দুই সন্তানের সামনে মাকে মেঝেতে ফেলে কিল, ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে ডিবি পুলিশের দুই পুরুষ কর্মকর্তা। মায়ের আর্তনাদে তাকে বাঁচাতে ডিবি কর্মকর্তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে দুই ছেলে।
এরপর যোগ দেয় আশেপাশের লোকজন। সেখানেই গণধোলাইয়ের শিকার হয় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রবিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে খানপুর বরফকল খেয়াঘাট সংলগ্ন চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসী পার্কের সামনে মাইলাইফ কেয়ার ফাস্টফুড নামের একটি দোকানে পরিবার নিয়ে খেতে যান ডিবির দুই সদস্য এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুল। মিল্কসেইক খাওয়ার পর সেটি ভাল হয়নি দাবি করে বিল দিতে অপারগতা প্রকাশ করে এএসআই আমিনুল ও বকুল। এসময় তাদের সঙ্গে ফাস্টফুডটির মালিক ১১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সহ সভাপতি জালালের পুত্র আলামিন ও রবিন বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এসময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। যুবলীগ নেতা জালাল ও তার স্ত্রী রিনা ইসলাম ঘটনাস্থলে গেলে ডিবির দুই এএসআই মিলে তাদেরকে মারধর করে।
এসময় তারা জালালের স্ত্রী রিনা ইয়াসমিনকে কিল ঘুষি মারতে মারতে মেঝেতে ফেলে দেয়।
দুই কর্মকর্তার সাথে আগ্নেয়াস্ত্র থাকায় কিছুটা ভয় পেলেও পরে দুই ছেলে মা ইয়াসমীনকে বাঁচাতে এগিয়ে যায়। এসময় আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এসে ওই দুই এএসআইকেও বেধড়ক পিটুনি দেয়। খবর পেয়ে ডিবি’র পরিদর্শক মাসুদ, এসআই মিজান ও এসআই সায়েম ঘটনাস্থলে গেলে দ্বিতীয় দফা ইয়াসমীনসহ পুরো পরিবারকে লাঠিপেটা করা হয় বলে অভিযোগ। উত্তেজিত ডিবির সদস্যদের লাঠিপেটা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ পথচারীরাও। পরে স্থানীয়রা প্রতিরোধ গতে তুললে শুরু হয় ডিবির সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। ওই সময় সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ডিবি’র এসআই মিজান ও এসআই সায়েম এবং যুবলীগ নেতা জালাল, ছেলে আলামিন ও রবিনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
আহত ডিবি’র পরিদর্শক মাসুদ, এএসআই আমিনুল ও এএসআই বকুলসহ বাকিদের নগরীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে ফাস্ট ফুডের মালিক জালালের স্ত্রী রীনা ইসলাম জানান, আমার শরীরে শুধু আঘাতের চিহ্ন। ডিবি পুলিশের দুজন পুুরুষ সদস্য কিভাবে একজন মেয়ে মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে তা ভাবতেই অবাক লাগে। সারা শরীরে ব্যাথা। বিভিন্ন স্থান থেকে হুমকি আসছে আবার দেখে নেওয়া হবে। শুধু চুপ থাকতে বলা হচ্ছে।
এদিকে এ ঘটনায় নায়ারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ৪ কর্মকর্তা এমন হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ এনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন দোকানটির মালিক জালাল উদ্দিন। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চৌরঙ্গী ফ্যান্টাসি পার্কের মালিক আব্দুস সাত্তারকে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন ডিবির এএসআই আমিনুল (৪৮), বকুল (৫০), এসআই মিজান (৪৮) ও এসআই সায়েম (৪২)।
মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে মামলাটি দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি শেষে একজন সহকারী পুলিশ সুপার দিয়ে তদন্ত করিয়ে আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন। এর আগে সোমবার ভোরে এএসআই আমিনুল মূল ঘটনা আড়াল করে জালাল উদ্দিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে আসামি করে সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
এ মামলায় উল্লেখ করা হয়, রোববার রাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টহল দেয়ার সময়ে চৌরঙ্গী পার্কের সামনে দুই দল হকারদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও মারামারি ঘটে। তখন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে সেখানে গেলে ডিবির ওপর হামলা চালানো হয়। অপরদিকে ঘটনার পরপরই জেলা পুলিশ সুপার ৮ জনকে ডিবি থেকে মাসদাইরে জেলা পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করেন। এরা হলেন ডিবির পরিদর্শক মাসুদুর রহমান, এসআই মিজানুর রহমান ও আবু সায়েম, এএসআই আজিজুর রহমান, দেওয়ান তৌফিক, বকুল মিয়া, আমিনুল হক ও কনস্টেবল লুৎফর রহমান।