হামাস জঙ্গিরা অস্ত্রশস্ত্র মজুত রেখেছে, এই অভিযোগ তুলে গাজার একটি পাঁচতলা বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। নিহত হয়েছিলেন এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার দু’বছরের শিশুকন্যা।
জঙ্গি দমনের নাম করে সাধারণ মানুষকে মারার এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন গাজাবাসী। আর প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে বেছে নিয়েছেন- গান!
গাজা সিটির সেই বাড়িটিতে ছিল ফিলিস্তিনের ‘সৈয়দ আল-মিশাল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র’। বেশ কয়েক বছর ধরে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি। যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় যে কয়েকটি হাতে গোনা সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ছিল, তার মধ্যে অন্যতম এই ‘আল-মিশাল’।
পাঁচতলা বাড়িটিতে ছিল প্রেক্ষাগৃহ, নাটকের মঞ্চ এবং একটি গ্রন্থাগার। প্রতি বছর একাধিক সঙ্গীতানুষ্ঠান হত সেখানে। শুধু অনুষ্ঠানই নয়, এই কেন্দ্র ছিল বিভিন্ন শিল্পী ও সংস্কৃতিমনস্ক নতুন প্রজন্মের সংযোগের ক্ষেত্র। তারা এখানে জড়ো হতেন, আড্ডা দিতেন আর পরিকল্পনা করতেন পরবর্তী অনুষ্ঠানের।
সেই সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এ ভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পিছনে ইসরায়েলের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
যেমন থিয়েটার কর্মী, ২৩ বছরের যুবক হানিন আল-হোলির কথায়, আল-মিশাল কেন্দ্র আমাদের ফিলিস্তিনি অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য খুবই জরুরি ছিল। তাই ইচ্ছে করেই হামাসের অজুহাত দিয়ে বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনা।
ইসরায়েলি সেনার সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘর্ষ চলছেই। প্রতিদিনই দু’পক্ষের একাধিক মানুষ হতাহত হন। ইসরায়েলের দিক থেকে উড়ে আসে ক্ষেপণাস্ত্র, বুলেট। আর গাজা ও পশ্চিম ভূখণ্ড থেকে ছুড়ে দেওয়া হয় জ্বলন্ত টায়ার, অ্যাসিড-ভরা বোতল। সংঘর্ষের সেই পরিচিত ছবি থেকে অনেকটাই দূরে সরে দিয়ে অন্য ধরনের প্রতিবাদের ভাষা বেছে নিয়েছেন আল-মিশালের সঙ্গে যুক্ত ছেলে-মেয়েরা।
সপ্তাহে অন্তত এক দিন তারা জড় হচ্ছেন ধ্বংসস্তূপে। কাঁধে গিটার, গলায় গান। কোনও দিন হচ্ছে একক সঙ্গীতের অনুষ্ঠান। কোনও দিন বা ব্যান্ডের গান। তিন-চারটি পথ নাটিকাও হয়েছে ওই ধ্বংসস্তূপের উপরে।
কিশোরী সঙ্গীতশিল্পী আলা খুদেই বলল, প্রতিবাদের খুব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে শিল্প। সেটা বুঝতে পেরেই মনে হয় ইসরায়েল এ রকম হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু আমরাও প্রতিবাদ থামাবো না। গান-নাটক চালিয়েই যাব। মেশিনগানের জবাব দেব গান গেয়েই।