গাজীপুর: শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি লাশঘর(মর্গ) আছে। গাজীপুর জেলায় কারো অস্বাভাবিক মৃত্যু হলে লাশ ময়না তদন্তের জন্য এই মর্গে আসে। আইনী আনুষ্ঠানিকতা শেষে পরিবার লাশ নিয়ে যায়। আর যাদের পরিচয় পাওয়া যায় না তাদের লাশটি সরকারী গোরস্থানে দাফন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অজ্ঞাত লাশের দাফন সম্পন্ন হয় সরকারী খরচে। তাই এটা নিয়ে তেমন টানাটানি হয় না। কিন্তু ব্যবসা হয় যখন কোন পরিচয়ধারীর ব্যাক্তি খুন বা অপমৃত্যু হয়। লাশের ময়না তদন্ত রিপোর্ট হত্যার আসলে, হত্যা মামলা না আসলে অপমৃত্যু মামলা। যখন কোন ব্যাক্তি খুন হয়, তখন তার আত্মীয় স্বজন হত্যা মামলার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর যারা খুন করেন তারা ময়না তদন্ত রিপোর্টে হত্যা না আসার জন্য যোগাযোগ করেন।
যদি কোন ব্যাক্তি আত্মহত্যা করেন কিন্তু খুনের সন্দেহ থাকে, তবে মৃত ব্যাক্তির লোকজন মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন সত্য জানার জন্য। এই ক্ষেত্রে বাদী পক্ষের লোকজন সঠিক রিপোর্টের জন্য ও সন্দেহভাজন ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিরা আত্মরক্ষার জন্য যোগাযোগ করেন। অনেক সময় অপমৃত্যুর মামলা হলেও সন্দেহজনকভাবে এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে পুলিশ ৫৪ ধারায় আটক করে কারাগারে রাখে। এই সব ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য ৫৪ ধারায় আটক ব্যাক্তি বা ব্যাক্তিরা কারাগারে জামিনের অপেক্ষায় থাকেন। ময়না তদন্ত রিপোর্ট বের হওয়ার পর বন্দিরা জামিন পাবে কি না সিদ্ধান্ত দেয় আদালত। এটাই আইন।
দেখা যায়, এই ধরণের মারপ্যাচের মামলায় ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে চলে নানা ধরণের কারবার। কেউ আত্মরক্ষা করতে, কেউ অপরাধ ঢাকতে, কেউ ন্যায় বিচার পাইতে আবার কেউবা প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে দেনদরবার করেন। কোন অস্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে নানাগুঞ্জন পুরনো হলেও অনেকের মধ্যে সন্দেহ কাজ করে। ফলে তৈরী হয় নানা পাবলিক পারসেপশন।
শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি গোপন সূত্র জানায়, ময়না তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে একটি বানিজ্য হয়। এই বানিজ্যের মধ্যে জড়িত আছে একটি বড় সিন্ডিকেট। যারা এই সন্ডিকেটের মূখ্য ভূকিমায় তারা এক বছরেই বড় লোক হয়ে যায়। ফলে জনমনে সন্দেহ থাকাই স্বাভাবিক যে, মৃত ব্যাক্তিকে নিয়ে জীবিতরা কোন না কোন কিছু করেন।
চলবে–