একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপকে গুরুত্ব দিয়েই দেখছে আওয়ামী লীগ। ঐক্যফ্রন্টের দাবি-দাওয়া নিয়ে দল ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে বিশ্লেষণ অব্যাহত রয়েছে। তবে আগামীকাল বুধবার দ্বিতীয় দফা সংলাপ সামনে রেখে দুই ইস্যুতে অনড় অবস্থানে থাকবে আওয়ামী লীগ। প্রথমত, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি অর্থাৎ তাকে মুক্তি দেয়া হবে না এবং দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে শেখ হাসিনা বহাল থাকা অর্থাৎ তিনি পদত্যাগ করবেন না। এই দুই বিষয়ে ঐকমত্য হলে আগামী নির্বাচনকালীন সরকারে ঐক্যফ্রন্টের যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
দলটির শীর্ষ নেতারা মনে করেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মামলার সাথে সরকার জড়িত নয়। যে মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে অবস্থান করছেন ওই মামলাটি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হয়েছিল। দীর্ঘ শুনানির পরে আদালত রায় দিয়েছেন। ফলে বিএনপি নেত্রীর মুক্তির বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। আর নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন বর্তমান সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এটি সংবিধানেরই অংশ। আওয়ামী লীগ সব সময় সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে চায়। ফলে সংবিধানের মধ্যে থেকে ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে দাবি উত্থাপন করলে সরকার সেটা ভেবে দেখবে। গত নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপের আহ্বান এবং নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় ছেড়ে দেয়ার উদাহরণ টেনে শীর্ষ এক নেতা বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী বিএনপিকে সংলাপের জন্য টেলিফোন করেছিলেন। কোন কোন মন্ত্রণালয় বিএনপি চায়- সেটাও ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বিএনপি তথা খালেদা জিয়া সেটা মেনে না নিয়ে আন্দোলন করলেন। এই সংলাপ আয়োজনের বিষয়ে জোট-মহাজোটের মধ্যে মত-দ্বিমত রয়েছে। জোটের কোনো কোনো দল ঐক্যফ্রন্টের সাথে সংলাপ না করার কথাও বলেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর উদার মন-মানসিকতার কারণেই সংলাপ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চান আগামীতে দেশে একটি অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। ওই নির্বাচনে জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় যাবে।
অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সংলাপে ঐক্যফ্রন্টের দাবির বিষয়ে আওয়ামী লীগ বা সরকারের তরফ থেকে কোনো কিছুই আগবাড়িয়ে বলা হবে না। ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো দাবি উত্থাপন করা হয় তাহলে আলোচনার টেবিলেই সিদ্ধান্ত হবে। ঐক্যফ্রন্ট জোরালোভাবে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাইলে প্রধানমন্ত্রী সেটি ইতিবাচক হিসেবে দেখবেন। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজনৈতিক বিবেচনায় মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তও নিতে পারেন সরকারপ্রধান। তবে সেটি নির্ভর করছে ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জোরালো দাবির ওপর। ঐক্যফ্রন্ট নেতারা নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবি জানালে কোনোভাবেই সংবিধানের বাইরে যাবে না আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান মেনে নিলেই কেবল আলোচনায় এগোতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এই একটা বিষয়ে কোনো ধরনের ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনকালীন সরকারপ্রধান হিসেবে শেখ হাসিনাকে মেনে নিলেই কেবল আগামী নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সুযোগ পেতে পারে ঐক্যফ্রন্ট। সেটিও সাংবিধানিক রূপরেখার মধ্যে থেকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঐক্যফ্রন্ট এবং যুক্তফ্রন্টের সাথে সংলাপে তাদের বেশ কিছু দাবি ইতোমধ্যে সরকার মেনে নিয়েছে। আগামী সংলাপে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংবিধান অনুযায়ী যৌক্তিক যেসব দাবি জানাবে তা ভেবে দেখা হবে। সংবিধান অনুযায়ী যদি সংসদ ভেঙে দেয়ার প্রস্তাব তারা করে সেটা নিয়েও আলোচনা হবে। এতে সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না। সংবিধানসিদ্ধ কোনো দাবি থাকলে সেগুলো মেনে নেয়া হবে। খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তো এ বিষয়ে কিছু বলেনি। প্যারোলে মুক্তি যদি ঐক্যফ্রন্ট চায় তাহলে আলোচনার পথ খোলা আছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হতেই পারে।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামী নির্বাচন কিভাবে অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ করা যায়, সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেয়া যায় সে বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপে ঐক্যফ্রন্ট নতুন কোনো দাবি-দাওয়া করলে আলোচনা হবে। তবে সেটি সংবিধান সম্মত হতে হবে। সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো দাবি করলে প্রধানমন্ত্রী সেটা মানবেন বলে আমার মনে হয় না।