নীলফামারী: স্টেশনে স্টেশনে থামিয়ে পথসভা করে ট্রেনের পাঁচ ঘণ্টা বিলম্ব ঘটানোর পরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, গতকাল শনিবারের এই যাত্রায় অচিন্তনীয় বাঁধভাঙা স্রোত দেখেছে জনগণ। যাত্রীরা ট্রেনযাত্রাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিয়েছে।
আজ রোববার সকালে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
গতকাল সকাল আটটার দিকে ঢাকার কমলাপুর থেকে ছাড়ে নীলফামারীর চিলাহাটীগামী আন্তনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস। এই ট্রেনে চাপেন ওবায়দুল কাদেরসহ আওয়ামী লীগের একাধিক সাংসদ ও কেন্দ্রীয় নেতা। নাম দেওয়া হয় ‘নির্বাচনী যাত্রা’। লক্ষ্য হিসেবে বলা হয় নেতা-কর্মীদের চাঙা করা এবং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম জনগণের কাছে তুলে ধরা।
আন্তনগর নীলসাগর ট্রেনে করে গতকাল মন্ত্রী, সাংসদ ও দায়িত্বশীল নেতাদের এই নির্বাচনী যাত্রা পথে পথে যেমন সাড়া ফেলে, তেমনি দুর্ভোগের শিকার হন অন্য যাত্রীরা।
নীলসাগর এক্সপ্রেসটি ঢাকার কমলাপুর থেকে নীলফামারী পৌঁছার কথা ৪টা ৫৫ মিনিটে। গতকাল সকাল আটটার দিকে ট্রেনটি কমলাপুর থেকে ছেড়ে রাত ৯টা ৫৬ মিনিটে নীলফামারী পৌঁছায়। নীলফামারী পর্যন্ত মোট বিলম্ব হয় ৫ ঘণ্টা ১ মিনিট।
কমলাপুর থেকে গতকাল ছেড়ে যাওয়া ট্রেনটিতে আসনসংখ্যা ছিল ৯০০। কমলাপুর থেকে টিকিট বিক্রি হয় ৭১৫টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আসন ৮৪টি। এই ট্রেনযাত্রার জন্য ৪৮ আসনের একটি বাড়তি শীততাপনিয়ন্ত্রিত কামরা যোগ করা হয়। এর বাইরে ৩৬টি এসি চেয়ার আসনের টিকিট কাটা হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
দিনাজপুর ও নীলফামারীর পথে আন্তনগর ট্রেনগুলোর মধ্যে নীলসাগর এক্সপ্রেসটি সবচেয়ে ভালো ও জনপ্রিয়। ঢাকা থেকে চিলাহাটির মাঝখানে ট্রেনটির নির্ধারিত যাত্রাবিরতি আছে ১৬টি স্থানে। কিন্তু গতকাল আওয়ামী লীগের নেতারা নাটোরের নলডাঙ্গা ও নওগাঁর আত্রাইয়ে অনির্ধারিত যাত্রাবিরতি দিয়ে সমাবেশ করেন। এর বাইরে ১৬টি নির্ধারিত যাত্রাবিরতির স্থানের ১২টি স্থানে পথসভা হয়। কোথাও ট্রেন থেকে নেমে মঞ্চে বক্তৃতা করেন নেতারা। কোথাও স্টেশনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে বক্তৃতা করেন ওবায়দুল কাদের। প্রতিটি পথসভা থেকেই নেতা-কর্মীরা ট্রেনে উঠতে থাকলে উপচে পড়া ভিড় হয়। নিষিদ্ধ হলেও ঝুঁকি নিয়ে নেতা-কর্মীরা ছাদে চড়েন।
ট্রেনের যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে আজ ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকেরা। জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জনগণ কোনো দুর্ভোগ পোহায়নি। এ ধরনের ট্রেনযাত্রা বিএনপি করলে অনেক বিশৃঙ্খলা হতো।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, লাখ লাখ জনগণ জনসভায় যোগ দেয়। সামান্যতম হাতাহাতি হয়নি।
ট্রেনযাত্রায় যাত্রীদের দুর্ভোগ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মিডিয়া একধরনের অপপ্রচার করে। কোটা আন্দোলন, ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে এ ধরনের অপপ্রচার মিডিয়া করেছে। কাল জনগণ ট্রেনযাত্রায় বুঝিয়ে দিয়েছে, বিএনপি বিরোধী দল থাকার যোগ্যতা রাখে না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির নেতারা এসি রুমে বসে হিন্দি সিনেমা দেখে আন্দোলনের খবর নেয়। এই ধরনের আন্দোলন সফল হবে না।
নির্বাচনকালীন সরকারের আকার নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেই সরকারের আকার ছোট হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা ও সাংসদ উপস্থিত ছিলেন।