২০১৫ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ যে রায় দিয়েছিল সেটা বাতিল হওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দুর্নীতি মামলা থেকে খালাস পাচ্ছেন।
এরআগে, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে নিম্ন আদালতের দেওয়া ১৩ বছরের সাজার রায় বাতিল করে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। মায়ার আপিলের ওপর পুনঃশুনানি শেষে বিচারপতি মোঃ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ রায় দেন।
৮ বছর আগে হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ মায়ার আপিলের শুনানি শেষে একই রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায় বাতিল করে পুনঃশুনানির আদেশ দেন।
সোমবার আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার, ড. বশির আহমেদ ও সাঈদ আহমেদ রাজা। রাষ্টপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রোনা নাহরীন ও এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
রায়ের পর মায়ার আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের কোনো প্রমাণ দুদক দেখাতে পারেনি। আদালত আপিল মঞ্জুর করে সাজা বাতিল করে রায় দিয়েছেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই আইনজীবী বলেন, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া খালাস পেয়েছেন, নির্বাচন করতে উনার সামনে কোনো বাধা নেই।
অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, আদালত আপিল মঞ্জুর করে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। আমরা দুর্নীতি দমন কমিশনকে জানিয়েছি। কমিশন সিদ্ধান্ত নিলে সে অনুযাযী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ৬ কোটি ২৯ লাখ ২৩ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়া এবং ৫ কোটি ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৩ জুন মায়ার বিরুদ্ধে সূত্রাপুর থানায় এ মামলা করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক নূরুল আলম। জরুরি অবস্থার মধ্যেই ২০০৮ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত আওয়ামী লীগের এই নেতাকে ১৩ বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে পাঁচ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
২০১০ সালের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিলের রায়ে মায়াকে খালাস দেওয়া হয়। দুদক পরে হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে। সে আবেদনে ২০১৫ সালের ১৪ জুন হাইকোর্টের খালাসের রায় বাতিল করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ। সেইসঙ্গে হাইকোর্টে নতুন করে আপিল শুনানির নির্দেশ দেন সর্বোচ্চ আদালত।
মায়া আপিল বিভাগের আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারকরা আগের সিদ্ধান্তেই অটল থাকেন। এরপর আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী হাইকোর্টে মায়ার আপিলের ওপর নতুন করে শুনানি শুরু হয়। গত ১৪ অগাস্ট পুনঃশুনানি শেষে হাইকোর্ট রায়ের জন্য ৭ অক্টোবর দিন ধার্য করে দেন। কিন্তু রোববার আসামিপক্ষের আবেদনে আবারও শুনানি করা হয় এবং গতকাল সোমবার আদালত মায়াকে খালাস দিয়ে রায় ঘোষণা করেন।