বিশ্ব ফুটবল এর আর এক তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো

খেলা জাতীয় টপ নিউজ সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী সারাদেশ সারাবিশ্ব

ronaldo

রিদিকা হায়দার
সামাজিক যোগাযোগ সঙ্গী
গ্রাম বাংলা নিউজ২৪.কম
ঢাকা: সাফল্য তাঁর নিত্যসঙ্গী। খেলার আক্রমণাত্মক ধরন আর ধারাবাহিকতার কারণে তিনি বিশ্ব ফুটবলে এই সময়ের অন্যতম সেরা। তিনি পর্তুগাল জাতীয় দলের অধিনায়ক ও উইঙ্গার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো দস সান্তোস আভেরিও।

ভক্তরা তাঁকে সিআর-সেভেন নামেও ডাকে। তবে রোনালদো নামেই বেশি পরিচিত। জাতীয় দল বা ক্লাবকে ছাপিয়ে স্বমহিমায় ভাস্বর রোনালদো নামটা যেন ফুটবলেরই প্রতিশব্দ। মাঠে তিনি দুরন্ত যোদ্ধা। গোল করার পর তাঁর উদ্যাপন ভঙ্গিটা ধ্রুপদি রোমান গ্ল্যাডিয়েটরের মতো। সেদিন রিয়াল মাদ্রিদকে চ্যাম্পিয়নস লিগের দশম শিরোপা জিততে সাহায্য করে যেমন হয়ে গেলেন রোমান গ্ল্যাডিয়েটর! তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি, তবে আয়ের দিক দিয়ে তিনিই এগিয়ে। ২৯ বছর বয়সী ফরোয়ার্ড প্রতি সপ্তাহে আয় করেন ২ লাখ ৮৮ হাজার ব্রিটিশ পাউন্ড, বাংলাদেশি মুদ্রায় ৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা! উপার্জনের পাশাপাশি তিনি খ্যাতিও চান। আর তাই সব সময় নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলেন, ‘ফুটবলই আমার প্রথম ভালোবাসা। ফুটবল না থাকলে কী করতাম, জানি না। পা দুটি ঠিক থাকলে হয়তো আরও সাত-আট বছর খেলব। আশা করি ফুটবল ইতিহাসের কোনো বইয়ে পেলে-ম্যারাডোনার সঙ্গে আমাকে দেখতে পেয়েও সবাই চিনবে।’

ক্লাব ফুটবলে অর্জনের খাতাটা মোটামুটি পূর্ণ। একমাত্র অতৃপ্তি বিশ্বকাপ শিরোপা। পর্তুগালের হয়ে সেটি জিততে হলে রোনালদোকেই অবশ্য জ্বলে উঠতে হবে সর্বোচ্চ ঔজ্জ্বল্যে। ফুটবলসম্রাট পেলেও বলেছেন, এ মৌসুমে রোনালদোই বিশ্বসেরা।

নিজের অনন্য প্রতিভা আর বিপুল সম্ভাবনার পরিচয় তিনি দিয়েছিলেন শুরুতেই। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে খেলতে যুক্তরাজ্যে যান ২০০৩ সালে। সেখানে স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন রত্ন ঠিকই চিনেছিলেন। রোনালদোকে তাই নির্দ্বিধায় পরিয়ে দেন মর্যাদার ‘সাত’ নম্বর জার্সি। জর্জ বেস্ট, এরিক ক্যান্টোনা ও ডেভিড বেকহামদের মতো তারকাদের গায়ে শোভা পেত এই জার্সি৷ গুরুর মান ঠিকই রাখতে পেরেছেন রোনালদো। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব ছেড়ে ২০০৯ সালে তিনি রেকর্ড পরিমাণ মূল্য আট কোটি ব্রিটিশ পাউন্ডের বিনিময়ে যোগ দেন রিয়াল মাদ্রিদে। ২০০৮ ও ২০১৩ সালে জিতেছেন বিশ্বসেরা ফুটবলারের পুরস্কার ব্যালন ডি’অর। দুবার এই পুরস্কারজয়ী পর্তুগালের একমাত্র খেলোয়াড় তিনি। ২০০৮, ২০১১ ও ২০১৪ সালে তিনি জয় করেছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন শু। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি ক্যারিয়ারের ৪০০তম গোলটি করেছেন। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড রোনালদোর।

অফুরন্ত উদ্যম আর জয়ের অদম্য স্পৃহা নিয়ে খেলেন রোনালদো। নিজের সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘আমি নিজেকে বিজয়ী মনে করি। প্রায়ই আমি জিতি, হারি তার চেয়ে কম। সব সময় আলোচনার কেন্দ্রে থাকতে চাই। জানি ব্যাপারটা মোটেও সহজ নয়, কিন্তু জীবনে কোনোকিছুই তো সহজে আসে না। যদি তা-ই হতো, তবে আমরা কাঁদতে কাঁদতে জন্ম নিতাম না।’

নিজের সেরা দিনে রোনালদো একাই দলকে পৌঁছে দিতে পারেন জয়ের বন্দরে৷ তাই তিনি এত দামি। তাঁর উপস্থিতিতে ফুটবল মাঠ থাকে পরিপূর্ণ এবং তৈরি হয় ফুটবলের একটা আবেশ। এই রোনালদো একদিনে গড়ে ওঠেননি। শৈশব থেকে ধাপে ধাপে নিজের মেধা ও সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে সময়ের সেরা খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছেন তিনি। তাঁরও রয়েছে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন। সাফল্যের জন্য নিষ্ঠা ও কঠোর অধ্যবসায়। ফুটবল-দুনিয়াকে অনেক কিছুই দিয়েছেন তিনি, তবে নিশ্চয়ই বাকি রেখেছেন আরও মহিমান্বিত কিছু। আর সারা বিশ্বের তাবৎ ফুটবলপ্রেমী সেটাই দেখার অপেক্ষায়।
সূত্র: বিভিন্ন সময়ে প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন, একাধিক ওয়েবসাইট ও লুকা কাইয়োনির বই রোনালদো৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *