ঢাকা:তনুশ্রী দত্তকে গতকাল সোমবার আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন বলিউডের শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকার। এই আইনি নোটিশে কী আছে? আইনজীবী রাজেন্দ্র শিরোধকর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নানা পাটেকারকে নিয়ে গত কয়েক দিন তনুশ্রী দত্ত যত অভিযোগ করেছেন, সবই মিথ্যা। নোটিশে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। যেহেতু তনুশ্রী দত্ত মিথ্যা অভিযোগ করে নানা পাটেকারের ইমেজের ক্ষতি করেছেন, এর জন্য তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
আইনজীবী রাজেন্দ্র শিরোধকর আরও জানিয়েছেন, হয়তো শিগগিরই নানা পাটেকার তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের ব্যাপারে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হবেন।
২০০৪ সালের ‘মিস ইন্ডিয়া’ ও বলিউড তারকা তনুশ্রী দত্ত শক্তিমান অভিনেতা নানা পাটেকারের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন। ভারতের টিভি চ্যানেল নিউজ এইটিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দত্ত অভিযোগ করেন, ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবি করতে গিয়ে নানা পাটেকার তাঁকে যৌন হেনস্তা করেছেন।
নানা পাটেকারের সঙ্গে তাঁর ঘটে যাওয়া ঘটনার জের ধরে তো প্রায় দেশান্তরিই হয়েছিলেন তনুশ্রী। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরেছেন তনুশ্রী দত্ত। ফিরে এসে জানালেন, ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির এক আইটেম গানে কাজ করার কথা ছিল। নানা পাটেকার সে সময় খারাপ আচরণ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে। কোরিওগ্রাফার গণেশ আচার্য আর পরিচালক রাকেশ সারাঙ্গ তাঁকে ব্যাপারটি চেপে যেতে বলেছিলেন। নানা পাটেকার অনুচিতভাবে গায়ে হাত দিতে চাইলে তিনি কেন চেপে যাবেন? শুটিং থেকে চলে এসেছিলেন তিনি। এ জন্য একদল লোককে দিয়ে তাঁর গাড়িতে হামলাও চালানো হয়। সে সময় তাঁর গাড়িতে মা-বাবাও ছিলেন।
এদিকে তনুশ্রী দত্তের অভিযোগ ‘সত্যি’ বলে দাবি করেছেন ওই সময় ‘হর্ন ওকে প্লিজ’ ছবির সেটে উপস্থিত সাংবাদিক জেনিস সেকিরা আর ছবির সহকারী পরিচালক শাইনি শেঠি। তনুশ্রী দত্তের অভিযোগ নিয়ে যখন বলিউড ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে, ঠিক তখন এই দুজন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তাঁরা নাকি কাছ থেকে ঘটনাটি দেখেছেন।
২০১০ সালে নানা পাটেকারকে নিয়ে ডিম্পল কাপাডিয়ার একটি ভিডিও সাক্ষাৎকার এখন আবার সামনে এসেছে। সেখানে নানা পাটেকারের ব্যাপারে ডিম্পল কাপাডিয়া বলেছেন, ‘নানার অনেক কিছুই আপত্তিজনক। মানুষ হিসেবে তিনি ভালো, দয়ালু এবং বন্ধু হিসেবে চমৎকার। কিন্তু তাঁর চরিত্রে কালিমা আছে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি তাঁর চরিত্রের ভয়ংকর দিকটাও দেখেছি, অন্ধকার দিকটা। আমাদের সবারই একটা অন্ধকার দিক আছে, যা আমরা সবাই সুন্দরভাবে নিরাপদে লুকিয়ে রাখি মনের ভেতরে।’
ডিএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তনুশ্রী দত্ত বলেছেন, ২০০৫ সালে ‘চকলেট’ ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী তাঁকে জামা খুলে অন্য দুই শিল্পী সুনীল শেঠি আর ইরফান খানের সামনে নাচার জন্য বলেন। একই সাক্ষাৎকারে অভিযোগ করেন প্রেমাংশু রায়ের বিরুদ্ধে। ২০১৩ সালে এই পরিচালকের ছবি ‘গন্ধ’তে অভিনয় করতে গিয়ে যৌন হেনস্তার শিকার হন। তাঁকে দিয়ে জোর করে একাধিক ঘনিষ্ঠ দৃশ্যে অভিনয় করানো হয়। ওই সময় তাঁকে নগ্নভাবে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে বাধ্য করা হয়। প্রেমাংশু রায় এই ছবির কাজের পরও তনুশ্রী দত্তের ওপর অত্যাচার অব্যাহত রাখেন।
এবার তনুশ্রী দত্তের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বলিউডের নির্মাতা আর অভিনয়শিল্পীরা। তাঁদের মধ্যে আছেন ফারহান আখতার, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, সোনম কাপুর, টুইঙ্কল খান্না, পরিণীতি চোপড়া, রিচা চাড্ডা, স্বরা ভাস্কর, রাভিনা টেন্ডন প্রমুখ।
বলিউডে যে নারীরা দীর্ঘদিন ধরে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ও সমর্থন জানিয়েছেন উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আশা ভোসলে। তিনি বলেছেন, ‘এটা খুব ইতিবাচক ঘটনা, এখন নির্যাতিত মেয়েরা মুখ খুলছেন। আমি শুনেছি, এখানে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মেয়েরা কাজ করছেন। টিকে থাকার জন্য কত কিছুই না তাঁদের করতে হচ্ছে! একটা খারাপ গোষ্ঠী তাঁদের ব্যবহার করছে। মেয়েরা সব সময় এভাবে ব্যবহৃত হবেন, শোষিত হবেন? মেয়েরা যে মুখ খোলার সাহস দেখিয়েছেন, এটা ভালো দিক। আমি এর প্রশংসা করছি।’
আশা ভোসলে আরও বলেন, ‘মেয়েদের এভাবে হেনস্তা হওয়া, ব্যবহৃত হওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এখানে তা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। অথচ এই মেয়েরাই চিরকাল কর্মক্ষেত্র আর পরিবার—দুই দিক সমানভাবে দক্ষতার সঙ্গে সামলাচ্ছেন।’