ঢাকা: দলীয় সভাপতির চেয়ে অধিকতর স্পর্শকাতর হয়ে যখন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) আক্রমণাত্মক কথা বলে তখন ভারতীয় জনতা পার্টি সম্পর্কে কি বলা যায়? গত সপ্তাহে আরএসএস প্রধান মোহন ভগত বলেছেন যে, আধিপত্য বিস্তারের কোন বাসনা নেই হিন্দুদের। এমন কি তারা একটি পোকামাকড়ও মারতে চান না। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই রাজস্থান ও দিল্লিতে র্যালিতে বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ। তিনি কথিত বাংলাদেশী অভিবাসীদেরকে উইপোকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই উইপোকা দেশকে খেয়ে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেছেন, দিল্লিতে অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আপনারা বিরক্ত নাকি না? তাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেয়া উচিত কিনা? আমাদের দেশে এক শত কোটি অনুপ্রবেশকারী প্রবেশ করেছে। তারা উইপোকার মতো আমাদের দেশটাকে খেয়ে ফেলছে। তাদেরকে আমরা কি বের করে দেবো কি না?
অমিত শাহের এই ভাষা অমানবিক। এক্ষেত্রে তিনি ভারতীয়দেরকে মেরুকরণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি কিছু মানুষকে নিজের পক্ষে আনার চেষ্টা করেছেন। তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন তাদের অধিকারের জিনিসগুলো বাইরের দেশের লোকেরা লুট করে নিচ্ছে। মানুষকে কীটপতঙ্গ হিসেবে বর্ণনা করায় সব সময়ই নাৎসী যুগের বাগাড়ম্বরতার কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু দৃশ্যত অমিত শাহ কোনো ফ্যাসিস্টদের কাছ থেকে তার স্ক্রিপ্ট ধার করায় তার মধ্যে কোনো উদ্বেগ নেই।
অমিত শাহ এমন ভাষা ব্যবহার করে প্রকৃতপক্ষে তার বিরোধীদের ঘায়েল করার চেষ্টা করছেন। ভোটব্যাংককে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছেন। অমিত শাহ যে বার্তা দিয়েছেন তা হলো, ভারতের হিন্দুদের উচিত তাদের চারপাশে থাকা প্রতিজন মুসলিমের বিষয়ে সন্দিগ্ধ হওয়া। এটা এমন সময়ে করা হচ্ছে যখন বিজেপি একটি সিটিজেনশিপ বিল বা নাগরিকত্ব বিল পাস করানোর চেষ্টা করছে। এই বিলের অধীনে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে বসবাসকারী হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান ভারতের নাগরিকত্বের জন্য বৈধ হবেন। কিন্তু মুসলিমরা এ সুবিধা পাবেন না। আসামে বৈধ নাগরিক সনাক্তের কাজ করছে সরকার। সেখানে অমিত শাহ যে সংবেদনশীল বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ফুটে ওঠে যে, তিনি আসলে কি অর্জন করতে চান। বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী এরই মধ্যে বলেছেন, ভারতে যেসব লোককে অবৈধ বলে সনাক্ত করা হচ্ছে তারা বাংলাদেশে ‘আনওয়ান্টেড’ অর্থাৎ বাংলাদেশ তাদেরকে মেনে নেবে না। ওই মন্ত্রী আরো বলেছেন, ঢাকাকে ভারত নিশ্চয়তা দিয়েছে যে, ওইরকম বাংলাভাষী লোকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর কোনো উদ্যোগ নেয়া হবে না। বিবেচনা করুন, ভারত গত কয়েক বছরে মাত্র অল্প কিছু সংখ্যক মানুষকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে পেরেছে। এটাই প্রমাণ করে যে, অমিত শাহর লক্ষ্য হলো পুরো আভ্যান্তরীণ লক্ষ্য অর্জন।
তার সরকার অর্থনীতি, সামাজিক, পররাষ্ট্রনীতিতে ব্যর্থ হওয়ায় বিজেপি সভাপতি তার পুরনো স্লোগানে ফিরে গেছেন- ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। অর্থাৎ উন্নয়ন সবার জন্য। একই সঙ্গে তিনি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যেটা হলো বিজেপির প্লাটফরম। অমিত শাহ যখন মানুষকে উইপোকা বলে বর্ণনা করেন তখন তিনি প্রকৃতপক্ষে ভিতর থেকে ভারতীয় সমাজের ক্ষতি করছেন।
(অনলাইন স্ক্রল ডট ইন-এ প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)