গতকাল রবিবার সকাল থেকে পণ্যবাহী ট্রাকচালকরা অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছেন। সদ্য পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৭ দফা দাবিতে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বানে ঢাকা বিভাগে এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। অনেক স্থানে ট্রাকচালকদের কর্মসূচিতে যুক্ত হয়েছেন গণপরিবহনের শ্রমিকরাও। ফলে রাজধানীর বিভিন্ন রুটে গণপরিবহনের সংখ্যাও ছিল কম। এদিকে কর্মবিরতি পালনকারী শ্রমিকরা রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মোহাম্মদপুর ও গাজীপুরের টঙ্গীসহ কয়েকটি এলাকায় সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর করেন। কোথাও কোথাও তারা যানবাহন থামিয়ে চালকদের লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। এসময় যেসব চালকের লাইসেন্স ছিল না তাদের নাকে-মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেওয়া হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর তেজগাঁও, ধোলাইরপাড়, মোহাম্মদপুর, গাবতলীসহ বিভিন্ন ট্রাক টার্মিনাল থেকে গতকাল কোনো পণ্যবাহী ট্রাক চলেনি। পিকআপ-কাভার্ডভ্যানও চলেনি। ট্রাক শ্রমিকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে টার্মিনালগুলোর আশপাশ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। তবে কোথাও পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনরত শ্রমিকদের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
বাংলাদেশ ট্রাক ড্রাইভারস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. মনির বলেন, তেজগাঁও ট্রাকস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে এক হাজারের বেশি ট্রাক মালামাল নিয়ে ছেড়ে যায়। কিন্তু গতকাল সকাল থেকে কোনো ট্রাক চলাচল করেনি। বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সহ-সম্পাদক মাসুম পাটোয়ারী বলেন, তেজগাঁও টার্মিনাল এখন ট্রাকে পরিপূর্ণ। সকাল থেকে দফায় দফায় ট্রাকচালকরা মিছিল করেছে। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা (ট্রাক ও গণপরিহনের)। তারা চাঁদ উদ্যান এলাকায় টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ ও কিছু গাড়ি ভাঙচুর করেন। অবরোধের কারণে বেড়িবাঁধসহ আশপাশের সড়কে সকল ধরনের গণপরিবহন চলাচল কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। তবে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক রাজীব জানান, সকাল থেকে আন্দোলন চললেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এদিকে সকাল পৌনে দশটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা সড়ক অবরোধ করেন পরিবহন শ্রমিকরা। এসময় তারা সড়কে চলাচলরত গাড়ি থামিয়ে লাইসেন্স পরীক্ষা করেন। যেসব চালকের লাইসেন্স ছিল না তাদের নাকে-মুখ পোড়া মবিল লাগিয়ে দেন।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মকবুল আহমদ বলেছেন, দাবি আদায়ে তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মবিরতি শুরু করেছেন। তবে তাদের আন্দোলনকে কেউ যাতে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সড়ক পরিবহন আইন বাতিল দাবি করিনি। আমরা এর কিছু ধারা সংশোধনের অনুরোধ জানিয়েছি সরকারের কাছে। আর আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন ভাঙচুর করা প্রসঙ্গে এই পরিবহন নেতা বলেন, আমাদের কোনো শ্রমিক এ ঘটনা ঘটায়নি। তবে সকালের দিকে মোহাম্মদপুর এলাকায় কিছু শ্রমিক রাস্তা অবরোধ করে ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়। তিনি নিজে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কর্মবিরতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী খান বলেন, যেসব দাবি নিয়ে বাংলাদেশ পণ্য পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মবিরতি শুরু করেছে তা যৌক্তিক। তবে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের জন্য আমরা মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন) পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি জানিয়েছি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আগামী ১২ অক্টোবর বৈঠকে এ ব্যাপারে কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সড়ক পরিবহন আইন পাস হয়েছে গত ১৯ সেপ্টেম্বর। পরিবহন সেক্টরের পরিস্থিতি স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আইন পাস হওয়ার পর পরিস্থিতি জটিল করে তোলে পুলিশ। বিশেষ করে হাইওয়ে পুলিশ পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছে, তা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে।
গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, ৭ দফা বাস্তবায়নের দাবিতে দুপুরে টঙ্গীতে ট্রাক, পিকআপ, ট্যাংক লরি, কাভার্ডভ্যান চালক ও মালিকরা বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ৭/৮টি যানবাহন ভাঙচুর করেন। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।