ঢাকা: ‘আমাকে কেন মামলায় জড়ানো হলো? শুধু আমাকে না, সঙ্গে আমার স্বামীকেও জড়ানো হয়েছে। এর মানে কী! আমার ভাই তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কী ব্যবহার করেছে, তা তো আমার জানার কথা না। আমি থাকি ময়মনসিংহ আর ভাই নেত্রকোনায়। হঠাৎ গতকাল শুক্রবার রাতে জানতে পারলাম, আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ বললেন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ন্যান্সি। আজ শনিবার সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ন্যান্সি আর তাঁর ছোট ভাই শাহরিয়ার আমান সানির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সানির স্ত্রী সামিউন্নাহার শানু বাদী হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে নেত্রকোনা মডেল থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ন্যান্সি ও তাঁর স্বামী নাজিমুজ্জামান জায়েদকেও আসামি করা হয়। এ ঘটনায় গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় নেত্রকোনা সদর থানার সাতপাই এলাকার সানির বাবার বাসা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ বোরহান উদ্দিন খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রথম আলোকে তিনি বলেছেন, ‘গ্রেপ্তার হওয়া আসামিকে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। মামলার অপর দুই আসামিকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’
ন্যান্সি এখন ঢাকায় আছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, গত ২৭ আগস্ট সানি তাঁর স্ত্রী সামিউন্নাহার শানুকে তালাক দিয়েছেন। এই তালাকের কাগজ এরই মধ্যে শানুর হাতে পৌঁছেছে। এদিকে ন্যান্সি জানতে পেরেছেন, বেশ কিছুদিন ধরে সম্পত্তি নিজের নামে লিখে দেওয়ার জন্য সানিকে চাপ দিচ্ছেন তাঁর স্ত্রী সামিউন্নাহার শানু। কিন্তু তা স্ত্রীকে লিখে দিতে অস্বীকৃতি জানান সানি। এরপর তা নিয়ে পারিবারিকভাবে তাঁদের কলহ হয়েছে। এমনকি শানু তাঁর ভাইয়ের বন্ধুদের দিয়েও সানির ওপর হামলা করিয়েছেন, তাঁকে মেরেছেন, ভয় দেখিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত সানি তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেন।
ন্যান্সি দাবি করেন, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ব্যাপারে ন্যান্সি বা তাঁর স্বামীর সঙ্গে সানি কোনো আলোচনা বা পরামর্শ করেননি।
ন্যান্সি বলেন, ‘যতটুকু বুঝতে পারছি, যেহেতু আমাকে দেশের সবাই চেনেন, জানেন, আমরা একটি পরিচিতি আছে, তাই আমাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমাকে জড়ানোর ফলে তারা এখন দেশের সব সংবাদমাধ্যমে গুরুত্ব পাচ্ছে। যেহেতু সব সংবাদমাধ্যমে খবর হচ্ছে, ফলে প্রশাসনও ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। আর আরেকটি ব্যাপার বেশ বুঝতে পারছি, আমাকে দেশের সবার সামনে ছোট করার জন্য, আমার ইমেজের ক্ষতি করার জন্য তারা আমাকে এই মামলায় আসামি করেছে।’
নেত্রকোনা প্রতিনিধি আরও জানিয়েছেন, ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সামিউন্নাহার শানু নেত্রকোনা সরকারি কলেজে পড়াকালে সানির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই বছরের শেষ দিকে তাঁদের বিয়ে হয়। বর্তমানে তাঁদের চার মাসের একটি কন্যাশিশু রয়েছে। শানুর বাবার বাড়ি একই শহরের সাতপাই নদের পাড় চক্ষু হাসপাতাল রোড এলাকায়।
শানুর দায়ের করা মামলা থেকে জানা গেছে, বিয়ের কয়েক মাস পর থেকে সানি বেকারত্ব দেখিয়ে শানুকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে টাকা ও আসবাবপত্র এনে দিতে চাপ দেন। এতে শানু অপারগতা প্রকাশ করলে সানি তাঁর ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান। সম্প্রতি তাঁর এই কাজে বড় বোন ন্যান্সি আর তাঁর স্বামী জায়েদ সাহায্য করেন। তাঁরা সানিকে উসকানি দেওয়া ছাড়াও শানুকে বিভিন্ন সময়ে মানসিক নির্যাতন চালাতেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ আগস্ট রাত নয়টার দিকে সানি শানুকে তাঁর বাবার বাড়ি থেকে পাঁচ লাখ টাকা এনে দিতে চাপ দেন। টাকা না দিলে তাঁকে তালাক দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে সানি শানুকে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যার চেষ্টা চালান। এ সময় শানুর চিৎকারে লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে ওই দিন রাতে শানুর বাবার বাড়ির লোকজন তাঁকে নিয়ে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাতে শানু বাদী হয়ে নেত্রকোনা মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১১(খ) ধারায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে ন্যান্সি বলেন, ‘শানু যা অভিযোগ করেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি বিশ্বাস করি, অবশ্যই তা প্রমাণিত হবে, আসল সত্যিটা বেরিয়ে আসবে। আইন আমাদের নারীদের অনেক সুযোগ দিয়েছে, কিন্তু কেউ কেউ তার অপব্যবহার করছে। আমি মনে করছি, শানু সেই সুযোগটি নিয়েছে।’