যশোর রোডের ভারতীয় অংশে শতাব্দী প্রাচীন গাছ কাটায় কলকাতা হাইকোর্ট অনুমতি দিলেও তার ওপর স্থগিতাদেশ দিল ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত থেকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের পেট্রাপোল পর্যন্ত যশোর রোডের দুই ধারে তাবুর মতো বিছিয়ে থাকা বহু মূল্যবান ওই গাছ কাটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে রাজ্য সরকারের কাছে জবাব চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি মদন ভীমরাও লকুর এবং বিচারপতি দীপক গুপ্তার ডিভিশন বেঞ্চ নোটিশ ইস্যু করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। ততদিন পর্যন্ত যশোর রোডের কোন গাছ কাটা যাবে না।
যশোর রোড সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেই গত আগস্ট মাসে এই সড়কের দুই ধারে থাকা ৩৫৬টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেক্ষেত্রে একটি শর্ত দিয়ে বলা হয়েছিল যে, একটি গাছ কাটার পরিবর্তে ওই অঞ্চলেই নতুন করে ওই প্রজাতিরই পাঁচটি চারা গাছ রোপণ করতে হবে। নিম্ন আদালতের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় বেসরকারি সমাসেবী সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফল প্রোটেকশন অব ডেমোক্রাটিক রাইটস (এপিডিআর)। গতকাল বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতি মদন.বি.লকুর ও দীপক গুপ্তার এজলাসে প্রথমবারের মতো এই মামলাটি উঠে। সেখানেই হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যকে এই প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে জানাতে বলা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৫ অক্টোবর।
উল্লেখ্য, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হল যশোর রোড বা জাতীয় সড়ক-১১২। বারাসাত থেকে পেট্রাপোল পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই যশোর রোডের দুই ধারে মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার, যার অনেকগুলোই প্রায় ২ শতাধিক বছরের পুরোনো। কিন্তু এই সড়ক সম্প্রসারণ ও এর ওপর ওভার ব্রিজ বা উড়ালপুল তৈরির জন্য গত বছরের মার্চ-এপ্রিল নাগাদ এই রাস্তার দুই ধারে ২ থেকে ৩ শতাধিক গাছ নির্বিচারে কাটা পড়ে। এরপরই ওই গাছ কাটার প্রতিবাদ করে তার স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়। যদিও এরপর কয়েক দফায় আদালতের পক্ষ থেকে এই মামলায় অন্তবর্তীকালীন স্থগিতাদেশও জারি করা হয়। অবশেষে গত ৩১ আগষ্ট উন্নয়নের স্বার্থেই কলকাতা হাইকোর্ট ৩৫৬টি গাছ কেটে ফেলার অনুমতি দেয়। কিন্তু হাইকোর্টের সেই রায়ের ওপরেই এদিন ফের স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট।