সুনামগঞ্জ-১ এর নির্বাচনী হালচাল ও প্রার্থীদের জনসংযোগ”

Slider সারাদেশ


আল-আমিন আহমেদ সালমান, সুনামগঞ্জ: বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এককক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা। এ আইনসভার সদস্য সংখ্যা ৩৫০, যার মধ্যে ৩০০ জন সংসদ সদস্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন এবং অবশিষ্ট ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। জাতীয় সংসদের ২২৪নং আসন সুনামগঞ্জ-১।

এই নির্বাচনী এলাকাটি সুনামগঞ্জ জেলায় অবস্থিত ধর্মপাশা-তাহিরপুর-জামালগঞ্জ উপজেলার চারটি হাওড় থানা ধর্মপাশা-মধ্যনগর, তাহিরপুর ও জামালগঞ্জ নিয়ে গঠিত। এটি দেশের বৃহত্তর নিবার্চনী এলাকার একটি। ভোটার সংখ্যা প্রায় পৌনে চার লাখ। এর মধ্যে প্রায় সত্তর হাজার সংখ্যালঘু ভোট রয়েছে, যেটি নৌকার রিজার্ভ ভোটব্যাংক বলে পরিচিত। প্রাকৃতিকভাবে অত্যন্ত নান্দনিক এবং এর অফুরন্ত সম্পদ থাকার পরও এটি অত্যন্ত পশ্চাদপদ নিবার্চনী এলাকা হিসেবে পরিচিত।

২০১৯ সালের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে এঅঞ্চলের জনমানুষের মুখে এখন এআসনের সম্ভাব্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। যদিও মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা অনেক, তবে টানা তিন বছর ধরে সক্রিয়ভাবে মাঠে আছেন আওয়ামীলীগ-বিএনপি উভয় দলের এমন প্রার্থী আছেন ছয়জন করে।

এদের মধ্যে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন ২০০৮ ও ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত নির্বাচিত মাননীয় সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মনোনীত ও ১৯৯৬ আওয়ামীলীগ থেকে মনোনীত নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য প্রবীণ নেতা সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জামালগঞ্জের সাচনাবাজার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল করিম শামীম, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার, কৃষক লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার এবং সুনামগঞ্জ জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের আহবায়ক গবেষক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলাম লেখক ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার।

অন্যদিকে বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কেন্দ্রীয় নিবার্হী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা: রফিকুল ইসলাম চৌধুরী, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুজ্জামান কামরুল, তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. আনিসুল হক, ধমর্পাশা উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবদুল মোতালিব খান ও ব্যারিস্টার হামিদুল হক আফিন্দি লিটন।

এছাড়াও আওয়ামীলীগের আরও পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী রয়েছেন। আওয়ামীলীগের এই পাঁচজন হলেন জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, ধর্মপাশা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল হাসান চৌধুরী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম, সাবেক যুগ্ম সচিব বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু ও জামালগঞ্জ উপজেলার সাবেক ছাত্রনেতা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী শক্তি পদ রায়।

মজার ব্যাপার হল আওয়ামীলীগের সাতজন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের একটি বলয় (সৈয়দ রফিকুল হক সোহেল, রেজাউল করিম শামীম, অ্যাডভোকেট শামীমা শাহরিয়ার, অ্যাডভোকেট হায়দার চৌধুরী লিটন, রফিকুল হাসান চৌধুরী, বিনয় ভূষণ তালুকদার ভানু ও বাবু শক্তি পদ রায়) একজোট হয়ে দলীয় এমপির বিরুদ্ধে জনসমক্ষে উনার দুর্নীতি-লুটপাট, জামাত-বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা দান ও ক্ষমতার অপব্যাবহারের চিত্র তুলে ধরছেন। এখানে দলকে রক্ষা করতে ও নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে তারা মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের পরিবর্তন দাবি করছেন এবং এই আসনে আওয়ামীলীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে কোন সৎ নিষ্ঠাবান ক্লিন ইমেজের ব্যাক্তির হাতে মনোনয়ন তোলে দেয়ার দাবি করছেন। এর বাইরেও দু’জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী (অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার ও অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান সেলিম) একই সুরে প্রকাশ্যে মাননীয় এমপির চরম বিরোধিতা করছেন ও পরিবর্তন দাবি করছেন।

এখানে একমাত্র ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার দলীয় সাংসদের বা দলীয় কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশীর বিরোধী নন এবং ইতিবাচক প্রচারণামুখী। তিনি বলেন, “আমার সকল কর্মসূচি জননেত্রীর নির্দেশনা যথাযথভাবে অনুসরণ করে করা হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার ত্যাগ তিতিক্ষা, অর্জন ও সরকারের সাফল্যগাঁথা যথাযথভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরেছি। নতুন প্রজন্মের সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব সজীব ওয়াজেদ জয় ও রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববির শিক্ষাযোগ্যতা ও ট্রান্সফর্মেশনাল লিডারশিপ এবিলিটি সম্পর্কে জনগণকে ধারণা দিয়েছি। আমি কেবলই একজন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এটি গৃহীত হওয়ার জন্য কারও বিরোধিতার প্রয়োজন নেই, কেবল নেত্রীর সিদ্ধান্তই যথেষ্ট।”

আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-১ আসনে দলের নির্বাচনী পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ক্লিন ইমেজের জনপ্রিয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “দলীয় সাংসদের বিরুদ্ধে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জনসম্মুখে এভাবে অবস্থান নেয়াটা জননেত্রীর নির্দেশনার বাইরে। এটি দলের জন্য আত্মঘাতী এবং ভোটে বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অফুরন্ত সহায়তার পরও মাননীয় সাংসদ দলকে সংঘটিত করতে পারলেননা, জনমনে চরম বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরী করলেন। এটি উনার জন্য ও দলের জন্য অত্যন্ত দুখ:জনক এবং এর মাধ্যমে তিনি এই আসনে নৌকার নির্বাচনকে কঠিন করে তোললেন, যদিও এটি মূলত নৌকার আসন। ইতিমধ্যে আমরা তিনটি উপজেলা নির্বাচনেই হারলাম। সাধারণ মানুষ যেটা অনুভব করে এবং বলাবলি করছে, এটা ঠিক যে এখন সত্যিকারের ক্লিন ইমেজের অধিবাসী প্রার্থী ছাড়া এআসনটি ধরে রাখা কঠিন হবে।”

আপনি জনগণের কাছে কতটুকু পৌঁছতে পেরেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে ড. রফিকুল তালুকদার বলেন, “আমি ধর্মপাশা, মধ্যনগর, জামালগঞ্জ ও তাহিরপুরের বিভিন্ন জায়গায়, সুনামগঞ্জ-১ আসনের আনাচে-কানাচে, হাট-বাজার, ইউনিয়ন, গ্রামে-গঞ্জে সব জায়গায় গিয়েছি। মানুষের ভালবাসা, আন্তরিকতা ও অতিথ্যেয়তা আমাকে অবিভুত করেছে। মানুষের মনের কথা, বেদনার কথা শুনেছি। সবচেয়ে সম্পদশালী ও অত্যন্ত নান্দনিক একটি হাওড় জনপদের মানুষের যাপিত জীবন ও জীবিকায় সুযোগের অপ্রতুলতা ও বঞ্ছিত হওয়ার কথা, বন্যা ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বঞ্ছনার কথা, এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত পশ্চাদপদতার কথা শুনেছি। মানুষ এখন উচ্চশিক্ষিত, প্রতিশ্রুতিশীল তরুন নেতৃত্ব চায়।”
জনগণের কাছে আপনার প্রতিশ্রুতি কি? এই প্রশ্নের জবাবে ড. রফিকুল তালুকদার বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ ও ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে এই হাওড় অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য অফুরন্ত সহায়তা করেছেন। একই সাথে বিপুল সম্পদ-সহায়তা প্রদান করেছেন। তাই এই সময়ের মধ্যে উন্নয়ন এখানে উল্লেখযোগ্য। আমি বিশ্বাস করি যে এখনও কৌশলগতভাবে এখানে অনেক কিছু করার আছে এবং সেগুলো জরুরি। যেমন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ভঙ্গুরতা, বঞ্চনা ও সামাজিক অবিচার থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি, আন্তঃউপজেলা ও উপজেলা-জেলার মৌলিক রাস্তাঘাট এবং রেলওয়ে নেটওয়ার্ক স্থাপনসহ ভালো পরিবহন ব্যবস্থার সংযোজন, মানসম্মত শিক্ষা-চিকিৎসা ও সম্পূর্ণ দুর্নীতিমুক্ত কৃষি-সেচ-বাঁধসহ অন্যান্য পরিষেবা নিশ্চিত করা, এবং মধ্যনগর থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা। এখানে এই কাজগুলো করার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে। এজন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।”

আপনার দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু? জানতে চাইলে ড. রফিকুল ইসলাম তালুকদার বলেন, “জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন দূরদর্শী নেতা, বিশ্ব শীর্ষ দশ নেতৃত্বের অন্যতম। তিনি মেধাবী ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ নেতৃত্ব পছন্দ করেন এবং নেতৃত্বের বিকাশ করতে জানেন ও ভালবাসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দল যদি আমাকে মনোনয়ন দান করেন,আমি মানুষের কথা, ভালবাসা ও প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা রেখে বলছি সুনামগঞ্জ-১ আসনে নৌকার বিজয় ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে সুনিশ্চিত ইনশা আল্লাহ্‌। আর বিজয়ী হলে আমি আমার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাংগঠনিক কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিষ্ঠার সাথে দল, এলাকা ও দেশের জন্য কাজ করব এবং তাৎপর্যপূর্ণ আবদান রাখতে পারব বলে বিশ্বাস করি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *