নজরুল ইসলাম তোফা:: রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে এখন জোরদার ভাবে গণসংযোগ করছেন আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ ব্যক্তি, উন্নয়নের কারিগর মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। যত দিন যাচ্ছে ততই যেন “রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন” নির্বাচনের হালচাল যেন তাঁর নৌকা মার্কা প্রতীকের পক্ষে চলে আসছে। এমন এ লক্ষণীয় পরিবেশটার কারণ উৎঘাটন করতে গিয়ে ধরা পড়ছে বিএনপির নেতা, মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ক্ষমতায় থাকার সময়ে কোন প্রকার উন্নয়ন করবেননি। তাঁরা বর্তমানে প্রচার প্রচারণায় অনেকাংশেই পিছিয়ে।
দেখা গেছে, এক সময়ে রাজশাহী মানেই বিএনপি ছিল, সেই রূপরেখা এখন আর নেই, অনেকাংশেই পরিবর্তনশীল মনে হচ্ছে। বলা যায়, রাজশাহীর জন সাধারণ এখন দলবদ্ধ ভাবেই উন্নয়ন চায়, তাই তো বিএনপির সেই মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল অনেক খানি বিপাকেই রয়েছেন। এখন যেন রাজশাহীর জনগণ মিথ্যাচারকে পছন্দ করছেন না, তারা উপলব্ধি করতেই পারছেন কোনটা সত্য আর মিথ্যা। দুঃখজনক হলেও সত্য, রাজশাহীতে এখন আর বিএনপির সঙ্গে ২০ দলীয় নেতৃত্বাধীন জোটের অন্য শরিক দলগুলো স্বপক্ষে মাঠে নেই। নগরীর দুই-তৃতীয়াংশ ওয়ার্ডে নেই ধানের শীষের পোস্টার। প্রচারে পিছিয়ে থাকা বুলবুলের সামনে এখন নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন নিজস্ব বিএনপি দলের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। কাউন্সিলর পদের বিএনপি অনেক প্রার্থী এরই মধ্যে সমঝোতা করেই ফেলেছেন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যেই নৌকার পক্ষে ভোট চাইতেও শুরু করেছেন। অন্যরাও নিজেদের জয় নিশ্চিত করতে মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়া থেকে বিরত থাকছেন।
উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, রাজশাহী নগরীর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড অর্থাৎ দরিখরবোনায় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় দলের মেয়র পদপ্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের পক্ষে ভোট চান খুলনার বর্তমানের নির্বাচিত মেয়র জনাব তালুকদার আব্দুল খালেক। সেই সভাতেই উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন ওই ওয়ার্ডের বিএনপির নেতা ও বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুস সোবহান লিটন। তিনি এবারও কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ. এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনকে সমর্থন দিয়েছেন আরও বেশ কিছু বিএনপি নেতা কিংবা বর্তমানের কাউন্সিলরা। “মনির হোসেন” নামের এক বিএনপি কাউন্সিল পদপ্রার্থী গত শুক্রবারের সন্ধ্যায় নগরের ১৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে লিটনকে সমর্থন দিযেছেন এবং নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালানোর জন্য লিটনের কাছ থেকে প্রচারপত্র গ্রহন করেছেন। তিনি রাসিকের ১৮ নং ওয়ার্ডে বর্তমানে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক ও ১৯ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে তিনি ১৮ নং ওয়ার্ডেরই কাউন্সিলর প্রার্থী। নিজের পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালানোর পাশাপাশি খায়রুজ্জামান লিটনের প্রতীক নৌকা মার্কায় ভোট চাচ্ছেন। মনির হোসেন বলেন, “আমি আসলেই দল করি বিএনপি, কিন্তু রাজশাহীর উন্নয়নে লিটন ভাইকে ভোট দিবো, আমার পরিবারের সবাই লিটন ভাইকে ভোট দেবে।’
মনির আরো বলেছেন, ”ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। রাজশাহীর উন্নয়নের জন্যে এখানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। তাছাড়া যোগ্যতারও একটি বিষয় আছে। লিটন ভাই যোগ্য মানুষ, তিনি রাজশাহীর উন্নয়ন করতে পারবেন।”
আবার বিএনপির একটি গুরুত্বপূর্ণ টিম, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হাতে এক নৌকা তুলে দিয়ে তাকে সমর্থন দিয়েছেন দলের শতাধীক নেতা কর্মী। গত মঙ্গলবারে মহানগর বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ১০ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক, আলী আশিফ আফজা রবিনের নেতৃত্বেই এমন শতাধিক নেতাকর্মীরা লিটনকে সমর্থন দিযেছেন। এই সময় তারা লিটনকে ভোট দেওয়াসহ নৌকার পক্ষে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
পথে ঘাটে, চা স্টলে, বিভিন্ন দোকানে নানান গল্প ও আড্ডায় উঠে আসছে ভয়াবহ বোমা হামলার কথা।রাজশাহীর এই মহা নগরীতে বিএনপি মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের প্রচারণায় তার দলের কর্মীরা বোমা হামলা করেছে। এমন ঘটনা নিয়ে সেই কর্মী বা নেতা দ্বয়ের কথোপকথনের অডিওটা ফাঁস হয়েছে। সেই অডিওটাও এখন গোয়েন্দাদের হাতে রয়েছে। এ কথপোকথনের ভিত্তিতেই শনিবার রাতে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেফতার করাও হয়েছে। নিজেদের দলের লোকজন দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে বলে দলের কেন্দ্রীয় সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলামকেই মোবাইল ফোনে জানান মন্টু। এই কথপোকথনের সময় ছিল এক মিনিট ৪৪ সেকেন্ডের।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, মতিউর রহমান মন্টু এবং তাইফুল ইসলাম টিপু সেই ফোনালাপে যাদের কথা বলেছেন, তাদের এক জনের নাম শাহীন শওকত। তিনি বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। আর এই হামলাকারীর সঙ্গে আরও এক হামলাকারী সে হচ্ছেন নাটোরের খালেক। সুতরাং বলাই যায়, এমন বেশকিছু কারণেই যেন বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল এমন এ নির্বাচনে পিছিয়ে আর আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের জনপ্রিয় মেয়র পদপ্রার্থী এ. এইচ. এম খায়রুজ্জামান লিটন এগিয়ে রয়েছেন। শাহমখদুম কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. তসিকুল ইসলাম রাজা। তাঁর মেয়র পদপ্রার্থী বুলবুলকে নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে বলেন, সাবেক মেয়র বুলবুল এবং তার দল বিএনপি বলছেন যে তাকে মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে জেল-জুলুম করা হয়েছে, কোন প্রকারের কাজ করতে দেয়া হয়নি। কিন্তু এ বছরের ২৭ জুন জনাব বুলবুল মেয়রের দায়িত্ব সমর্পণকালে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, তিনি মাত্র ২৬মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থাৎ দুই বছরের বেশি কাল। মোটেও কম সময় নয়। এই ২৬ মাস তিনি কী করলেন। বুলবুল নিরবিচ্ছিন্ন দায়িত্ব পালন করেও ফলাফল হলো- রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনকে ৪৮ কোটি টাকা ঋণে ডুবিয়ে রেখে গেলেন। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো স্বীকার করেছেন যে, ফান্ড না থাকার কারণেই ঈদ সামনে রেখে কর্মচারীদের বেতন ভাতা দিতে পারেননি। তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, ওই কর্মচারীদের বেতন ভাতার টাকা এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশা বিশেষ উদ্যোগে ব্যবস্থা করেছিলেন। তা-ই যদি হয়- যিনি দরিদ্র কর্মচারীদের প্রতি দরদি হয়ে এমন একটি ব্যবস্থা করতে পারেন সেই ক্ষেত্রে এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটনই মেয়রের যোগ্য ব্যক্তি ও তাঁরই প্রচার প্রচারণা অনেকাংশেই এগিয়ে রয়েছে।
লেখক:
নজরুল ইসলাম তোফা, টিভি ও মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রশিল্পী, সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং প্রভাষক।