ফের গুগল বিভ্রাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশ্য একে বিভ্রাট বলা যায় কি? হয়েছে কী, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিনের ট্রান্সলেটার পরিষেবায় ‘Banerjee’ লিখে এন্টার বাটন টিপলেই বাঁ দিকে ফুটে উঠছে ‘মমতা’। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের দৌলতে এই খবর ছড়িয়ে পড়তে থাকে দ্রুত। যদিও এই বিষয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি প্রকাশ্যে। ঘটনাটির সূত্রপাত সম্ভবত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়।
এখন প্রশ্ন হল, কেন এমন হচ্ছে? গুগল ট্রান্সলেট হচ্ছে গুগলের এক পরিষেবা, যার মাধ্যমে এক ভাষার লেখাকে অন্য ভাষায় ভাষান্তরিত করা হয়। একে আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ বলা যায় না, কারন এটি এক ভাষার কোনও বাক্যকে অন্য ভাষায় সম্পূর্ন রূপে অনুবাদ করতে পারে না। এটি শুধু একটি ভাষার বাক্যের প্রত্যেক শব্দকে অনুবাদ করে এর নিজের সার্ভারে থাকা কয়েক কোটি বাক্যের সঙ্গে মিলিয়ে আপনার হোম স্ক্রিনে একটি গোটা বাক্য সাজিয়ে দেয়। এই বাক্যটি কোনও ব্যাকরণ মেনে সাজানো থাকবে না, তবে আপনি মোটামুটি বুঝতে পারবেন যে আসলে ওই বাক্যে কী বলা হচ্ছে। এ জন্য এতে বহুল ব্যবহৃত বাক্যগুলির সঠিক ভাষান্তর পাওয়া গেলেও, একটু জটিল হলেই এটি সঠিকভাবে অনুবাদ করতে পারে না।
যদিও এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিকবার গুগলে মুখ্যমন্ত্রীর নাম নিয়ে বিভ্রাট তৈরি হয়েছে। একবার তো, বিশ্বের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিনে ‘মিরজাফর’ লিখে সার্চ করলেই ভেসে উঠছিল সিরাজের প্রতিকৃতির সঙ্গে জোড়া লাগানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। সেবার অবশ্য বিষয়টি নজরে আসায় ক্ষুব্ধ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার সাংসদ তথা তৃণমূলের সাইবার সেল-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ডেরেক ও’ ব্রায়ানকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। নেত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর ডেরেক সঙ্গে সঙ্গে দিল্লিতে গুগলের পাবলিক পলিসি বিভাগের সর্বোচ্চ কর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অবিলম্বে সেই ছবি সরানোর অনুরোধও করেন তিনি। সেবার অবশ্য গুগল কর্তারা ছবিটি বারো ঘণ্টার মধ্যেই সরিয়ে নেন।
কিন্তু এবারও এমন হল কেন? বিশেষজ্ঞদের মতে, এর আগেরবারের মতো এবারও এই গণ্ডগোলের মূলে ‘অ্যালগরিদম’-এর ত্রুটি। কী এই ত্রুটি? অ্যালগরিদম আদতে এমন একটি প্রোগ্রামিং, যার মাধ্যমে সার্চ ইঞ্জিন এক-এক করে শব্দ ধরে তথ্য খুঁজে বার করে। কোন তথ্য আগে দেখানো হবে, কোনটা পরে তা-ও ঠিক করে দেয় অ্যালগরিদম। এখন ইন্টারনেটে কোনও লেখা যখন প্রকাশ করা হয়, তখন তা সেভ করা হয় কিছু ওই লেখা সংক্রান্ত উল্লেখযোগ্য দু-তিনটি শব্দ দিয়ে। যাকে কম্পিটারের ভাষায় বলে ‘কী-ওয়ার্ড’। যেমন ধরা যাক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কোনও লেখায় কি ওয়ার্ড দেওয়া হল, ‘মমতা’, ‘ব্যানার্জি’, ‘মুখ্যমন্ত্রী’- ইত্যাদি। বিশেষজ্ঞদের মতে, গুগলে বহুবার ‘মমতা’ ও ‘ব্যানার্জি’ বলে সার্চ করা হয় এ দেশে। সম্ভবত বহু লেখা/প্রতিবেদন গুগলে আপলোড করার সময় ‘কি-ওয়ার্ড’ও দেওয়া হয় তাঁরই নামে। গুগল সার্চ করে সেই প্রতিবেদন পড়েনও অনেকে। এখন গুগলের অ্যালগরিদম ‘মমতা’ ও ‘ব্যানার্জি’ শব্দটি পেয়েই স্বাভাবিক অভ্যাসে তার ওই ‘চেনা’ শব্দগুলিকে ‘ট্রান্সলেট’ করে ফেলছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
রাজ্য রাজনীতিতে তৃণমূল কংগ্রেস যেভাবে নিজেদের প্রচারের কাজে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করেছে তা এক কথায় অনবদ্য। ট্যুইটার-ফেসবুক-কে যেভাবে ব্যবহার করেছে তৃণমূল, সেরকম অন্য কোনও দল করতে পারেনি৷ সিপিএম সদ্য সেই চেষ্টা শুরু করলেও এখনও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তার ধারেকাছে আসতে পারেনি। সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে একা মুখ্যমন্ত্রীর পেজেই লাইক প্রায় ১০ লক্ষের কাছাকাছি। সিপিএমের রাজ্য কমিটির পেজ-এ লাইক ২৮ হাজারের কিছু বেশি। রাজ্য বিজেপির পেজ-এ লাইক ৫১ হাজার। যদিও তৃণমূলের অফিসিয়াল পেজে লাইক বেশ কম, মোটে ১৮ হাজারের কিছু বেশি। অ্যাপের দুনিয়াতেও পা রেখেছে তৃণমূল। তাদের অ্যাপের নাম, অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেস অ্যাপ্লিকেশন। গুগল প্লে কিংবা অ্যাপ স্টোরে গিয়ে সার্চ করলেই মিলবে তৃণমূলের এই নতুন অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপে রয়েছে দিদি ডাইরেক্ট, অর্থাৎ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি চ্যাটের সুযোগ। তৃণমূলের প্রায় ৪০টি ব্লগেও নিজেদের মতামত জানাতে পারেন সাধারণ মানুষ। এই অ্যাপস থেকেই মিলবে তৃণমূলের ওয়েবসাইটের লিঙ্ক৷পাশাপাশি তৃণমূলের নামে ফেসবুক, ট্যুইটার, গুগল হ্যাঙআউটেও রয়েছে প্রোফাইল-পেজ৷ তৃণমূলের এই গোটা কর্মযজ্ঞের তদারকি করেন আইআইএম-এর দুই প্রাক্তনী তন্ময় মণ্ডল এবং সম্প্রতি মোদগাজে। – kolkata24x7