গাজীপুর: রাজনৈতিক কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের একটি অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে। যে দল ক্ষমতায় যায় সেদল পুলিশকে অপব্যবহার করায় দিনে দিনে পুলিশের ভাবমূর্তি নিম্নমুখী। তবে সবাই খারাপ সেটা নয়। ভাল-মন্দ মিলিয়ে যেমন মানুষ তেমনি পুলিশের মধ্যেও ভাল-মন্দ আছে। একজন মানুষের সব যেমন ভাল থাকে না তেমনি সব মন্দও নয়। ভাল-মন্দের মানুষদের মধ্যেই সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধে। এটাই স্বাভাবিক। এই আশার একটি আলো পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার। এই মহিলা পুলিশ অফিসার তার কাজের জায়গায় তৃনমূল মানুষের মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন মর্মে খবর চাওড় হয়েছে। ভাল কাজের প্রশংসা ও মন্দ কাজের সমালোচনা করাই গণমাধ্যমের কাজ। আজকে তৃনমূলের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন নারী এসপির জীবন ও কর্ম নিয়ে প্রতিবেদন।
ফরিদপুরের মেয়ে শামসুন্নাহার। তার বাবা শামসুল হক ও মা আমেনা বেগম। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় শামসুন্নাহার। হতে চেয়েছিলেন আইনজীবী। পরিবার-স্বজনরাও সেই স্বপ্ন জ্বালিয়ে দিয়েছিল তার বুকে। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় আইন বিষয় পেলেন না, পড়তে হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। অনার্স করার সময়ই বিএনসিসি-তে নাম লেখান। তখন সেরা ১০ ক্যাডেটের একজন হিসেবে রাইডার ফ্লাইংয়ে সুযোগ পেয়ে যান। একজন পাইলটের সঙ্গে ওড়ার সুযোগ ছিল সেটি। বিএনসিসি-তে থাকার সময় প্যারেড করেছেন, অস্ত্র ধরেছেন। তাদের পোশাক, নিয়মশৃঙ্খলা দেখে তার মনে হলো- এমন কিছু হবো, পুলিশ হবো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বিসিএস দিলেন, মেধার জোরে উত্তীর্ণ হলেন। বিসিএস ক্যাডারে তার প্রথম পছন্দই ছিল পুলিশ।
সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগ দেন শামসুন্নাহার। মানিকগঞ্জ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দফতর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ২০০৯-২০১০ পর্যন্ত জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের দায়িত্বেও ছিলেন। এ ছাড়া ২০১১-২০১৪ পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে সুনাম কুড়িয়েছেন। কর্মতৎপরতার গুণে ৭ বার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেছেন। বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম), ৩ বার আইজি ব্যাজপ্রাপ্ত হন তিনি। ২০১৬ সালে পেয়েছেন উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড। শিক্ষাজীবনেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০০৫ সালে এমফিল করেন। পরে স্কলারশিপ পেয়ে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেন।
২০১৫ সালের জুনে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন শামসুন্নাহার। সৎ ও সাহসী পুলিশ কর্মকর্তা বলেই তার সুনাম রয়েছে পুলিশ বাহিনীতে। চাঁদপুরে ইতিমধ্যে মাদক, বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন রোধে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তিনি।
‘পুলিশ সপ্তাহ-২০১৬’ প্যারেডে প্রথম নারী হিসেবে নেতৃত্ব দিয়ে ইতিহাস গড়েন এসপি শামসুন্নাহার। মহানগর পুলিশ, রেঞ্জ পুলিশ, আর্মড পুলিশ ও র্যাবসহ পুলিশের ১৩টি দলের সহস্রাধিক সদস্যের প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি দেশজুড়ে প্রশংসিত হন। ২০১৭ সালেও পুলিশ সপ্তাহ প্যারেডে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বুধবার (১ আগস্ট) রাষ্টপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক আদেশে শামসুন্নাহারকে (পিপিএম) গাজীপুরের পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে।
এখন দেখা যাক, গাজীপুরে তিনি কি ভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে সেবা করেন। তার আগমন ও প্রস্থান যেন ফুলে ফুলে ভরে থাকে অতীতের মত, এমন আশাই করছেন গাজীপুর জেলা বাসী।