দেশের পাইপলাইনে সরবরাহকৃত ৮০ শতাংশ পানিতেই ডায়রিয়ার জীবাণুর (ই-কলাই) উপস্থিতি রয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন উপায়ে সরবরাহ করা খাবার পানির ৪১ শতাংশই ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া বহন করছে।
আর ১৩ শতাংশ পানির উৎসে আর্সেনিকের উপস্থিতি মিলেছে। এ কারণে ডায়েরিয়া, জন্ডিস ও কলেরাসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানী সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশে পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ও দারিদ্র্য সংক্রান্ত’ বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানায়, দেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পেলেও তার বেশিরভাগ অনিরাপদ। পাইপলাইনে সরবরাহকৃত পানির ৮০ শতাংশে এবং নলকূপ ও গভীর নলকূপ থেকে উত্তোলিত পানির ৪১ শতাংশে ডায়রিয়ার জীবাণুুর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। জীবাণুর উপস্থিতির এ হার পল্লী অঞ্চলের পুকুরে ব্যাকটেরিয়া উপস্থিতির হারের প্রায় সমান।
এছাড়াও বাংলাদেশের পানিতে আর্সেনিক ঝুঁকি বাড়ছে বলেও জানায় বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পানিতে ই-কোলাই ব্যাক্টেরিয়া থাকায় এবং স্যানিটেশন সমস্যার কারণে এক-পঞ্চমাংশ দরিদ্র মানুষ পেটের পীড়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। দরিদ্র, উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, শহর ও গ্রামের সবাই পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
তবে শহরের বস্তিতে বাস করা লোকজন আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যায় বেশি।
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে এখন ৯৮ শতাংশ মানুষের কাছে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধান সমস্যা হলো সবার কাছে নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, সেটি সম্ভব হচ্ছে না বলেও জানানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, দেশের পাঁচ কোটি মানুষ টয়লেট শেয়ার করেন। অর্থাৎ একাধিক পরিবারের লোকজন একটি টয়লেট ব্যবহার করেন। এ সংখ্যা গ্রামে যেমন রয়েছে, তেমনি শহরেও রয়েছে। তবে শহরের বস্তি এলাকায় টয়লেট শেয়ারের সংখ্যা গ্রাম এলাকার লোকজনের তুলনায় তিনগুণ বেশি। ফলে এসব লোকজন নানা প্রকার রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন।
নাগরিকদের নিরাপদ ও কার্যকর পানি-স্যানিটেশন সেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে অর্থায়নের বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, শহর এলাকায় পানি সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা আরও উন্নত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
তিনি আরও জানান, পানি ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকার বদ্বীপ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। আগামী ১০০ বছরে পানি ব্যবস্থাপনায় করণীয় এ পরিকল্পনায় রয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহে আরও উন্নতি হবে বলে তিনি আশা করেন।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রিডিরেক্টর সিরিন জোমা ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকসানা কাদের।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্য প্যানেল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. আবুল হাশেম। এসময় সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্স সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী পরিচালক ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, গণস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী একেএ ইবরাহিম, ইউনিসেফের ওয়াশ বিশেষজ্ঞ মনির আলম, ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. খাইরুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।