিজ্ঞতার কথা যদি বলি, মহিউদ্দিন খান আলমগীরের দুই বছরের বেশি সাজা হয়েছিল নিম্ন আদালতে। এবং উনি জামিনে ছিলেন। সেটা যখন রিটার্নিং অফিসার বাতিল করলো, তিনি আপিল করেছিলেন নির্বাচন কমিশনে। তখন আমরা কমিশনও তার আবেদন বাতিল করে দিয়েছিলাম। পরে উনি উচ্চতর আদালতে চেম্বার জাজের কাছে গিয়েছিলেন, চেম্বার জজ উনাকে নির্বাচন করার পক্ষে রায় দিলেন। এরপর আমরা তাকে নির্বাচন করতে দিয়েছিলাম।’
‘কিন্তু আলটিমেটলি উনার সংসদ সদস্য পদটি খারিজ হয়ে যায়। পরে যখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ উনার আপিল খারিজ করে দিয়ে বললো, তিনি যেদিন মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন, সেইদিন তিনি সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন।’
নবম সংসদের শেষ পর্যায়ে গিয়ে আদালতে রায়ে মি. আলমগীরকে সংসদ সদস্যপদ হারাতে হয়েছিল।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিভ্রান্তি বা অস্পষ্টতা যাই থাকুক না কেন, তাদের নেত্রীর প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার প্রশ্নে তারা আদালত পর্যন্ত যাবেন।