হাসানুজ্জামান হাসান, লালমনিরহাট: কাকিনা শিশু নিকেতনের ছাত্র রবিউল ও আকাশ বাবু সাঁকো পার হতে ভয় করে স্কুলে যেতে চায় না, তাদের মা বলতেছে ছেলেরা স্কুলে যেতে চায় না,এই ভাঙ্গা সাকো পার হয়ে_ পথে বাঁধা একটি বাঁশের সাঁকো ! এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হতে হিমশিম খাচ্ছে তারা । উভয়ে একে অপরকে পারাপার হতে সাহায্য করছে। এর মধ্যে দুইবার পা পিছলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তারা। ভয়ে কাঁপছিল। বেশ কষ্ট করেই হাঁপাতে হাঁপাতে পারাপার হয়। এ সময়৷ রবিউল ও আকাশের সঙ্গে কথা হয়।
তারা জানায়, প্রতিদিনই এভাবে ঝুঁকি নিয়ে ওঠা-নামা করতে হয়। কারণ কলেজ আসা যাওয়ার একমাত্র সড়ক এটি। বিকল্প রাস্তা দিয়ে যেতে অনেক কষ্ট এবং সময় নষ্ট করতে হয়।
রবিউল ও আকাশের সঙ্গে কথা বলার সময় চোঁখে পড়ে এক বৃদ্ধকে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়লেও ওই ব্রীজ’র উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয় প্রতিনিয়ত।
এ সময় কথা হয় ওই বৃদ্ধ মুসা মিয়া’র সঙ্গে। তিনি জানান, দিনে কয়েকবার বাঁশের সাঁকো দিয়ে অন্যের হাত ধরে পারাপার হতে হয়। তিন বছর ধরে কষ্ট করে আসছি। এত কষ্ট আর ভাল্লাগে না, এবার কায় ভোট নেওয়ার জন্য আইসে মুই দেখিম। কথা হয় ব্যবসায়ী সানোয়ার মিয়া সঙ্গে তিনি জানান, যাতায়াতের জন্য বাঁশই তাদের ভরসা। কৃষি পণ্য নিয়ে প্রতিদিন বহু মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসা -যাওয়া করছে অথচ যেন দেখার কেউ নেই। স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদেরকেও ঝুঁকি নিয়ে ওঠা নামা করতে হয়।
এমনকি অনেক সময় মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে দ্রুত মেডিকেলে যেতে হয় কিন্তু বাঁধা একটাই বাঁশের সাঁকো। এই দুর্ভোগের কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানেন। তারা শুধু তিন বছর ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান। কিন্তু কাজ আর হয় না।
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মহিষামুড়ী এলাকার(উত্তর বাংলা কলেজ সংলগ্ন) উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার শাখা নদীর উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে দীর্ঘদিন থেকে পারাপার হচ্ছেন দুই ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রামের মানুষজন। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে আর চলতে চাননা। এলাকাবাসির একটাই চাওয়া দ্রুত এখানে একটা ব্রীজ নির্মাণ।
স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উদ্দ্যোগে এবং স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে আজ থেকে প্রায় ৩ বছর ধরে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াত করছেন এলাকাবাসি । বর্তমানে সেই সাঁকোটিও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
গত তিন বছর পূর্বে কোন এক কাল বৈশাখী’র ঝড়ে সাঁকোটির একটি অংশ লন্ড-ভন্ড হয়ে গেলে স্থানীয় লোকজনের চলাচলে ভিষণ কষ্ট দেখা দেয়। তবুও জীবনের তাগিদে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে পথচারীগণ।
স্থানীয় কামাল হোসেন জানান, দীর্ঘ প্রায় ৩ বছর ধরে ওই ছড়ার উপর বাঁশের সাঁকো দিয়ে পারাপার হচ্ছেন সাধারণ জনগণ। কিন্তু আজ পর্যন্ত ওই ছড়ার উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়নি।
সরকারি-বেসরকারিভাবে ব্রিজ নির্মাণের কোন উদ্দ্যোগ গ্রহণ না করায় আমরা এলাকাবাসী মিলে বাঁশ, কাঠ সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে সাঁকোটি নির্মাণ করে তার উপর দিয়ে যাতায়াত করে আসছি। তিনি আরও বলেন-যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় চরাঞ্চলের ১০টি গ্রামের স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে এবং সাইকেল নিয়ে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাফেরা করে আসছে।
কাকিনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক বলেন, ‘স্থানীয় মানুষের চলাচলের স্বার্থে সাঁকোটির স্থলে একটি পাকা সেতু নির্মাণের জন্য আমরা দাবি জানিয়ে আসছি। কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হকের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হয়।
তিনি জানান, এলাকা বাসির দুর্ভোগের বিষয়ে আমরা অবগত আছি। আশা করছি চলতি বছরেই ব্রীজটি নির্মাণ না হলেও আগামী বছরের শুরুতেই হয়ে যাবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মাহবুজ্জামান আহমেদ বলেন, কাকিনা ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার শাখা নদী উপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ পার হচ্ছে। এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে জনস্বার্থে সাঁকোটির স্থানে অতি দ্রুত একটি সেতু নির্মাণ করা হবে।