বরিশালের উজিরপুরের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যের প্রতীক বানর এখন বিলুপ্তির পথে। সরকারিভাবে তাদের জন্য কোন খাবারের ব্যবস্থা না থাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের গাছের ফল খেয়ে কোনমতে দিন পার করছে বানরগুলি। আর এখানেই যত বিপত্তি। কেউ কেউ এতে বিরক্ত হয়ে ঘৃণ্য পথ অবলম্বন করছে। গত দুইদিনে মানুষের বিষ মেশানো ফল খেয়ে মারা গেছে ১২টি বানর। এভাবে চলতে থাকলে উজিরপুরের ঐতিহ্য এই বানরগুলির বিলুপ্তি সময়ের ব্যাপার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
জেলা সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে উজিরপুরের বনে-জঙ্গলে কীভাবে বানর এসেছিল তার কোন সু-নির্দিষ্ট তথ্য না থাকলেও প্রবীন বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তারা বানরের পাল দেখে আসছেন। এ অঞ্চলে কোন চিড়িয়াখানা না থাকায় পর্যটকরা বানরের কসরত দেখতে ছুটে যেতেন উজিরপুরে। কিন্তু বানরের বংশ বিস্তার কিংবা তাদের রক্ষার কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারিভাবে। অভুক্ত বানরগুলো ক্ষুধার তাড়নায় অনেক সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে ঢুকে খাবার চুরি করে খাচ্ছে। কখনো গাছের মৌসুমী ফলমুল খেয়ে বেঁচে আছে। কিন্তু ইদানিং মৌসুমী ফলের সংকট থাকায় দুর্বল এবং কঙ্কালসার হয়ে গেছে বানরগুলো।
উজিরপুরবাসীর কাছে বানরের উপদ্রব পুরনো হলেও গত শনিবার জঘন্য পন্থা অবলম্বন করে ইচলাদী গ্রামের ইউসুফ মোল্লা। এলাকাবাসী জানান, ইউসুফ কলার সাথে কীটনাশক মিশিয়ে ধানক্ষেতে রাখলে সেগুলো খেয়ে মারা যায় অন্তত ১২টি বানর।
ওই গ্রামের জালাল ফরাজী জানান, গত শনিবার তার পান বরজে কয়েকটি বানরের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে এবং পাগলের মত আচরণ করতে দেখেন তিনি। পরদিন রবিবার সকালে মৃত অবস্থায় দুইটি বানর পড়ে থাকতে দেখেন পানের বরজে। এরপর পরিবেশ দুষণের আশঙ্কায় তিনি মৃত বানর দু’টিকে কচুরিপানা দিয়ে চাঁপা দেন। আরো কয়েকটি মৃত বানর স্থানীয়রা নদীতে ফেলে দেন এবং কেউ কেউ মাটি চাঁপা দেন। এক গৃহবধূ জানান, তাদের বাগানেও বানর মরে পড়েছিল। এলাকার ছেলেরা সেগুলো নদীতে ফেলে দিয়েছে।
উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন মুঠোফোনে বলেন, বিষ প্রয়োগে বানর মারা যাওয়ার খবর তাকে কেউ অবহিত করেনি। গনমাধ্যমের কাছ থেকে খবর পেয়ে তিনি বন বিভাগকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাণীসম্পদ রক্ষা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
বানরের খাবারের বিষয়ে ইউএনও বলেন, বানরের জন্য সরকারি কোন বরাদ্দ নেই। তবে আগের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে খাবারের বরাদ্দ আনতেন বলে তিনি শুনেছেন। তিনি যোগদান করার পর এলাকার কেউ বানরের খাবারের জন্য কোন আবেদন করেনি। তারপরও এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে কথা বলে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।