বিশেষ প্রতিবদেন: সাম্প্রতিক সময়ে ঘোষিত তপসিল অনুসারে ৫টি সিটিকরপোরেশনের নির্বাচন শেষ হয়ে গেলো বলা চলে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে আর কোন নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ফলে সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় আসন্ন জাতীয় নির্বাচন হবে এটাই আপাতত মনে করতে হবে। যদি তাই হয়, তবে আমরা জেনে গেছি গণতন্ত্রের গতিপথ।
স্থানীয় সরকারের ৫টি নির্বাচন পর্যবেক্ষন করে বলা যায়, এখন সকলের দৃষ্টি সিলেটের দিকে। গতকাল অনুষ্ঠিত ৩টি সিটি নির্বাচনে কৌশলে বা প্রকাশ্যে নির্বাচন বয়কট করেছে বিএনপি সহ অনেক দলীয় প্রার্থী। রাজশাহী ও বরিশালের নির্বাচনী ফলাফল বলে দেয় সিলেটে ধানের শীষ এত ভোট পেল কি ভাবে? সিলেটে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কামরানের নিজ কেন্দ্রেই বা তিনি ফেল করলেন কি করে? আর বরিশালের বর্তমান মেয়র বিএনপির হলেও এই সিটিতে বিএনপি ১৩০৪১ ভোট পায় কি ভাবে? বিজয়ী প্রার্থীর ১০৯৮০৩ ভোটের বিপরীতে বর্তমান মেয়রের পক্ষে ৮গুণ ভোট কম পাওয়া বরিশালে ভোট লুটের অভিযোগ প্রমান করে।
এদিকে রাজশাহীতে ধানের শীষের প্রার্থী দুপুরেই ব্যালট শেষ হয়ে যাওয়ার অভিযোগে নিজের ভোটই দেননি। তাহলে তিনি ৭৮৪৯২ ভোট পেলেন কি ভাবে?
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ভোট গণনার সময় হার্ট অ্যাটাকে এক সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহানগরীর ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের ছোটবনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গণনার সময় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটে। মৃত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের নাম মো. খালেকুজ্জামান। তিনি পবা উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা।
সিলেটে দিনভর কেন্দ্র লুট, সাংবাদিক ও ম্যাজিষ্ট্রেটকে আহত করা ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য অনুসারে “বিএনপির লোকই নেই” বলে মন্তব্য, আরিফুল হকের প্রাথমিক বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তাহলে ধানের শীষের প্রার্থী ৯০৪৯৬ ভোট পেলেন কোথায়? সব মিলিয়ে গতকালের নির্বাচনী সমীকরণ সকল হিসেবকে গরমিল করে দেয়।
নানা মহলের অভিমত হল, ৫সিটি নির্বাচনের মধ্যে সিলেটে এখন তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা চলছে। সিলেটে এমন পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে যে, সকলের দৃষ্টি সিলেট থেকে যখন ফিরবে, তখন জাতীয় নির্বাচনের তপসিল ঘোষনা হয়ে যাবে। ফলে বাকী ৪ সিটি নির্বাচনের নিয়ম-অনিয়ম নিয়ে আর তেমন আলোচনা-সমালোচনা থাকবে না। নিঃসন্দেহে আওয়ামীলীগ প্রধানের এই রাজনৈতিক কৌশল আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথকে মসৃন করবে।
সাধারণ মানুষ বলছেন, সম্প্রতি পাকিস্তানে একটি নির্বাচন হয়ে গেছে। সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেনি বলে অভিযোগ থাকলেও বিজয়ী ইমরান খান ১১ আগষ্ট সরকার প্রধান হিসেবে শপথ নিচ্ছেন। আমাদের আরেক প্রতিবেশী দেশ ভারতের দিকে যদি আমরা তাকাই, তবে বলতে হবে ভারতের গণতন্ত্র আমাদের দেশে নেই। কারণ ভারতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচন নিয়ে কোন দলেরই অভিযোগ থাকে না। ভারতের গণতন্ত্র প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর নয়, জনগণ নির্ভর। আর পাকিস্তানেরর গণতন্ত্র ঠিক উল্টো। পাকিস্তানের গণতন্ত্র প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর, জনগন নির্ভর নয়। আর আমাদের দেশের গণতন্ত্র বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর। আমরা জনগনের দোহাই দিয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর গণতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছি। স্বৈরশাসন নয়, ভিন্ন স্টাইলে জনগনের উপর নির্ভরতা দেখিয়ে আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী নির্ভর গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। সদ্য সমাপ্ত সিটি নির্বাচন ও নির্বাচনী ফলাফল সবই অস্বাভাবিক হওয়ায় আমরা ধরেই নিচ্ছি, এই আদলেই হচ্ছে আমাদের জাতীয় নির্বাচন।
জাতির দাবী, গণতন্ত্রকে পুঁজি করে অদ্ভুদ গণতন্ত্র( মালিক রেখে কর্মচারী নির্ভর গণতন্ত্র) প্রতিষ্ঠার কোন দরকার নেই। সমঝোতার মাধ্যমে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হলে বর্তমান সরকারের মেয়াদ বৃদ্ধি করলেই ভাল হয়। মানুষ এখন উন্নয়ন চায়, ভোট চায় না। কারণ ভোটের জায়গায় ভোট থাকে না। ভোট এখন অস্বাভাবিক ফল দেয়। তাই উন্নয়নই এখন ভোট।