ঘূর্ণিঝড় তিতলির প্রভাবে কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপের বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত দুইদিনে অর্ধশতাধিক বসত ঘর ও দোকান বিলীন হয়ে যায়।
তবে আরও কয়েক শতাধিক পরিবার হুমকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের আঘাতে টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়া, মাঝের পাড়া ও জালিয়া পাড়া এলাকার ঘের সংলগ্ন অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া ইউনিয়নের ঘোলাপাড়া, পশ্চিমপাড়া, দক্ষিণপাড়া, মাঝরপাড়া ও জালিয়াপাড়া এলাকার একাংশে ভাঙনের তীব্রতা দিন দিন বেড়ে চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়া ও মাঝের পাড়া জালিয়া পাড়া এলাকার মৎস্য ঘের সংলগ্ন এলাকার একটি মসজিদসহ অর্ধশতাধিক বসত-ঘর বিলিন হয়ে গেছে। জোয়ারের আঘাতে ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাওয়ায় অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। এলাকার শতাধিক ঘর, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় মধ্যে রয়েছে।
সংবাদ পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রণয় চাকমা।
শাহপরীর দ্বীপ মাঝরপাড়ার আব্দুল শুক্কুর বলেন, এ জোয়ারের আঘাতে তার বসতবাড়ি সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। এ সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কোথায় আশ্রয় নেবেন, তা বুঝে উঠতে পারছি না।
অন্যত্র জমি ক্রয় করার মত সম্ভলও নেই। এখন কি উপায় হবে বলতে পারছি না। তিনি জোয়ারের ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
দক্ষিণ পাড়া এলাকার মো. ইদ্রিস বলেন, সাগরের জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বুধবার থেকে এলাকায় আঘাত হেনেছে। এ জোয়ারের প্রভাবে মাঝের পাড়া এলাকার একটি বড় মসজিদ, মো. ইউনুছ, আব্দুস শুক্কুর, ইমান শরীফ মুক্তার আহাম্মদসহ অর্ধ শতাধিক বসত ঘর, দোকান বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া দক্ষিণ পাড়া এলাকার বেচা আলীর পরিবারের ৩টি, আব্দুর রশিদের পরিবারের ৬টি, আব্দুল মোনাফের ৪টি, জাফর আহাম্মদের পরিবারের ৫টি, নজির আহাম্মদের পরিবারের ৩টি, দুদু মিয়ার পরিবারের ২টি, আব্দুর রহমানের পরিবারের ৩টি, ছিদ্দিক আহাম্মদের পরিবারের ২টি, আলী আহাম্মদের পরিবারের ২টি, মুক্তার আহাম্মদ, লায়লা খাতুন, মাঝের পাড়া এলাকার আব্দুল গনি মিস্ত্রির ৪টি, তাজর মুল্লুকের পরিবারের ৪টিসহ শতাধিক বসত ঘর সাগরে বিলিন হয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, বিলিন আতঙ্কে দক্ষিণপাড়া এলাকার নজির আহাম্মদের ৩টি, এনায়েত উল্লাহ, ছলিম উল্লাহ, মো. শরীফ, রফিক আলম, শামসুল হক, আব্দুল মজিদ, নূর মোহাম্মদ, ফাতেমা খাতুন, হাবিবুর রহমান আব্দুল মালেক আব্দুল হাকিম, মাঝের পাড়া এলাকার আব্দুল হক, ইমান শরীফ, মো. শফিকসহ শতাধিক বসত বাড়ি রয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, সাগরে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত দুইদিনে প্রায় অর্ধশতাধিক বাড়ি ঘর সাগরে বিলীন হয়েছে। এলাকার মানুষ ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। তবে দ্বীপের ভাঙন আতঙ্ক কাটছে না। এমনকি আমার পৈত্রিক বসত বাড়িও সাগরে বিলিন হয়ে যায়। শাহপরীর দ্বীপের ভাঙনে পড়া পরিবারগুলো বর্তমানে টেকনাফ, উখিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করছেন।
সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, শাহপরীর দ্বীপের দক্ষিণ অংশে সাগরের জোয়ারে আঘাতে বেশ কিছু বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। তবে সাগর তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান বলেন, শাহপরীর দ্বীপ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্বাবধানে ১০৬ কোটি টাকার বেড়িবাধ সংস্কারের কাজ চলছে। তবে এরই মধ্যে জোয়ারের প্রভাবে এলাকার কিছু বসতঘর সাগরে বিলিন হয়েছে বলে শুনেছি। বর্ষার পরে বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ পুরোদমে চলবে। বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ সম্পন্ন হলে শাহপরীর দ্বীপ রক্ষা পাবে বলে জানান তিনি।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রবিউল হাসান বলেন, শাহপরীর দ্বীপের ভাঙন ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে ২০ কেজি করে চাল ও নানা সামগ্রী বিরতণ করা হবে। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তালিকা তৈরির কাজ চলছে। ওই এলাকার আরও কয়েকশতাধিক পরিবার হুমকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন।