সাভার: প্রায় সাত বছর আগে র্যাবের গুলিতে পা হারান তিনি। এরপর অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হয়েছে তাঁকে। প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে জীবনের লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন লড়াকু মানসিকতার লোকটিরই এবার হাত ভেঙে দেওয়া হলো।
হাত ভেঙে দেওয়ার ঘটনাস্থল ঢাকার আশুলিয়ার মির্জানগরের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। আর যাঁর কথা বলা হচ্ছে তিনি হলেন ঝালকাঠির রাজাপুরের লিমন হোসেন। রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের লিমন ২০১১ সালে মাঠ থেকে গরু আনতে গিয়ে র্যাবের গুলিতে পা হারান। ‘সন্ত্রাসী’ সন্দেহে আটক করার পর তাঁর পায়ে গুলি করা হয়েছিল। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে র্যাব। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশে ২০১৩ সালে তাঁকে দুটি মামলা থেকেই অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই লিমন বর্তমানে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গণবিশ্ববিদ্যালয়ের এলএলএমের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্র।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল সকাল আটটার দিকে দুই শতাধিক লোক একযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র পিএইচএ ভবনে সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে তারা পাশের তিনটি ছাত্রী হোস্টেলের ভেতরে ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে কয়েকজন সহপাঠী নিয়ে লিমন হোসেন ঘটনাস্থলে যান। এ সময় হামলাকারীরা ছাত্রীদের উদ্দেশে নানা অশালীন কথাবার্তা বলছিল। লিমন এর প্রতিবাদ করেন এবং মুঠোফোনে সেই দৃশ্য ধারণ করার চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হামলাকারীরা তাঁদের ওপর চড়াও হয়। হামলাকারীদের লাঠিসোঁটার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন লিমন। এরপর হামলাকারীরা লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাঁর ডান হাত ভেঙে দেয়। ঘটনার পর সহপাঠীরা তাঁকে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লিমন হোসেন গত রাতে বলেন, ‘আমি নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করতে চাই। সেই ভাবনা থেকে নারী হোস্টেলে হামলার প্রতিবাদ করতে গিয়েছিলাম। এ জন্যই ওরা আমার হাত ভেঙে দিয়েছে।’
জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে গত বুধবার আশুলিয়ার মির্জানগরের দ্য কটন টেক্সটাইল মিলের মালিক কাজী মহিবুর রব গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী এবং পরিচালক সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মাছ ও গাছের ফল চুরিসহ চাঁদা দাবি, মারধর এবং জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। এরপর গতকাল হামলা চালানো হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি রিজাউল হক বলেন, ‘লিমনের ওপর হামলার ঘটনা আমার জানা নেই।’