বিবিসি: আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জোটটির শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে তাদের এমন সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।
বিএনপির আরেকটি জোট ২৩ দলও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে বলেছেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা শর্তসাপেক্ষে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। তবে নির্বাচনের সময় পিছানোর দাবি জানাবে তারা।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. হোসেনের আজ রোববার (১১ নভেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে।
যদিও সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকার গঠন করাসহ ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি পূরণ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দুই দফায় সংলাপে তাদের মূল দাবিগুলো নাকচ হয়ে গেছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন, যেহেতু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে, ফলে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে তারা কোনো কর্মসূচি নিলে তাতে পুলিশের অনুমতি না দেয়ার বা আইনগত প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া নির্বাচন বানচালের চেষ্টার অভিযোগও আনা হতে পারে। এর পাশাপাশি তারা রাজনৈতিক অন্যান্য বিষয় বিবেচনায় নিয়ে তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে চাইছেন।
অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে বিএনপি নেতৃত্ব তাদের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাপের মধ্যে রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি এবার একতরফাভাবে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে দিতে রাজী নয়। সেখানে অন্যান্য দাবি পূরণ না হলেও বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা কীভাবে নির্বাচন যাবে, সেই প্রশ্নও দলটির অনেকে তুলছেন।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, তারা তাদের দলের নেত্রীর মুক্তিসহ দাবিগুলোতে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন।
তবে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার তারিখ এবং নির্বাচনের সময় পিছিয়ে তফসিল নতুনভাবে সাজানোর বা পুনঃতফসিলের দাবি জানাতে পারে। তারা তাদের আন্দোলনও অব্যাহত রাখবে।
দুই-এক দিনের মধ্যে এই ফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের গ্রেফতার বা পুলিশী হয়রানি বন্ধ করাসহ সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির দাবি জানাতে পারে। তারা সরকারের সঙ্গেও আলোচনা চাইবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম একজন নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘নির্বাচনের তফসিল যেটা ঘোষণা করা হয়েছে, এই অল্প সময়ে প্রক্রিয়াগুলো করা প্রায় অসম্ভব। সেজন্য আমরা তফসিল ঢেলে সাজাতে বলবো। গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে। রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বন্ধ করতে হবে নতুন নতুন মামলা দেয়া। এর সঙ্গে সবার জন্য সমান সুযোগ আমরা চাইবো। এই বিষয়গুলো আমরা এখন হাইলাইট করবো।’
এদিকে, কোন দল কোন জোট থেকে নির্বাচনে অংশ নেবে, বা কোন দল এককভাবে নির্বাচন করবে, সে ব্যাপারে দলগুলোকে আজই কমিশনে জানাতে হবে।
২৩ দলীয় জোটের কয়েকটি শরিক দলের নেতারা জানিয়েছেন, এই জোটের শরিক কোন কোন দল ধানেরশীষ প্রতীক নেবে এবং কয়টি আসন চায়, তা জানতে চেয়ে তাদের প্রধান শরিক বিএনপি ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্যরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার কথা জানিয়ে দিয়েছে।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় এই দলের প্রার্থীরা কিভাবে নির্বাচন করবেন, তা নিয়ে তাদের জোটেও আলোচনায় কোন ফল আসেনি।
তবে বিএনপির প্রতীক নেয়া না নেয়ার প্রশ্নে জামায়াত আজ রোববার সকালের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত বিএনপিকে জানাবে।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাদের দুই জোটে আসন ভাগাভাগিতে সমস্যা হবে না বলে তারা মনে করেন। তবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের জোটের শরিকরা ইতিমধ্যে মনোনয়ন প্রার্থীদের মধ্যে ফরম দেয়া শুরু করেছে। তারা পুরোপুরি নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছে।
বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলছেন, তাদেরও প্রস্তুতি আছে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে তারা সময় চাইবেন।
বিএনপি নিজেদের মধ্যে এবং জোটের শরিকদের সঙ্গে কয়েকদফা বৈঠক করেছে শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত। দলটি প্রথমে তাদের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নিজেদের অবস্থান ঠিক করেছে। এরপর বিএনপি বৈঠক করেছে তাদের পুরোনো ২০ দলীয় (বর্তমানে ২৩ দলীয়) জোটের শরিকদের সঙ্গে।