সিলেট প্রতিনিধি :: আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে রয়েছে ধোয়াশা। সেই সাথে ধোয়াশা সৃষ্টি হয়েছে এই আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী কে হচ্ছেন নিয়েও।
সিলেট-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন-তা এক প্রকার নিশ্চিত ছিল। অনেকটা একক প্রার্থী হিসেবেই অনেকদিন থেকে মাঠে তৎপর ছিলেন সিলেটের সাবেক সাংসদ খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে মুক্তাদির।
তবে এই হিসেবনিকেশ আচমকাই পাল্টে গেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের কারনে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নেতৃত্বাধীন সরকারবিরোধী এই নতুন জোটের প্রধান শরিক বিএনপি। এই জোটে আছেন এককালের আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা সুলতান মুহাম্মদ মনসুরও।
ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর থেকে সুলতান মনসুর সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচিত হচ্ছে। ফলে সিলেটজুড়ে এখন জোর আলোচনা- ঐক্যফ্রন্ট ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে এলে সিলেট-১ আসনে কে হবেন ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী সুলতান মনসুর নাকি খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে মর্যাদাপূর্ণ আসন হিসেবে পরিচিত সিলেট-১। সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী জয়লাভ করে তারাই সরকার গঠন করে- এমন একটি কিংবদন্তিও চালু আছে।
সেই ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে শুরু করে সর্বশেষ নির্বাচনেও এর প্রতিফলন ঘটেছে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করে সিলেট থেকে, এবং সিলেট-১ আসনকেও গুরুত্ব দেয় সর্বাধিক।
এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯ আসনে আরও কোন আসন না পেলেও সিলেট সদর ও কোম্পানিগঞ্জকে গঠিত সিলেট-১ আসনে জয়লাভ করে বিএনপি। খন্দকার আব্দুল মালিক ধানের শীর্ষ প্রতীকে নির্বাচনে জেতেন, সরকারও গঠন করে বিএনপি।
১৯৯৬ সালে প্রয়াত স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয় লাভ করেন; রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। এরপর ২০১১ সালের নির্বাচনে প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বিজয়ী হন মর্যাদাপূর্ণ এই আসনে।
নবম সংসদ নির্বাচনে বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এম সাইফুর রহমানকে পরাজিত করে নির্বাচনে জয়লাভ করেন। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি বর্জন করলে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ নির্বাচিত হন মুহিত।
এবার একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের শরিক ১৪ দল ও বিএনপির জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের হয়ে কারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন এনিয়ে চলছে জোর আলোচনা।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট থেকে একাধিক প্রার্থী সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন পেতে সক্রিয় থাকলেও বিএনপিতে এতোদিন খন্দকার মুক্তাদিরই ছিলেন একক প্রার্থী।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বিএনপি যোগ দেওয়ায় মুক্তাদিরের প্রার্থিতা নিয়েই এখন দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
গত ২৪ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিলেটের সমাবেশের পর জোটের প্রার্থী হিসেবে সুলতান মনসুরের নাম জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। ডাকসুর সাবেক ভিপি আওয়ামীবিরোধী জোটে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। সিলেটের জনসভায়ও তার উপস্থিতি ছিল সরব।
সিলেট-১ আসনে লন্ডনে অবস্থান করা তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের নাম শোনা গেলেও তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত। সিলেটের বিএনপির নেতাকর্মীর মুখে মুখে ‘সিলেটি’ এই মেয়ের নাম শোনা গেলেও দেশের ভোটার তালিকায় নাম না থাকা, এবং দেশের বাইরে থাকার কারণে তার নির্বাচনে অংশগ্রহণও অনিশ্চিত।
মর্যাদাপূর্ণ সিলেটের এই আসনে সবসময়েই হেভিওয়েট প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকেন। এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর ‘গুম’ হয়ে যাওয়া বিএনপি নেতা এম. ইলিয়াস আলীর নাম শোনা গেলেও তিনি বেঁচে আছে কী মারা গেছেন এনিয়ে পরিস্কার কোন মন্তব্য আসছে না কোথা থেকেও।
সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি সুলতান মনসুর। তিনি বলেন, সকল দলের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি। কে কোথায় প্রার্থী হবেন তা এখন আমাদের ভাবনায় নেই। ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি আদায়ের পর এসব নিয়ে ভাবা যাবে।
একই ধরণের মন্তব্য করেছেন সিলেটে ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদও। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই দাবি আদায়ের পর নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে দল ও ঐক্যের নেতৃবৃন্দ প্রার্থী চূড়ান্ত করবেন।
গত ২৪ অক্টোবর সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের পর গ্রেপ্তার হন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।