কোথায় কী হচ্ছে সব নলেজে আছে———–ওবায়দুল কাদের

Slider রাজনীতি


ঢাকা: আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি সরকার হঠানোর চক্রান্তের অংশ হিসেবে ঢাকা অচলের কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে। সারা দেশ থেকে তাদের ক্যাডারদের এনে ঢাকা অচল কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করে যাচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা অচল করে বাংলাদেশ অচল করার পরিকল্পনা তাদের ছিল এবং আছে। কিন্তু তাদের অতীতের সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে। এই অপপ্রয়াসও ভেস্তে যাবে। ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পথে।

এখানেও তাদের মিশন ফেল। আর কত ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করবে? গতকাল ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি ও এক-এগারোর কুশীলবরা এক হয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। দেশে যখন শান্তিময় পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন এক-এগারোর কুশীলবরা রাজনৈতিক অঙ্গনে নেমে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অশুভ খেলায় মেতে উঠেছে। বিএনপি ওয়ান-ইলেভেনের সেই কুশীলবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্রের জাল বোনা যায় কিনা, সেই গোপন চক্রান্ত করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিরোধী শক্তির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা জানি কোথায় কোন মিটিং হচ্ছে। দেশে হচ্ছে, বিদেশে হচ্ছে। প্রথম প্রহরে হচ্ছে, মধ্য প্রহরে হচ্ছে। শেষ প্রহরে হচ্ছে, রাতের অন্ধকারে হচ্ছে। সরকার কিছু জানে না সেটা ভাবলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সবকিছুই আমরা জানি। সবকিছু সরকারের নলেজে আছে। কত ষড়যন্ত্র হয়েছে, কত বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থা নিলে কারো জেলের বাইরে থাকার কথা ছিল না। কিন্তু আমরা ধৈর্য ধরছি। তিনি বলেন, যত অপবাদ আসুক, যতই ষড়যন্ত্র হোক, কাজ করে দেশের উন্নয়ন করে তার জবাব দেবো। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে যতটা সম্ভব সহনশীল হবো। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে। গতকাল বিকালে ঢাকায় বিদেশি মিশনের কূটনীতিকদের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি কূটনীতিকদের ব্রিফ করতে চায়, করুক। তারা তো এটা করেই যাচ্ছে। এটা তাদের রেগুলার প্র্যাকটিস। নালিশ করা তাদের অভ্যাস। দেশে যখন আন্দোলন হয় তখন বিদেশিদের কাছে নালিশ করে। এটা তাদের পুরনো অভ্যাস।

জাতিসংঘের বিবৃতি বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘকে আমরা জানিয়েছি-এটা অপপ্রচার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে চিহ্নিত উস্কানি দাতাদের আইনের আওতায় আনতে তদন্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ভালো করে বিষয়টি তদন্ত করছি। আটঘাট বেঁধে তদন্ত হচ্ছে। যাতে জালে ধরা পড়ে আবার বেরিয়ে যেতে না পারে। তিনি বলেন, সবদোষ আওয়ামী লীগের, আমাদের ছাত্রলীগের। ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হয়েছে। এখনও তারা ভালো করে গুছিয়ে উঠতে পারেনি। এ এলাকায় ছাত্রলীগের (ধানমন্ডি) কোনো কমিটি ছিল না। যারা আহত হয়েছে তাদের বেশির ভাগই সাবেক ছাত্রনেতা, বিভিন্ন উপ-কমিটির সদস্য। তাদের মধ্যে ৪৬ জন আহত হয়েছে। আক্রান্ত হলাম আমরা কিন্তু এখন দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। আমাদেরকে আক্রমণকারী চিহ্নিত করে দলের এবং ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, কানাডার আদালতে প্রমাণিত সন্ত্রাসী দল বিএনপি তাদের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জন্য যে কলঙ্ক অর্জন করেছিল তা আজকে চাপিয়ে দিতে চেয়েছে আওয়ামী লীগের উপর, আমাদের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উপর। আমরা এ ঘৃণ্য অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই। তিনি বলেন, এ সময়ে যারা ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে চান, তারা টার্গেট করেন সাংবাদিকদের। কারণ সাংবাদিকদের টার্গেট করে ফায়দা তুলার চেষ্টা এদেশে অনেকবার হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এটা হয়। আমাদের দেশেও আমরা তা বারবার লক্ষ্য করেছি। ওবায়দুল কাদের বলেন, গতকাল আমি সাংবাদিকদের বলেছি, ছাত্রলীগের উপর অপবাদ আসছে। আপনারা আমাকে তালিকা দিন। কারা কারা এতে জড়িত আছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো। সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থাও আমরা নেবো। শেখ হাসিনার সরকারের আমলে অন্যায় ও অপকর্ম করে কেউ রেহাই পায় না। ছাত্রলীগের কেউ যদি সাংবাদিক নির্যাতনে জড়িত থাকে তাহলে আমরা কোনো অবস্থায় ছাড় দেবো না। এটা আমাদের নীতি এবং সিদ্ধান্ত। শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে কেউ রেহাই পায়নি, পাবেও না। তিনি বলেন, আমাদের এমপি, মেয়র জেলে আছেন। কোনো কোনো মন্ত্রীকে দুদকে হাজিরা দিতে হচ্ছে। তাই কেউ পার পেয়ে যাবে এটা ভাববেন না। বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা ক্ষমতার জন্য দেশকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে তাদের সঙ্গে কীভাবে ওয়ার্কিং আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে তা ভেবে পাই না। সোহেল তাজের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তিনি যে কোনো কারণে হোক আমাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে এখন একটু দূরে। এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। এ সময় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের করা একটি মন্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, তার কাছে জানতে চাই গুণ্ডাতন্ত্র কাকে বলে? চোখ উপড়ে আমাদের কর্মী স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী আরাফাত বাপ্পীর, সেই আহত কর্মীকে হাইজ্যাক করলেন ঘৃণ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে। আমাদের সেই রাজনৈতিক কর্মীর একটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। তাকে এখন চেন্নাই পাঠানোরে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আজ তাকে দেখতে যাবেন এবং তাঁর সুচিকিৎসার ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। চোখ উপড়ে ফেললো আমাদের ছেলের আর ভিন্ন উদ্দেশ্যে তাকে হাইজ্যাক করে উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে চোখ উপড়ে ফেলার অভিযোগ দেয়া হলো। আক্রান্ত হলাম আমরা, অথচ দেশে-বিদেশে সুপরিকল্পিতভাবে ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে আমাদের আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।

ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশে বিধ্বংসী রাজনীতি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। আজকে অনেকেই অনাবশ্যক কটু ভাষণ দিচ্ছে। কটু ভাষণ দিয়ে তাঁরা রাজনীতির দূষণ হয়ে আছে। রাজনীতিতে মতান্তর থাকবেই, কিন্তু সেই মতান্তরকে ছদ্মবেশী রাজনৈতিকরা বিধ্বংসী মনান্তরের সীমা অতিক্রমে নিয়ে যাচ্ছে। যা দেশের জাতি, গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের জন্য দুঃসংবাদ। তিনি বলেন, অন্দোলনে তাদের সফলতা দেখলাম না। আন্দোলনে ব্যর্থ এ দল কখনো কোটা সংস্কার আন্দোলনে কিন্তু সেখানেও তারা ব্যর্থ। এখন তারা শিক্ষার্থীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনের উপর ভর করেছে। সেটাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হওয়ার পথে। তিনি বলেন, নিরাপদ সড়কের আন্দোলন নিয়ে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের রাজনৈতিক খেলা আমরা লক্ষ্য করছি। এ আন্দোলনকে তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে তাদের ঘৃণ্য রাজনৈতিক পুঁজি হিসাবে ব্যবহার করতে না পারে, এজন্য দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে সকলকে সচেতন হতে হবে এবং দৃষ্টি রাখার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শেষে জনজীবনে স্বস্তি ফিরেছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, স্বস্তি ফিরে এসেছে। বাংলাদেশের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক। দুর্ভোগের সমাধান হতে চলেছে। সম্পূর্ণ না হলেও পরিবহন সংকট অনেকটা কেটেছে। দূরপাল্লার পরিবহনও স্বাভাবিক অবস্থায় চলে আসবে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানাবো। শিক্ষক ম্যানেজিং কমিটিকেও অভিনন্দন জানবো। প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে আন্দোলনের ইতি টেনে কালবিলম্ব না করে ঘরে ফিরে গেছে শিক্ষার্থীরা, পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেছে। গোটা জাতি স্বস্তি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাদের ৯ দফা দাবি শেখ হাসিনার সরকার মেনে নিয়েছে। বেশ কিছু দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন আইন ক্যাবিনেটের পর পার্লামেন্টে পাঠানো হয়েছে। এ দাবিটি পূরণ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের সব দাবি বাস্তবায়িত হয়ে যাবে। দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের চারজন এখন রিমান্ডে আছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর অবস্থানে রয়েছে। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় আন্ডারপাস নির্মাণের কাজ আগামী রোববার উদ্বোধন হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন। ওবায়দুল কাদের জানান, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর এই আন্ডারপাস নির্মাণ করবে। এই আন্ডারপাস ছাড়াও রাজধানীতে আরো দুটি আন্ডারপাস হবে উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ (মঙ্গলবার) আমাকে আরো দুটি আন্ডারপাস নির্মাণের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর মধ্যে একটি হবে সংসদ সদস্য ভবন (ন্যাম ভবন) থেকে সংসদ ভবন পর্যন্ত। অন্যটি হবে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দরের মূল কমপ্লেক্স পর্যন্ত।’ দ্রুত এর কাজ শুরু হবে বলেও কাদের জানান। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবি বাস্তবায়নের সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরেন। সড়কের বিশৃঙ্খলা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের জানান, সড়ক পরিবহন খাতে শৃঙ্খলা না আসা পর্যন্ত সরকারের সমন্বিত কর্মপ্রয়াস অব্যাহত থাকবে। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শ্রম বিষয়ক সম্পদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, উপ দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম রাব্বানী চিনু, আনোয়ার হোসেন, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *