ঢাকা: ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় দূরপাল্লা ও অন্যান্য সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বাসমালিকেরা আজ শুক্রবার বাস চলাচল বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এতে হাজারো যাত্রী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
বরিশাল: বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চল থেকে সব দূরপাল্লার পথে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বাসমালিকেরা। বরিশাল বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন আজ শুক্রবার সকালে বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে নিরাপত্তার স্বার্থে তাঁরা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের সব জেলা থেকে বাস চলাচল বন্ধ।
মেহেরপুর: মেহেরপুরে শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ফেডারেশনের সিদ্ধান্তে সকাল থেকে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া, মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর-মুজিবনগরে বাস চলাচল বন্ধ। দূরপাল্লার কোনো বাস সকাল থেকে ছেড়ে যায়নি। সড়কে রিকশা, লেগুনা, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা, ছোট ছোট কাভার্ড ভ্যান ও কিছু ব্যক্তিগত গাড়ি চলছে। গাংনী উপজেলা শহরের বাসিন্দা আবু হোসেন বলেন, তাঁর মাকে চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেলে নেওয়ার প্রয়োজন। দেড় ঘণ্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে থেকেও পরিবহন পাচ্ছেন না। তাঁর মতো এমন দুর্ভোগে পড়েছেন অনেকে।
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া জেলা বাস মিনিবাস কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, নিরাপত্তার কারণে তাঁরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, শ্রমিকনেতারা বাস চালাচ্ছে না। তাই স্থানীয় ও দূরপাল্লার সব ধরনের বাস বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাস চলবে। হঠাৎ বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানতেন না। সে কারণে অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন।
ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ ও আশপাশের জেলা থেকে বাস চলাচল বন্ধ। সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলবে বলে জানায় ময়মনসিংহ জেলা মটর মালিক সমিতি। সমিতির মহাসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, নিরাপত্তার কারণে দিনের বেলায় বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশ না আসা পর্যন্ত দিনের বেলায় বাস বন্ধ থাকবে।
রাজশাহী: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীরা সারা দেশে সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে। তাদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন রাজশাহীর বাসমালিকেরা। নিরাপত্তার কারণে তাঁরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মনজুর রহমান অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল একটি গোষ্ঠী ঢুকে পড়েছে। তারা বাসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। নিরাপত্তার কারণে তাঁরা বাস না চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে রাতে বাস চলবে। বাস না চলার এমন সিদ্ধান্তের কথা অনেকেই জানতেন না। সে কারণে অনেক যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। স্কুলশিক্ষিকা দুলারী খাতুন বাঘায় গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে রওনা দিয়েছিলেন। বাস না পেয়ে তিনি গন্তব্যে যেতে পারেননি।
টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল থেকেও সব সড়কপথে বাস চলাচল বন্ধ। বিভিন্ন বাস কাউন্টারের কর্মীরা জানান, টাঙ্গাইল জেলা বাস মালিক সমিতির সিদ্ধান্তে বাস চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। তাঁরা জানান, নিরাপত্তার অভাব থাকায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শঙ্কর সাহা নামে এক যাত্রী জানালেন, কাল ভোরে ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকিট কাটতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনো কাউন্টার টিকিট দিচ্ছে না। টিকিট না পেয়েই তিনি ফিরে যাচ্ছেন।
চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গায় যাত্রীবাহী বাস বন্ধ রয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের দুটি পরিবহন মালিক সমিতির দ্বন্দ্বের কারণে জেলা সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের আহ্বানে গতকাল বৃহস্পতিবার বাস ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা লাগাতার আন্দোলন করছে। আন্দোলনের ষষ্ঠ দিনে আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর আসাদ গেট, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় এসে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীরা গাড়ির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও কাগজপত্র পরীক্ষা করেছে। মন্ত্রী, সাংসদ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য বহনকারী গাড়িও এই যাচাইবাছাই থেকে বাদ যায়নি।
২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী আবদুল করিম রাজীব ও দিয়া খানম নিহত হয়। এর প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা।
সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ থেকে যাত্রী নিয়ে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সেজাউল ইসলাম বলেছেন, পরিবহন ধর্মঘট নয়, রাস্তায় বাস ভাঙচুর হতে পারে, তাই শ্রমিকেরা ভয়ে বাস চালাচ্ছেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে তাঁরা বাস ছাড়বেন না। যান না চলায় ভোগান্তির শিকার সদর উপজেলার সাপেলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘শ্রমিকেরা মুখে মুখে ভয়ের কথা বললেও আসলে তাঁরা পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পাল্টা হিসেবে এই কর্মসূচি দিয়েছেন। এটা তাঁদের কৌশল।’
চাঁদপুর: চাঁদপুর থেকেও সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সকাল ১০টার পর থেকে শ্রমিক পরিবহন নেতৃবৃন্দ চাঁদপুর থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা রুটের ১৮০টি বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এতে সেখানের যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বাস না পেয়ে এসব রুটের অনেক যাত্রীকে সিএনজি চালিত অটো রিকশায় করে গন্তব্যের দিকে রওনা দিতে দেখা যায়। তবে চাঁদপুর থেকে ঢাকাগামী লঞ্চ চলাচল চালু থাকায় ঢাকাগামী যাত্রীদের তেমন সমস্যা হচ্ছে না। কুমিল্লাগামী যাত্রীরাও চাঁদপুর-লাকসাম রেল রুট চালু থাকায় সেটি ব্যবহার করছেন।