সাড়া ফেলেছে চলনবিলের ‘মজার স্কুল’

Slider গ্রাম বাংলা

‘আমাদের মজার স্কুল’ একটি স্বেচ্ছাসেবী স্কুল। নাটোরের চলনবিলের সিংড়া পৌর শহরের প্রাণকেন্দ্র পৌর এলাকার স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে খোলা আকাশের নিচে চলে আমাদের মজার স্কুল এর পাঠদান।

২০১৭ এর ৬ জানুয়ারি মাসে গতানুগতিক ধারাবাঁধা শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে আনন্দ বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে স্কুলটি। মাত্র ৩০ জন শিশু নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ স্কুলটি বর্তমানে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা ৩০০জন । শিশুদের নীতি নৈতিকতা, আচার আচরণ, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম সম্পর্কে শিক্ষা দেয়ার জন্য তরুণদের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে স্কুলটি।
ধনী গরিব সকল শিশু এক সারিতে বসে এখানে সব কিছু শেখে। স্কুলের নির্দিষ্ট কোন জায়গা নেই। স্থানীয় স্মৃতিসৌধে চলে পাঠদান। জায়গার সংকুলান হয় না তারপরও যেন সপ্তাহের দু’টি দিন শিশুদের কাছে আনন্দের মত কাটে আমাদের মজার স্কুলে। এখানে শিশুদের বাধাধরা সিলেবাসে বা চাপ দিয়ে শিক্ষা গুছিয়ে দেয়া হয় না । কোমলমতি শিশুদের এখানে শেখানো হয় মজা করে।

আনন্দ বিনোদনের মধ্য দিয়ে। এখানে বর্ণমালা, অভিনয়ের মাধ্যমে ছড়া বলা, নৈতিক গল্পের মাধ্যমে নৈতিকতা, বাবা, মা গুরু জনের প্রতি শ্রদ্ধা, দেশপ্রেমসহ ভাল ভালো অভ্যাস শেখানো হয়। ক্লাস চলে সপ্তাহে দু’দিন। মঙ্গলবার ও শুক্রবার বিকেলে। প্রতিটি বাচ্চা স্কুলে নিদিষ্ট পোশাক পরিধান করে আসে। কোন বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন ক্লাসের শেষে শিশুদের দেওয়া হয় কেক, বিস্কুট অথবা চকলেট।
মজার স্কুলে পাঠদানের ফাঁকে শিশুদের আনন্দের জন্য খেলাধুলার বিভিন্ন উপকরণ রয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসে শিশুদের বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয় দেখানো হয়। ‘আমাদের মজার স্কুল’এ কেউ কেউ বাচ্চাদের জন্য চকলেট বা কেক নিয়ে স্কুল দেখতে আসেন।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি শিশুদের বিনোদনের জন্য খেলাধুলার উপকরণ এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তিনি প্রজেক্টরসহ খেলাধুলার সামগ্রী দিয়েছেন, এতে করে শিশুদের বিনোদনের চাহিদা পুরণ হয়েছে। এছাড়া মজার স্কুলে প্রতিমন্ত্রী পলকের সহধর্মিণী আরিফা জেসমিন কনিকা, সিংড়া পৌরসভার মেয়র মো. জান্নাতুল ফেরদৌস তিনিও মজার স্কুল পরিদর্শন করেছেন এবং সব সময়ই সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সিংড়া পৌরসভার স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে মজার স্কুলে শিশুদের পাঠদান চলছে। সবার মাঝে আনন্দ, একসাথে এতগুলো শিক্ষার্থীকে পেয়ে খুশি তারা। ধনী-গরীব এখানে কোন ভেদাভেদ নাই সব শিশুরা এক কাতারে বসে পাঠদান করছেন। শিশুদের মায়েরা দূর থেকে শিশুদের কার্যক্রম দেখছেন, তারা নিজ নিজ শিশুদের উৎসাহ যোগাচ্ছেন। তাদের বসার জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আসমাউল হুসনা, লতা, আকতার বানু নদী, লিরা জামানসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, প্রি-প্রাইমারি হিসেবে মজার স্কুল থেকে তাদের শিশুরা মানসিকভাবে তৈরি হচ্ছে। যা একেবারে নতুনত্ব, তরুণদের এ উদ্যোগ প্রশসংনীয়। কাসে আসার জন্য শিশুদের আগ্রহ রয়েছে। একদিন ক্লাসে তাদের না আনলে মন খারাপ করে, কান্না করে। এখান থেকে শিখে বাড়িতে গিয়ে তারা চর্চা করে, যেটা অনুপ্রেরণা দেয়। শিশুদের আগ্রহেই প্রতি সপ্তাহে তাদের মজার স্কুলে নিয়ে আসতে হয়।

সিংড়ার ১৬জন স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষক নিয়ে চলছে ‘আমাদের মজার স্কুল’ এর পাঠদানের কার্যক্রম। সত্যি ব্যতিক্রমধর্মী একটি স্কুল এটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *