হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ লালমনিরহাটে শীত শুরু হবার আগেই খেঁজুরের গাছ পরিষ্কার ও মিষ্টি রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন গাছিরা।
শীতের তীব্রতা শুরু না হলেও পুরোদমে আয়োজন শুরু হয়েছে গেছে। জেলা খেজুর রস ও গুড়ের জন্য এক সময় বিখ্যাত ছিল। সময় পরিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে আজ সেই দিন।
কয়েক বছর আগেও উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে কিংবা রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য খেঁজুর গাছ ছিল। কোন পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠে এইসব খেঁজুর গাছগুলো।
প্রতিটি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত রস দিয়ে তৈরি করা হতো সুস্বাদু গুড়। অত্যন্ত সুস্বাদু হওয়ায় এলাকার চাহিদা পূরণ করে বাড়তি গুড় সরবরাহ করা হতো দেশের বিভিন্ন স্থানে। বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা ক্ষেত-খামারের পাশে এমনকি রাস্তা ঘাটের পাশে আর আগের মতো খেঁজুর গাছের দেখা মিলেনা।
এক সময় শীত মৌসুমে খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন অনেকে। স্থানীয় ভাষায় এ মৌসুমী পেশাজীবীকে বলা হয় শিয়ালী।
শেয়ালের সাথে খেঁজুরের রসের নানা লোককথা বা গল্প থেকে গাছিদের স্থানীয় ভাষায় নামকরণ হয় শিয়ালী।
আজ খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বেশির ভাগ গাছিরা তাদের পুরুষানুক্রমের পেশা ছেড়েছেন। তবে হাতে গোনা ক’জন এখনও ধরে রেখেছেন পেশা।
কালীগঞ্জ উপজেকার জিবেরহাট(দলগ্রাম)গ্রামের গাছি হারুন অর রশিদ জানান, বাঙ্গালিরা মৌসুম ভিত্তিক কিছু খাবারের প্রতি আকৃষ্ট।
খেঁজুর গাছের রসের প্রতি আমাদের দুর্বলতা এখনো আছে। আমার বাবার পেশা ছিল এই খেঁজুর গাছের রস সংগ্রহ করা।
বাবার মারা যাওয়ার পর তিনি পেশাটি ধরে রেখেছিলাম। কিন্তু দিন দিন খেঁজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ায় পেশাটি বর্তমানে ছেড়ে অন্য পেশায় যোগ দেয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় দেখছিনা। দক্ষিণ দলগ্রাম গ্রামের গাছি কামাল হোসেন জানান, আমরা খেঁজুর গাছের কথা ভুলে গেছি।
আমাদের উচিৎ অন্যান্য বৃক্ষ রোপনের পাশাপাশি খেঁজুর গাছ রোপন করা। নতুবা আগামী প্রজন্মের কাছে খেঁজুর গাছ অচেনা গাছে পরিনত হবে।
সচেতন মহল মনে করেন গ্রামের মানুষকে বেশি বেশি করে খেঁজুর গাছ রোপন করার বিষয়ে উৎসাহিত ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারি কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসা উচিৎ।
তাছাড়া প্রতি বছর আমরা যে পরিমাণে খেঁজুর গাছ কেটে ফেলছি এবং ছোট ছোট ইঁভাটায় পুড়িয়ে দিচ্ছে, তাতে আর কয়েক বছর পর এই খেঁজুর গাছের রস পাওয়া যাবে না।
মহিষা শহর ও পাঁচমাথা গ্রামের কয়েকজন গাছিরা জানান, শীত শুরু হওয়া সাথে সাথে
প্রথমে গাছ পরিস্কার করে প্রস্তুত করি। এর পর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করা হয়। এখন তারা গাছ পরিষ্কার ও কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে বসতবাড়ি কিংবা ক্ষেত-খামারের পাশে এমনকি রাস্তা ঘাটের পাশে আর আগের মতো খেঁজুর গাছ দেখা মিলেনা।
আমাদের অসচেতনার কারণে আজ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব গুরুত্বপূর্ণ এই খেঁজুর গাছ। খেঁজুর গাছের এই সংকট নিরসনে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং বেশি বেশি করে সাধ্য মতো খেঁজুর গাছ রোপন করতে হবে।
কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে এ ব্যপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলেও জানান তিনি। খেঁজুর গাছের এ সংকট স্বত্তেও লালমনিরহাট জেলার এখনও যেসব গাছ অবশিষ্ঠ আছে তা কেঁটে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় চলছে গাছিদের।
সকালের মিষ্টি রোদে রসের আয়োজন আর কেনা বেঁচা শুরু হয়েগেছে এখনই। তবে আরও কিছুদিন পর শীতের এ রস উৎসব শুরু হবে পুরোদমে।