গাজীপুর: অর্থ আত্মসাতের চার মামলায় গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে আড়াই বছর আগে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু পরোয়ানা মাথায় নিয়ে তিনি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ও নিয়মিত অফিসও করছেন। সবশেষ এসপির সামনে একটি সভায়ও তিনি বক্তব্য রেখেছেন।
তিনি বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহারের সামনে শ্রীপুর থানার ওপেন হাউজ ডেতে উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্যও দিয়েছেন। ওই সভায় শ্রীপুর মডেলে থানার ওসি সহ দায়িত্বশীল একাধিক পুলিশ অফিসার উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে শ্রীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জাবেদুল ইসলাম গ্রামবাংলানিউজকে বলেন, পরোয়ানা আছে কি না জানিনা। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও মেয়রকে গ্রেপ্তার করতে বলেননি।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গাজীপুর জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হক মন্ডল বাচ্চু শ্রীপুর পৌরসভার বাসিন্দা। তিনি বলেন, শ্রীপুরের মেয়র বরখাস্ত হয়েছেন এমন খবর তিনি কেন কেউ কোন দিন শোনেনি। তিনি পাল্টা বলেন, বরখাস্ত হবে কেন তিনি তো আওয়ামী লীগের নেতা।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯ এর ৩১ (১) বিধান “যেক্ষেত্রে কোন পৌরসভার মেয়র অথবা কোন কাউন্সিলর অপসারণের কার্যক্রম আরম্ভ করা হইয়াছে অথবা তাহার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলায় অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হইয়াছে, সেই ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের
বিবেচনায় মেয়র অথবা কাউন্সিলর কর্তৃক ক্ষমতা প্রয়োগ পৌরসভার স্বার্থের পরিপন্থী অথবা প্রশাসনিক দৃষ্টিকোণে সমীচীন না হইলে, সরকার লিখিত আদেশের মাধ্যমে মেয়র অথবা কাউন্সিলরকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করিতে পারিবে।“ অথচ মেয়র আনিছের ক্ষেত্রে ওই আইন কার্যকর হয়নি।
শ্রীপুর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপত্র আনোয়ার হোসেন মিডিয়াকে বলেন, মামলায় অভিযোগ পত্র দাখিল হলে যদি মেয়র আনিছ বরখাস্ত হতে এই খবর শ্রীপুরের মানুষের অজানা থাকার কথা নয়। এমনকি তিনি বরখাস্ত হলে নিশ্চয়ই আইন আদালতের আশ্রয় নিতেন। ওই খবরও কেউ জানে না। তাহলে আনিছের খুঁটির জোর কেবল ক্ষমতার জোর?
জানা গেছে, ‘রোববার (৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ মিজানুর রহমান খানের আদালতে আনিছুর রহমান চার মামলায় ও আব্দুল মান্নান দুই মামলায় আইনজীবীর মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আনিছুর রহমানকে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় এক মামলায় জামিন দেন। অপর তিন মামলায় জামিন নামঞ্জুর করেন। ফলে তাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। আব্দুল মান্নানের দুই মামলায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।‘ সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন অনলাইন ভার্সন, ১১ সেপ্টেম্বর, রাত নয়টা ৩৫ মিনিট।
চার মামলার মধ্যে এক মামলায় অভিযোগ, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০১০ সালে শ্রীপুর পৌরসভার অন্তর্গত পাঁচটি হাট-বাজার থেকে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা আত্মসাৎ করেন। ওই ঘটনায় ২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ইকবাল হোসেন।
আরেক মামলায় অভিযোগ, পৌরসভার রশিদের মাধ্যমে আদায়কৃত ট্যাক্স ও বিবরণীর ৪৩ লাখ ৭৬ হাজার ১০৭ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে আত্মসাৎ করেন তারা। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ২১ জানুয়ারি দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম মামলা দায়ের করেন। ২০১৬ সালের ১২জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশিট দাখিল করেন। অপর দুই মামলায়ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
যুবলীগনেতা নুরে আলম আনিছ সেজে আনিছের পক্ষে আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। একটি মামলায় আনিছ সাজা নুরে আলম জামিন পেলেও আরেক মামলায় জেল হাজতে যান। ওই ঘটনায় মেয়র আনিছ কারাগারে এমন খবর জানাজানি হলে জানা যায়, আনিছ বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ায় আছেন। পরে নুরে আলমের নামে প্রতারণার মামলা দায়ের হয়। ওই মামলায় নুরে আলম দীর্ঘদিন হাজত বাসের পর জামিন লাভ করেছেন।
আরেকটি মামলার আসামি আনিছ হিসাবে নুরে আলমকে আদালতে হাজির করা হলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে সূত্রে আদালত নিশ্চিত হন, নুরে আলম আনিছ নন। নুরে আলমও স্বীকার করেন তিনি আনিছ নন।
মেয়রের নির্দেশে তিনি (নুরে আলম) আদালতে হাজিরা দিয়েছেন বলেও স্বীকার করেন। উভয়ের যোগসাজসে প্রতারণার কারণে তাদের নামে মামলা হচ্ছে।
এদিকে আনিছের নামে দায়ের হওয়া চারটি দুর্নীতির মামলার একটিতে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে চার্জশিট দাখিল হলেও তিনি এখনও পলাতক রয়েছেন। অথচ ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ২৮ ডিসেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। তবু তিনি গ্রেফতার হননি।