আট বছরের ছেলেকে বাসে করে স্কুলে পাঠাতেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরের সিঁথির বাসিন্দা নৃত্যশিল্পী রুমা বসু। তিনি একদিন লক্ষ্য করেন, যে বাসে করে তার ছেলে এবং আরও ৩০টি বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেটি আদতে বাতিল বাস।
এরপরই বাস মালিক অভিজিৎ সরকারকে বিষয়টি জানান তারা।
বারবার অনুরোধে কাজ না হওয়াতে ব্যারাকপুর আরটিও এবং স্থানীয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানিয়ে লিখিত অভিযোগ করা হয়। এরপরই ক্রমাগত হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে কলকাতার সিঁথির এই গৃহবধূকে। শ্লীলতাহানি এবং অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার মত মারাত্মক হুমকিও দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন রুমা বসু।
কলকাতার সাউথ সিঁথির বিধান পার্কের একটি আবাসনের বাসিন্দা উত্তীয় এবং রুমা বসু। ছেলে ঔষ্ণীক বসু লিলুয়ার একটি নামী ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। ২০১৫ থেকে টানা দু’বছর ‘সরকার পুলকার অ্যান্ড ক্যাটেরিং সার্ভিসেসে’র অধীনস্থ একটি বাসে করে ঔষ্ণীক এবং আরও ৩০টি ছেলেমেয়ে স্কুলে যাতায়াত করত।
ঔষ্ণীকের পরিবারের দাবি, সেই বাসটি পুরানো এবং বাতিল হয়ে যাওয়া বাস। যার কোনরকম রুট পারমিশন নেই।
বিষয়টি জানতে পেরে সরকার পুলকারের মালিক অভিজিৎ সরকারকে বিষয়টি জানান এবং বাসটি পাল্টানোর কথা বলেন উত্তীয়। বাস মালিক প্রথমে বিষয়টি স্বীকারও করে নেয় বলে জানিয়েছেন বসু দম্পতি।
বারবার অনুরোধ করেও কাজ না হওয়াতে তারা ছেলে ঔষ্ণীককে সেই বাসে করে স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দেন। কিন্তু আরও ৩০ টি বাচ্চার ভবিষ্যতের কথা ভেবে পুরো বিষয়টি জানিয়ে এবছরেরই ২৭ জুনে ব্যারাকপুর আরটিওর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন বসু দম্পতি।
আরটিওর পক্ষে ব্যবস্থাও নেওয়া হয় বলে রুমা বসুর দাবি। আরটিওর পরামর্শে চলতি বছরের জুলাই মাসে স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিজিৎ সরকারকে বাসটি পরিবর্তন করতে বলে। ১৫ দিন পর নতুন বাসও দেন সরকার পুলকারের মালিক। কিন্তু বসু দম্পতির অভিযোগ পুরনো বাসটিকেই (ডব্লিউ বি ২৩ এ ৩৬২০) নতুন রঙ করে এবং নম্বর প্লেট বদলে আবারও ছাত্রদের স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসার কাজে ব্যবহার শুরু করেছে অভিযুক্ত বাস মালিক।
ব্যারাকপুর আরটিওর পর বর্ধমান আরটিওকে লিখিত অভিযোগ করেন বসু দম্পতি। ছাত্রের মা রুমা বসুর অভিযোগ, এরপরই শুরু হয় রাস্তায়-ঘাটে তাকে হুমকি দেওয়া। রুমা বসু বলেন, ‘‘ অভিজিৎ সরকার এবং তার সহযোগী জয়রাম সেবাশ্রমের কিছু ছেলে মিলে রাস্তাঘাটে আমাকে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারার হুমকি দেয়। পাশাপাশি আমাকে ‘নাচনেওয়ালি তোকে দেখে নেব’ বলেন। ’’ প্রসঙ্গত, রুমা বসু তনুশ্রীশঙ্কর ডান্স অ্যাকাডেমির একজন শিক্ষিকা।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর দিলীপ নারায়ণ বোসের দ্বারস্থ হন রুমা এবং তার স্বামী। রুমা দেবীর অভিযোগ কাউন্সিলরের সামনেই অভিজিৎ অ্যান্ড গ্যাং তাকে বলেন, ‘‘ শ্লীলতাহানি শুনেছিস, এবার দেখবি। ’’ নিজের ছেলে এবং আরও কয়েকটি বাচ্চার জন্য সুরক্ষিত স্কুল বাস চেয়ে কার্যত এখন ভয়ে ভয়ে দিন কাটাচ্ছেন রুমা বসু। ভয় পেলেও অবশ্য এই ঘটনার শেষ দেখার কথা বলছেন রুমা। পুরো বিষয়টি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে লিখিত অভিযোগ করার কথা বললেন রুমা।