বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলবে কিনা, সে বিষয়ে আজ আদেশ দেবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে এ মামলাটি রায়ের জন্য আজই ধার্য রয়েছে।
ফলে এ আদেশের ওপরই নির্ভর করছে আজ বিচারিক আদালতে এ মামলার রায় হচ্ছে কিনা। আইনজীবীরা বলছেন, আপিল বিভাগ যদি খালেদা জিয়ার আবেদন খারিজ করে দেয় তাহলে রায় হতে বাধা থাকবে না।
গতকাল হাই কোর্টের খারিজ আদেশের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার করা লিভ টু আপিলের শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ দিন ঠিক করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, মাহবুব উদ্দিন খোকন, কায়সার কামাল ও এ কে এম এহসানুর রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন খুরশীদ আলম খান। সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, খালেদা জিয়ার আবেদনটি সোমবারের কার্যতালিকার দুই নম্বরে রাখা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বেঞ্চে কার্যক্রম সাধারণত সকাল ৯টায় শুরু হয়।
সে ক্ষেত্রে ৯টা ১৫ মিনিটের মধ্যেই আদেশ পাওয়া যেতে পারে। অন্যদিকে ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় বেলা ১১টার দিকে। সে ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের আদেশের ওপরই নির্ভর করছে বিচারিক আদালতের রায় দেওয়ার বিষয়টি। শুনানি শেষে খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সোমবার বিচারিক আদালতের রায় হবে কিনা তা নির্ভর করছে আপিল বিভাগের আদেশের ওপর। যদি আপিল বিভাগ বেগম খালেদা জিয়ার আবেদনটি গ্রহণ করে, তাহলে রায় হবে না। আর খারিজ করলে রায় হবে। ’ অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা আশা করছি লিভ টু আপিল খারিজ হবে। ’ আপিল বিভাগের সিদ্ধান্তের জন্য বিচারিক আদালতের রায় আটকাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সোমবার রায় হবে কি হবে না তা বিচারিক আদালতের এখতিয়ার। ’ এ মামলার বিচারের শেষ পর্যায়ে এসে কার্যক্রম চলছে রাজধানীর নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতরে বসানো জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাসে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে এ কারাগারেই আরেকটি ভবনে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দী ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। কিছু দিন আগে সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিশেষ জজ আদালতের ওই অস্থায়ী এজলাসে হাজির হয়ে নিজের অসুস্থতার কথা জানিয়ে খালেদা জিয়া বিচারককে বলেছিলেন, তিনি বার বার আদালতে আসতে পারবেন না, বিচারক তাকে ‘যত দিন খুশি’ সাজা দিতে পারেন। এরপর শুনানির দুটি তারিখে কারা কর্তৃপক্ষ খালেদাকে আদালত কক্ষে আনতে ব্যর্থ হলে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪০ (এ) ধারা অনুযায়ী তার অনুপস্থিতিতে বিচারকাজ চালানোর আর্জি জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। ১০ অক্টোবর দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয় আদালত। এ সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে আবেদন করেন খালেদার আইনজীবীরা। পরে ১৪ অক্টোবর বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট খালেদার রিভিশন আবেদনটি সরাসরি খারিজ করে দিলে বিচারিক আদালতের সিদ্ধান্তই বহাল থাকে। এরপর ১৮ অক্টোবর হাই কোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে আসামি পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য মামলাটিতে ৪৬ কার্যদিবস ব্যয় হলেও সেই যুক্তিগ্রহণ ছাড়াই বিচার শেষ করেছেন বিচারক। ১৬ অক্টোবর মামলার বিচারকাজ শেষ করে রায় ঘোষণার জন্য ২৯ অক্টোবর দিন ঠিক করেন বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলার চার আসামির মধ্যে খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী পলাতক। হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান আছেন কারাগারে।