ঢাকা: দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতীকী অনশনের দুইদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামী ৮ই সেপ্টেম্বর ঢাকাসহ জেলা ও মহানগর সদরে মানববন্ধন। ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া ১২ই সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রতীকী অনশন। ঢাকায় রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বা মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতীক অনশনের জন্য রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বা গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চের জন্য আবেদন করেছে বিএনপি। গতকাল দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ ঘোষণা দেন। রিজভী বলেন, দেশের সর্বত্র কোটি কোটি মানুষ আজকে আওয়াজ তুলেছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তার মুক্তিই হচ্ছে জনগণের একমাত্র আকাঙ্ক্ষা।
আক্রোশের সর্বশেষ খেলায় মেতে উঠেছে সরকার
রুহুল কবির রিজভী বলেন, নজিরবিহীন ও বেআইনিভাবে মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কারাগারে আদালত বসিয়ে সরকার হানাদারি আক্রোশের সর্বশেষ খেলায় মেতে উঠেছে। খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ তাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়া হয়নি। সরকারি ও তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকরা তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার যে পরামর্শ দিয়েছেন তা বারবার অগ্রাহ্য করেছে সরকার। রিজভী বলেন, আওয়ামী প্রধান ও অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মনের ক্রোধ মিটাতে একেবারেই দিশাহারা। তাই খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় জড়িয়ে দিয়ে নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে সাজা দিয়েও মনের ঝাল মিটছে না। নিম্ন আদালতকে ব্যবহার করে আবারো গোপন বিচার প্রক্রিয়ায় তাকে হয়রানি করতে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। এখন খালেদা জিয়ার বিচারকাজ পরিচালিত হবে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে- যা আইনের পরিপন্থি ও স্বাধীন বিচার বিভাগের সর্বজনীন নীতির লঙ্ঘন। রিজভী বলেন, কারাগারে লোক চক্ষুর অন্তরালে আদালত ক্যাঙ্গারু কোর্টেরই দৃষ্টান্ত। এ সমস্ত আদালতে গায়েবি নির্দেশ আসে। দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্রের ধারা এখনো বহমান। ক্ষমতার অতি গূঢ় দুর্লভ স্বাদে তৃপ্ত সরকার ক্ষমতা ছাড়বেন না বলেই খালেদা জিয়াকে বন্দি করে রেখেছেন। তারা জানে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ হেরে যাবে। তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তাই শেখ হাসিনার মাথাব্যথার কারণ। সেজন্য শেখ হাসিনার স্বনির্মিত দুঃশাসনের শৃঙ্খল ভাঙতেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন নেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার আন্দোলন প্রবলভাবে বেগবান করতে হবে। গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনে জনগণের মুক্তি না হলে এদেশের মানুষ চিরদিন দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি হয়ে থাকবে।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না
রিজভী আহমেদ বলেন, নির্বাচন কমিশনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গত কয়েক দিন আগেই বলেছেন- আগামী ডিসেম্বরের শেষে দেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আপনি কিসের নির্বাচনের কথা বলছেন, আপনি কি ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা বলছেন? নির্বাচনের নামে সিলেকশনের কথা বলছেন? একতরফাভাবে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানানোর কথা বলছেন? সে নির্বাচন এদেশে আর হবে না। জনগণ সকল শক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই- আপনারা দেশে স্বাভাবিক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে পেরেছেন? দেশে সকল রাজনৈতিক দলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে কি? দেশে কি কোনো রাজনৈতিক সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজমান? অবৈধ সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশকে বিরোধী দলশূন্য করার প্রকল্প হাতে নিয়ে যেভাবে নির্বিচারে গ্রেপ্তার করছে, মামলা দিচ্ছে, আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে সাজা দিচ্ছে সেগুলো কিসের আলামত? তিনি বলেন, অবৈধ ভোটারবিহীন সরকারকে আবারো পরিষ্কার বলে দিতে চাই রাজনৈতিক কারণে সরকারের আক্রোশের শিকার হয়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি। তাকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে এবং নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
বিরোধী দল দমনে মামলা ও গ্রেপ্তারের হিড়িক
রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ৭১-এর ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খানের অপারেশন সার্চলাইটের মতো অবৈধ আওয়ামী সরকারের হানাদার বাহিনীরা দেশজুড়ে চালাচ্ছে জনগণের ওপর অন্যায় আগ্রাসন। মধ্যযুগে ইউরোপের ডাইনি শিকারের মতো আওয়ামী সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিএনপিসহ বিরোধী দল শিকারের অভিযান চালাচ্ছে। ঘটনা না ঘটলেও পুলিশ বিভিন্ন থানায় অগ্রিম মামলা দায়ের করে রেখে হাজার হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আর সারা দেশে চলছে মামলার ছড়াছড়ি, গ্রেপ্তার ও আসামি করার হিড়িক। তিনি বলেন, যেসব বিএনপি নেতা দেশে নেই বা অনেকে হজ পালন করতে মক্কায় অবস্থান করছেন তাদের নামেও মামলা দেয়া হয়েছে। গত ৫/৬ দিন থেকে শুরু হওয়া গ্রেপ্তার এখন ৫০০-এর কাছাকাছি। সরকার অজানা আশংকায় বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করে কারাগার ভরে ফেলেছে। বর্তমান ভোটারবিহীন সরকার সম্পূর্ণ অধঃপতিত ও গণবিরোধী। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন যাতে আবারো ভোটারবিহীন একতরফা করা যায় সেজন্য বিনা কারণে নানাধরনের হিংসা- প্রতিহিংসায় মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। নানাভাবে উস্কানিমূলক বক্তব্য ও পুলিশি শক্তির যথেচ্ছ ব্যবহারে রাজনৈতিক পরিবেশ সংঘাতময় করার চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মনে করেন- সুষ্ঠু ভোট ছাড়া, বহুদল ও মতের স্বাধীনতা ছাড়া সর্বোপরি গণতন্ত্র ছাড়া শুধুমাত্র তার প্রতি বিবেকহীন আনুগত্যে দেশের নাগরিকদের কল্যাণ নিহিত। তার বিরুদ্ধে যাতে কোনো দিক থেকে কোনোভাবেই কেউ যেন টুঁ- শব্দ না করতে পারে সেজন্যই পুলিশ গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলায় সয়লাব করে দিয়েছে সারা দেশ। ক্ষমতাসীন নেতা-মন্ত্রীদের হুমকি-ধামকি দেখে মনে হয় অন্ধকারে ভয়ে যেমন মানুষ চিৎকার করে তেমনি সরকারের পতনের ভয়ে আর্তচিৎকার করছে। এ সময় ঢাকা মহানগর, নারায়ণগঞ্জ, কুষ্টিয়া, নেত্রকোনা, নাটোর, বরিশাল, নরসিংদী, বগুড়া, ঝিনাইদহ, সিরাজগঞ্জ, খুলনাসহ সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের পুলিশি মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করার চিত্র তুলে ধরেন রিজভী। সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন ও শাহীন শওকত উপস্থিত ছিলেন।