হাসপাতালে ‘ডাক্তার নেই’, গাছের নিচেই করতে হলো প্রসব

Slider নারী ও শিশু

দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সন্তান প্রসবের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় রিনা পারভীনকে (৩৫)। কিন্তু তাকে জানিয়ে দেয়া হয় হাসপাতালে ‘ডাক্তার নেই, চিকিৎসা হবে না’। পরে তাদের বের করে দেয় হাসপাতালে দুই নার্স।

শেষমেষ উপায়ন্তর না দেখে রিনাকে নিয়ে অন্য হাসপাতালে যেতে চান স্বজনরা। কিন্তু প্রসব ব্যথা এতটাই প্রবল ছিল যে ওই হাসপাতালের একটি গাছের নিচেই সন্তান প্রসব করেন রিনা। এ সময় চিৎকার করে ডাকার পরও কোনো সেবিকা বা হাসপাতালের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী তার সেবায় এগিয়ে আসেননি।

এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালটি ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।

ঘটনার শিকার রিনা পারভীন পার্বতীপুর উপজেলার হামিপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক আবু তাহেরের স্ত্রী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রসব ব্যথা শুরু হলে রিনা পারভীনকে রোববার ভোর সাড়ে ৫টায় ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। সে সময় হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক ছিলেন না। দায়িত্বরত নার্স রোজিনা আক্তার ও আফরোজা খাতুন রিনাকে চেকআপ না করেই ‘এখানে হবে না’ বলে পার্শ্ববর্তী টিএম হেলথ কেয়ার এমদাদ-সিতারা কিডনি সেন্টারে নিয়ে যেতে বলেন। স্বজনরা অন্তত একবার প্রসূতিকে দেখার অনুরোধ জানালে ওই দুই নার্স তাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। একপর্যায়ে প্রসূতি ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে জোরপূর্বক হাসপাতাল থেকে বের করে দেয়া হয়।

এতে স্বজনরা প্রসূতিকে নিয়ে বিপাকে পড়ে যান। কারণ প্রচণ্ড ব্যথায় প্রসূতিকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় স্বজনরা রোগীকে হাসপাতালের পাশে একটি কামরাঙা গাছতলায় তাড়াতাড়ি শুয়ে দেন। একপর্যায়ে সেখানেই খোলা আকাশের নিচে এক চা দোকানির স্ত্রীর সহযোগিতায় রিনা পারভীন একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেন। এসময় রিনা পারভীনের অন্য ছেলে রিপন চিৎকার করে নার্সদের ডাকাডাকি করলেও কেউ ঘটনাস্থলে আসেননি।

বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার শত শত মানুষ এসে হাসপাতাল ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। তারা এমন অমানবিক আচরণের জন্য দোষী নার্সদের শাস্তি দাবি করে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সঞ্চয় কুমার গুপ্ত বলেন, ‘হাসপাতালে কোনো মেডিকেল অফিসার নেই। তাই অনেক সময় সব চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয় না। তবে নার্সদের খারাপ আচরণের বিষয়টি নিয়ে সকালে আমরা মিটিং করেছি। এ বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষী নার্সদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলেন, ‘মা ও শিশু দুজনই সুস্থ আছে। দোষী নার্সদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *