বৃষ্টি উপেক্ষা করে আজও শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছে রাজধানীর রাজপথে। এ অবস্থায় অচল হয়ে পড়েছে রাজধানী ঢাকা। সকালে গাড়ি চলাচল করলেও বেলা ১১টার পর তা একেবারে কমে আসে। ওদিকে রাজপথের দখল নিয়ে শিক্ষার্থীরা গাড়ির ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ বিভিন্ন কাগজপত্র চেক করছে। শুরুটা হয় সকাল ১০ টায়। এ সময় কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে তাতী বাজারের দিকে প্রথম বিক্ষোভ মিছিলটি যায়। ১০টার আগে থেকেই লক্ষ্মীবাজারের কবি নজরুল সরকারি কলেজের সামনে হাজির হতে থাকে আশপাশের স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তারা নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে কবি নজরুল কলেজের সামনে থেকে তাতি বাজারের দিকে যায মিছিল নিয়ে। মিছিল থেকে তাদের ৯ দফা দাবির সমর্থনে নানা শ্লোগান দিচ্ছে। বেলা ১১টার পর শাহবাগ, কাকরাইল, সাইন্সল্যাব, ফার্মগেট, মিরপুর, বাড্ডা, মহাখালী এলাকায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। তারা বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাস্তায় চলাচল করা যানবাহনের ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে থাকে। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের গাড়ি আটকে রাখে সড়কের পাশে। ওদিকে কাজী নজরুল ইসলাম এ্যভিনিউ সড়কে যান চলাচল একেবারেই কমে যায়। ফার্মগেটে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে বসে পড়েন। বৃষ্টির মধ্যেই তারা নিরাপদ সড়ক চাই দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। শাহবাগ চত্ত্বরও শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত। ছাত্র-পুলিশ ভাই ভাই, উই ওয়ান্ট জাস্টিস ইত্যাদি শ্লোগান দিচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা সেখানে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করছেন। তাদের একটাই কথা নয় দফা দাবি মানলে তারা ঘরে ফিরে যাবে। তারা আর তাদের ভাই বোনের করুণ মৃত্যু দেখতে চায়না। এর আগে আশপাশের বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন। মিরপুর থেকে আজিমপুর রাস্তায়ও শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়েছেন। তারা বিভিন্ন গাড়ির চালকের লাইসেন্স চেক করছেন। এছাড়া বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড্ডা নতুন বাজার এলাকায় আলাতুন্নেসা সাউথ পয়েন্টে ইউআইটিএসের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন। তারা বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় বসে পড়েন। সেখানেই তাদের দাবির পক্ষে শ্লোগান দিচ্ছেন। অপরদিকে মহাখালী থেকে ফার্মগেট ও সাতরাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ করছে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আজ সারাদেশে স্কুল কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল । গতকাল এক আদেশে এ বন্ধ ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে।
শাহবাগে শিক্ষার্থীদের মিছিল, বিক্ষোভ
বেলা ১১টার পর শাহবাগে আসতে থাকে একে একে মিছিল। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্লেকার্ড বহন করে মিছিল নিয়ে শাহবাগে জড়ো হন। তারা নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। একদিকে ছাত্ররা বিভিন্ন গাড়ির কাগজপত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক করতে থাকে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে গাড়ি ছেড়ে দিচ্ছে তারা। অন্যথায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে গাড়ি রাস্তার পাশে আটকে রাখছে। এ অবস্থায় বৃষ্টি এলেও তারা ভিজে তাদের কর্মসূচি পালন করে যায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার স্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তারা রাজপথে এ কর্মসূচি পালন করে যাবে।
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বাস রেখে ব্যারিকেড
সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ও নিউমার্কেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাস্তায় বাস রেখে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। বেলা পৌনে ১১টার দিকে একদল শিক্ষার্থী সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও নিউমার্কেট এলাকায় এসে যানবাহন থামিয়ে চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের কাগজ আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে থাকে। এ সময় যেসব চালকের কাছে বৈধ লাইসেন্স পাওয়া গেছে, তাদের ছেড়ে দেয় তারা। তুমুল বৃষ্টির মধ্যে ভিজে ভিজে কাজ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। বেলা ১১টার দিকে উইনার পরিবহনের একটি বাস আটকায় শিক্ষার্থীরা। বাসটি যাত্রী নিয়ে গুলশান থেকে আজিমপুরের দিকে যাচ্ছিল। ল্যাব এইডের সামনে আসার পর শিক্ষার্থীরা বাসটি থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায়। চালক কোনো বৈধ লাইসেন্স দেখাতে না পারায় বাসটি যেতে দেয়া হয়নি। ঘুরিয়ে দেয়া হয়। পরে বিহঙ্গ পরিবহনের আরেকটি বাস থামিয়ে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা। চালক লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। তখন চালককে নামিয়ে দিয়ে নিজেরাই বাসটি ঠেলে সরিয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। বাসে থাকা যাত্রীদেরও নামিয়ে দেয়া হয়। এরপর বাসটি ঠেলে নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সামনে নিয়ে ব্যারিকেড দেয় তারা।
এর আগে ল্যাব এইডের ৩ নম্বর ক্রসিয়ে কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ তরিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। বেলা পৌনে ১১টার সময় একদল শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমেছে। তারা বিভিন্ন যানবাহনের ড্রাইভিং ও ফিটনেস লাইসেন্স আছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছে। এ সময় তাদের কোনো ধরনের বাধা দেয়নি ট্রাফিক পুলিশ।
মিরপুর সড়কজুড়ে অবস্থান
পঞ্চম দিনের মতো রাজধানীর মিরপুর সড়কজুড়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা।
সকাল ১০টা থেকে মিরপুর সড়কের সায়েন্স ল্যাবরেটরি, লালমাটিয়া, আসাদগেট ও সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের সামনে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। অবরোধ চলছে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনের মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতেও। বুধবারের ধারাবাহিকতায় আজও শিক্ষার্থীরা গাড়ির ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা করছেন। যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক রয়েছে, সেগুলো ছেড়ে দিচ্ছেন। বাকিগুলো আটকে দেয়া হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ থামাতে আজ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। কিন্তু আজও স্কুল পোশাক ও ব্যাজ পরা শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসেছেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ধানম-ির ২৭ নম্বর থেকে সংসদ ভবনের দিকে কিছু গাড়ি যেতে দেয়া হচ্ছে। তবে সেগুলোরও ফিটনেস ও লাইসেন্স পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ কারণে সড়কে খুবই কম গাড়ির দেখা মিলছে। এতে যাত্রীদের পড়তে হয়েছে ভোগান্তিতে। নিরুপায় হয়েও অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। গণভবন ক্রসিংয়ে আছেন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর ওসমান গনি। তিনি বলেন, আমি যেখানে আছি, সেখানে সমস্যা নেই। তবে আড়ংয়ের সামনে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আছেন। তারা বিক্ষোভ করছেন। কোথাও কোথাও গাড়ি পরীক্ষা করছেন। গাড়িতে সমস্যা দেখা দিলে আমাদের ডেকে নিচ্ছেন। আমরা মামলা করে দিচ্ছি। তবে কোনো ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে না। ট্রাফিক ইন্সপেক্টর এখলাস বলেন, শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করায় মানিক মিয়া সড়ক বন্ধ রয়েছে। সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। এতে মিরপুর রোডের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
ঢাকার বাইরেও শিক্ষার্থীরা মাঠে
রাজধানীল বাইরেও শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলন চলছে। সাভার, গাজীপুর, টঙ্গী, রংপুর, ফেনী, কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা রাজপথে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করছে। সেখানেও তারা গাড়ির কাগজপত্র চেক করছেন। বিভিন্ন শ্লোগান দিচ্ছেন।