শরীয়তপুরের জাজিরায় পুলিশের মারধরে পাভেল শেখ (১৯) নামে এক কলেজছাত্রর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা বিকেনগর ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পাভেল শেখ উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর পূর্ব কাজিকান্দি গ্রামের রব শেখের ছেলে। তিনি সরকারি বিকেনগর বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পাশ করেছেন।
স্থানীয় ও নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পাভেল শেখ ও তার চাচাতো ভাই শান্ত শেখ মোটরসাইকেল নিয়ে বিকেনগর ইউনিয়নের আনন্দবাজারের কাছের সড়কে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। এসময় জাজিরা থানা পুলিশের একটি গাড়ি ওই সড়ক দিয়ে যাচ্ছিল। তখন নুরজ্জামান পাভেল ও শান্তর প্যান্টের পকেটে হাত দেয়া দেখে পুলিশ গাড়ি থামায় এবং পুলিশ ওদের প্যান্টের পকেটে হাত দিতে চায়। হাত ঢুকাতে না দিতে দিলে পুলিশ পাভেল শেখকে মারধর করলে পাভেল মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ পাভেলকে তাদের গাড়িতে করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পাভেলকে মৃত্যু বলে ঘোষণা করেন। পাভেলকে শুক্রবার সকালে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওই সময় পুলিশ শান্ত শেখকে মারধর করে আহত করেন বলে জানান শান্ত।
আছর নামাজ শেষে নিহতের পারিবারিক কবর স্থানে দাফন সম্পূর্ণ করেছে স্থানীয়া।
পাভেল কিভাবে মারা গেছে জানতে চাইলে তার বাবা আব্দুর রব শেখ বলেন, সে কিভাবে মারা গেছে এখন বলতে পারব না। পুলিশ তাকে থাপ্পর মেরেছে এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে এসে দেখি সে অচেতন হয়ে মাটিতে পরে আছে। পুলিশ বলছে পাভেলের মৃগি রোগ ছিল, সে কারণেই মারা গেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন সব মিথ্যা কথা। পাভেলের কোন মৃগি রোগ ছিলা না। সে সুস্থ ছিল।
নিহতের মা ফাহিমা বেগম ও চাচি বলেন ,আমার ছেলে কলেজে লেখাপড়া করত, আমার ছেলে ভালো। পুলিশ আপনার ছেলেকে মারবে কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার ছেলের কাছ থেকে গাড়ির কাগজপত্র চাইলে দিতে না পাড়ায় তাকে মার দেয়। এজন্যই আমার ছেলের বুকে ধরে থাপ্পর দেয় তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়ে মারা যায়। সরকারের কাছে এর বিচার চাই।
সরকারি বিকেনগর বঙ্গবন্ধু কলেজের অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন বলেন, পাবেল আমাদের কলেজ থেকে ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেছে। শুনেছি পাবেল মারা গেছে। ওর মৃত্যু যদি স্বাভাবিক না হয়ে থাকে তাহলে দোষীদের আইনের আওয়তায় এনে বিচার দাবি করছি।
শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পাভেলের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে মারধরের কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তদন্তর রিপোর্ট ঢাকা পাঠানো হয়েছে।
জাজিরা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বেলায়েত হোসেন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কোন পুলিশ সদস্য পাভেলকে মারধর করেনি। শুনেছি ওর মৃগি রোগ ছিল। তাই তার মৃত্যু হতে পারে।
শরীয়তপুর পুলিশ সুপার আব্দুল মোমেন বলেন, পাভেলকে কেই মারধর করেনি। পুলিশ তার পকেট চেক করতে গেলে হঠাৎ পাভেল মাটিতে লুটিয়ে পরে। নিহতের পরিবার যদি কোন অভিযোগ করে তাহলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।