ফয়জুর রহমান রাজু। ছাত্রদলের বিগত কমিটির নেতা।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রকিবের গ্রুপে ছিলেন তিনি। সিটি নির্বাচনের কিছুদিন পূর্বে রাজু গ্রুপ পরিবর্তন করেন। রাজুর সহপাঠিদের অভিযোগ গ্রুপ পরিবর্তনই রাজুর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
প্রতিনিয়ত তার মোবাইলে রকিব গ্রুপের সদস্যরা হুমকি দিয়ে বেড়াতো। সিটি নির্বাচনের সময়ে রাজু মেয়র আরিফের খুব কাছে চলে আসেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পূর্বে আরিফ বিরোধী একটি জোট হয় সিলেট বিএনপিতে। কেন্দ্রীয় এক নেতা আরিফ যাতে দলীয় মনোনয়ন না পান সে ক্ষেত্রে কাজ শুরু করেন।
একসময় সিলেট থেকে একাধিক নেতাকর্মী কেন্দ্রে আরিফের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেন। দলীয় মহাসচিবের কাছে আরিফকে মনোনয়ন না দিতে প্রকাশ্যে সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা সুপারিশ করেন।
আর এর সবকিছু পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ান সিলেটের ওই কেন্দ্রীয় নেতাই। রকিব ছিলেন আরিফেরই আস্থাভাজন। কিন্তু নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলের ভেতর আরিফ বিরোধী সুর ওঠলে তিনিও ডিগবাজি দেয়ার চেষ্টা চালান। আরিফকে না জানিয়ে ওই নেতার কাছে ভিড়তে থাকেন তিনি। কিন্তু দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর ফের সঙ্গি হন আরিফের।
এদিকে, নির্বাচনকালীন সময়ে রাজুও আরিফের খুব কাছে চলে যান। রাজুর বাড়ি মৌলভিবাজারের রাজনগরে। আরিফও মৌলভিবাজারের লোক। যে কারণে রাজুকে তিনি একটি বেশীই স্নেহ করতে থাকেন।
দলের একধিক নেতা জানান, নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে রাজু প্রায়ই আরিফের সঙ্গে থাকতেন। আরিফও ডেকে নিয়ে তাকে গাড়িতে তুলতেন। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি ছাত্রদল নেতা রকিব। সদ্য দলছুট রাজু তখন তার চোখের বিষ হয়ে ওঠেন। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে আরিফের কাছাকাছি থাকা নিয়ে রাজুর সাথে রকিবের বেশ ক’বার বাকবিত-া হয়।
নির্বাচনকালীন সময়ে আরিফের গাড়িতে উঠতে চাইলে প্রায়ই বাধা দিতের রকিব। সর্বশেষে নির্বাচনের দিন রাতে যখন ভোটের ফল পাল্টে গেলো-কামরান নয় আরিফই জিতে যাচ্ছেন এমন খবর যখন সিলেটের বাতাসে ভাসলো তখন দলীয় নেতা-কর্মীরা সবাই আরিফের বাসায় আসেন। ওইদিন আরিফের ড্রয়িং রুমে বসা নিয়ে রাজুর সাথে রকিবের তর্ক হয়।
তখন রকিব রাজুকে বেয়াদব বলে এর খেসারত দিতে হবে হুমকি দেন। রাজুর সহপাঠিদের দাবী ৩০ জুলাই রাতের ওই ঘটনার পর থেকেই রাজু হত্যার ছক করতে থাকে ঘাতকরা। রকিবের নেতৃত্বে একাধিক বৈঠক হয়। সেসব বৈঠকে রাজুর ওপর হামলার প্রস্তুতি নেন ঘাতকরা। রাজুর কাছেও হুমকি আসতে থাকে।
কিন্তু সাহসী রাজু ওসবে তেমন পাত্তা দেননি। ১১ আগস্ট রাজুর ওপর হামলার দুদিন আগে রকিবের বাসায় চূড়ান্ত বৈঠকে বসে ঘাতকরা। সেই খবরও আসে রাজুর কাছে। রাজুর চাচা এবং মামলার বাদি দবির মিয়ার দাবি রকিবের বাসায়ই চূড়ান্ত বৈঠক হয়। রাজুকে হামলা নয় বরং হত্যা করারই পরিকল্পনা হয় সেই বৈঠকে।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজুর গতিবিধি তারা অনুসরণ করতে থাকে। ১১ আগস্ট নির্বাচনের ফল প্রকাশের দিন রাজু মেয়র আরিফের বাসায়ই আসবে-এমন খবর তাদের জানা ছিলো। যে কারণে সেখানেই হামলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা।