মো. সাজ্জাত হোসেন, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি:সড়ক দূর্ঘটনায় লাল মিয়া মারা যায়নি। তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। পূর্ব শক্রতা ও জমি সংক্রান্ত বিরোধ এবং মারামারি মামলার জের ধরে লাল মিয়াকে তার আপন চাচাতো ভাই সবুজ হত্যা করেছে বলে নিহত পরিবারের দাবি। গত সোমবার কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের বালীগাঁও চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন নাভানা কোম্পানীর পশ্চিম পাশে ট্রাকের ধাক্কায় লাল মিয়া নিহত হয়। পরিবারের লোকজন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌছলে লাল মিয়ার লাশ দেখে থানায় খবর দিলে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। তখন পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়- এটা কোনো দূর্ঘটনা নয়, তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকান্ডের সাথে সবুজ জড়িত আছে বলে লাল মিয়ার পরিবারের লোকজন জোর দাবি জানান। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুলতানউদ্দিন খান ওই দিন দুপুরে সবুজকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। নিহত লাল মিয়ার লাশ প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্ট করে ময়নাতদন্তের জন্য তার লাশ গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেন।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. সুলতানউদ্দিন খান বলেন, নিহত লাল মিয়ার সাথে সবুজের জমি সংক্রান্ত ও মারামারি বিষয়ে পাল্টাপাল্টি মামলা রয়েছে। সবুজ সেভেন রিং সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে যেই গাড়িটি চালাতো সেই গাড়িতে রক্ত ও মগজের ছাপ লেগে থাকে। এতে বুঝা যায় সবুজ পরিকল্পিতভাবে লাল মিয়াকে হত্যা করেছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে সোমবার রাতে নিহত লাল মিয়ার স্ত্রী মোসা. ঝুমা আক্তার সবুজ ও তার গাড়ির হেলপার রুবেলের নামে ৩০২/৩৪ ধারায় কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৮(১১)১৮, তারিখ-৫.১১.১৮। সবুজের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ গতকাল বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে প্রেরণ করেছে। আসামি সবুজ কালীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড চৈতরপাড়া গ্রামের মো. আফজল হোসেনের বড় ছেলে।
গতকাল বুধবার নিহত লাল মিয়ার বাড়িতে গেলে দেখা যায়, লাল মিয়ার স্ত্রী অঝোরে কান্নাকাটি করছে। তার স্বামীর খুনি সবুজের ফাঁসির দাবি জানান। লাল মিয়া মা চাঁনবানু কথা বলতে পারছে না। শুধু উপরের দিকে তাকিয়ে আল্লাহপাকের নিকট বিচার চেয়ে কান্নাকাটি করছে। নিহতের স্ত্রী ঝুমা আক্তার বলেন, আমার স্বামী লাল মিয়া এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে মেশিনে ইট ভাঙ্গানোর ব্যবসা করতো। আসামির সাথে লাল মিয়াসহ তার পরিবারের অন্যদের জমিসহ পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলছিল। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে গত ১৪.১.১৮ তারিখে আসামি সবুজসহ অন্যান্য আসামিরা আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমার স্বামী বাদী হয়ে যেই মামলাটি করে তাতে আসামিরা জামিনে মুক্তি পেয়ে মামলাটি তুলে নেওয়ার জন্য স্বামীকে ভয়ভীতি ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। গত সোমবার সকালে আমার স্বামী শারীরিক অসুস্থ থাকায় ঔষধ আনার জন্য মোটরসাইকেল যোগে কালীগঞ্জ বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হলে টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল বাইপাস সড়কের বালীগাঁও চৌধুরী বাড়ি সংলগ্ন নাভানা কোম্পানীর পশ্চিম পাশে পৌছলে আসামি সবুজের চালিত ট্রাকটি হত্যার উদ্দেশ্যে মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে সে রাস্তায় পড়ে গেলে সবুজ ও তার সহযোগী একই গ্রামের ওয়াজকরনীর ছেলে রুবেলের পরস্পরের যোগসাজসে সেভেন রিং ফ্যাক্টরির ঢাকা মেট্রো উ ১১-১৯৬৭ খালি গাড়িটির চাকা দ্বারা মাথা পৃষ্ট করে দ্রæতগতিতে চলে যায়।
কালীগঞ্জ পৌরসভাধীন চরমিরপুর এলাকায় সেভেন সার্কেল (বাংলাদেশ) সেভেন রিং সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে গিয়ে সবুজের চালিত গাড়িটি পর্যবেক্ষণ করে গাড়িতে রক্ত ও মগজ লেগে থাকতে দেখে পুলিশ তা আলামত হিসেবে থানায় নিয়ে আসেন। নিহত লাল মিয়ার এক ছেলে জাহিদ হাসান ও এক মেয়ে পুষ্মিতা আক্তার তাদের বাবার হত্যাকারীর ফাঁসির দাবি জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালীগঞ্জ পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড চৈতরপাড়া গ্রামের নিহত লাল মিয়ার পিতা মৃত আব্দুল বারেক ও আসামি সবুজের পিতা মো. আফজাল হোসেন আপন দুই ভাই। সেমতে নিহত লাল মিয়া ও আসামি সবুজ আপন চাচাতো ভাই। তাদের মধ্যে পূর্ব থেকেই জমি সংক্রান্ত ও পারিবারিক বিরোধ রয়েছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবু বকর মিয়া বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি সবুজই পূর্ব শক্রতার জেরে লাল মিয়াকে হত্যা করেছে। পূর্বে সবুজের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় মারামারির মামলা রয়েছে । লাল মিয়া বাদী হয়ে গত ১৬.১.১৮ তারিখ সবুজসহ ৫জন এবং অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন, যার মামলা নং-০৭(১)১৮। বর্তমানে মামলাটি গাজীপুর বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সবুজের বিরুদ্ধে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে তাকে বুধবার গাজীপুর কোর্টে প্রেরণ করা হয়েছে।