লালমনিরহাটের তিনটি আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত লালমনিরহাট-৩ আসন। সব রাজনৈতিক দলের জেলা কমিটির ভিআইপি নেতা-কর্মীরা এ আসনের ভোটার ও প্রাথী হওয়ায় সব দিক থেকে আসনটি গুরুত্ববহন করে।
এ আসনে লড়বেন জাপার কো-চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলু। স্থানীয় জনগণ মনে করছেন এ আসনে এবার লড়াই হবে দুই সাবেক মন্ত্রীর মধ্যে।
বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে সারা দেশের মধ্যে লালমনিরহাটের-১ আসনে ৩৭টি কেন্দ্রে একটি ভোটও পড়তে দেয়নি বিএনপি। যা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতা ও বড় শক্তির পরিচয় দিয়েছে। বিগত বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলে এ আসনে বিএনপির সংসদ সদস্য আসাদুল হাবিব দুলু উপমন্ত্রী হিসেবে গোটা জেলাকে সাংগঠনিকভাবে সুসংগঠিত করেন। মামলায় জর্জরিত হলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় জনগণের এ আস্থা ধরে রেখেছেন তিনি। তাই এ আসনে বিএনপির দুলু একটা বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন ভোটাররা।
নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কেন্দ্রীয় রাজনীতি ও সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকায় স্থানীয় জনগণ বা নেতা-কর্মীকে তেমন একটা সময় দিতে না পারলেও জেলার উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
জি এম কাদেরের অনুপস্থিতিতে সদর আসনের জাতীয় পার্টিতে নেতৃত্ব দেন সেই সময়ের জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মাহবুবুল আলম মিঠু। পরে মিঠুকে দলের সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি দিলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনের গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। মিঠু মাঠে থাকলেও জি এম কাদের মনোনয়ন দৌড়ে অনেক এগিয়ে রয়েছেন। নির্বাচনী মাঠও তিনি সাজানোর চেষ্টা করছেন। স্থানীয় জনগণ মনে করছেন,সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই সাবেক সফল মন্ত্রী জি এম কাদের যদি এ আসন থেকে আসন্ন নিবার্চনে ভোট করেন তাহলে দুই হেভিওয়েট প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
অন্যদিকে শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা। মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠ সাজাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা স্বপন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলালও পিছিয়ে নেই মনোনয়নের দৌড়ে। গত ৫ বছরে এই আসনে যেসব উন্নয়ন করেছেন তা জনগণের সামনে তুলে ধরছেন তিনি ও তার কর্মী বাহিনী। অত্যন্ত সৎ হিসেবে পরিচিত এই সংসদ সদস্য বিগত ৫ বছরে তার কর্মকাণ্ড দিয়ে জনগণের মনে আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। তার সততা ও স্বচ্ছতার কারণে মনোনয়ন দৌড়ে ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল অনেক এগিয়ে রয়েছেন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইতে পারেন সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সফুরা বেগম রুমি।
দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে এবং নেতা-কর্মীরা মামলায় জর্জড়িত হলেও এ আসনে বিএনপির ভোট ব্যাংক ভাঙতে পারেনি কোনো রাজনৈতিক দল। ভোট না বাড়লেও এখন পর্যন্ত তহবিল ধরে রেখেছে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, সারা দেশের মতো লালমনিরহাটের মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ। আগামী নির্বাচনে যদি সুষ্ঠু ভোট হয় তাহলে ধানের শীষে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ভোটাররা এর প্রতিফলন ঘটাবে।
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এ আসনের প্রার্থী জি এম কাদের বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এ আসনের মানুষ লাঙ্গলের পক্ষেই রয়েছে, যেসব উন্নয়ন হয়েছে তা আমরাই করেছি। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার জন্য লালমনিরহাট-৩ আসনের জনগণ লাঙ্গলকেই বেছে নিবেন বলে আমি আশাবাদী। নিশ্চয়ই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটাররা জাতীয় পার্টির পক্ষে রায় দেবেন। লালমনিরহাট-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবু সালেহ মো. সাঈদ দুলাল বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সারা দেশের মতো লালমনিরহাটেও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এ জেলার মানুষ নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।