নির্বাচন কমিশন বলছে, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে তা রোববারের মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে। শুক্রবার সবগুলো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলকে একটি চিঠি দিয়ে এ কথা জানায় নির্বাচন কমিশন।
কমিশন বলেছে, তা না হলে কোনো জোটের মনোনীত প্রার্থী, ওই জোটের প্রধান দলের প্রতীক ব্যবহারের সুযোগ পাবেন না।
কিন্তু কোন দল কিভাবে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করবে সেটা কেন নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকে জানাতে হবে?
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেবার জন্য জনপ্রতিনিধিত্ব আইনে এই বিধান রাখা হয়েছে। সেজন্যই কমিশনের জানা দরকার কোন দলকে কী প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
“কোনো প্রার্থী যদি কোনো দলের হয়, তাহলে সেই দলের জন্য একটা প্রতীক বরাদ্দ আছে। কোনো দলের মনোনয়ন না পেলে সে স্বতন্ত্র প্রতীক পাবে। কিন্তু যখন কয়েকটি দল মিলে জোট করে, তখন একটি নির্বাচনী এলাকায় একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দিতে হবে। তখন জোটই পছন্দ করবে ঐ প্রার্থীকে কোন প্রতীক দেবে। সেটা নির্বাচন কমিশনকে জানানোর বিধান আছে আইনে” – বিবিসি বাংলাকে বলেন শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।
কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে যদি রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধান্ত নিতে না পারে, তাহলে কি হবে?
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, সে ক্ষেত্রে সময়সীমা বাড়ানোর জন্য দলগুলো যদি আবেদন জানায়, তখন কমিশনকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি করবে।
এদিকে নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোট কেমন হবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগ জানিয়েছে, নির্বাচনে জোটের রূপরেখা কেমন হবে, সেটি নির্ধারণের জন্য বৈঠক করছে তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জানিয়েছেন, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েকদিন সময় চাইবে তার দল।
“আমাদের প্রাথমিক একটা চিন্তাভাবনা আছে, সেটা যদি আমরা চূড়ান্ত করতে না পারি, তাহলে আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে সময় চাইব। বেশি সময় নেবার তো সুযোগ নেই, কারণ তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। আমরা যৌক্তিক একটা সময়ই হয়তো চাইব” – বলেন হানিফ।
তিনি জানিয়েছেন, “আওয়ামী লীগের আদর্শিক জোট আছে ১৪ দলের সঙ্গে, তাদের সাথে যখন দলটি নির্বাচন করেছে, তারা সবাই নৌকা মার্কায় নির্বাচন করেছে।”
এর বাইরে জাতীয় পার্টির সাথে আছে আওয়ামী লীগের ‘মহাজোট’ নামে নির্বাচনী জোট । এই দলটির সাথে আওয়ামী লীগের জোট থাকলেও তারা নিজেদের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে।
এদিকে, রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের জোট সম্পর্কে কমিশনকে জানানোর জন্য চিঠি দেয়া হলেও, নির্বাচন কমিশনার চৌধুরী জানিয়েছেন, নির্বাচনে কোনো জোটকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয় না।
অর্থাৎ এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটকে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে না, বরং সেই জোটের নেতৃত্বে থাকা দলকে প্রতীক দেয়া হবে।
কিন্তু বিরোধী বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে যাবে কিনা, কিংবা গেলে কিভাবে এবং কোন জোটের সাথে যাবে, সে বিষয়ে এখনো কোন সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেনি দলটি।
অর্থাৎ এখনো পর্যন্ত দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কেউই বিষয়টি নিয়ে স্থির কোনো ঘোষণা দেয়নি।
ফলে জোট বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য দ্রুত এই সময় বেঁধে দেয়ার ফলে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন অনেকে। আবার এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর কিছুটা চাপও সৃষ্টি করতে পারে বলে মত দেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ।
“এটা আসলে একটু অসুবিধাজনক বলে আমার মনে হয়, কারণ যে কোন সময় জোট ভেঙ্গে যেতে পারে, আবার জোট বড় হতে পারে এই সময়ের মধ্যে” – বলেন শাহনেওয়াজ।
কারা কারা জোট করবে তাও তো এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আবার শেষ মূহুর্তে কোন দল নতুন জোট করতে পারে। এর জন্য অসুবিধা দেখা দিতে পারে।”
কমিশন জানিয়েছে ৩০শে নভেম্বর নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে নির্বাচনের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।
আর তার আগে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো আইনত অপরাধ। প্রতীক বরাদ্দের পর ২১ দিন প্রচার চালাতে পারবেন প্রার্থীরা।