ইতিহাসবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলি খান বলেছেন, বাংলায় গণ-ধর্মান্তরের কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। গণ-ধর্মান্তরের অনুকল্প যদি ঠিক হতো, তবে স্বল্প সময়েই বাংলায় ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়ত।
কিন্তু প্রায় ৭০০ বছর লেগেছে এখানে মুসলমান প্রাধান্য স্থাপন করতে। এখানে ইসলাম প্রচারিত হয়েছে ব্যক্তিগত পর্যায়ে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে গণ-ধর্মান্তরের উদাহরণ মেলে। পাঞ্জাবে পুরো উপজাতি নব-ধর্মে দীক্ষা নিয়েছে।
শনিবার রাজধানীর জাতীয় যাদুঘর মিলনায়তনে ‘বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার: ঐতিহাসিক প্রশ্নসমূহের পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক একক বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন এই গুণিজন বর্ক্তৃতার আয়োজন করে।
ড. আকবর আলি খান ৬১ পৃষ্ঠার লিখিত গবেষণা পত্রের বিশেষ বিশেষ অংশ পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনির্ভাসিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. আহরার আহমদ।
এছাড়া ড. আকবর আলি খানের পরিচিত পাঠ করেন সাবেক সচিব আমিনুল ইসলাম ভুইয়া।
বক্তব্যের শুরুতে ড. আকবর আলি খান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুদের গুরু অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক আজকে স্বাধীন বাংলাদেশে ‘জাতির গুরু’ হিসেবে নন্দিত। ত্রিশের দশকে ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে যে ‘বুদ্ধির মুক্তি’ আন্দোলন শুরু হয়েছিল, অধ্যাপক রাজ্জাক ছিলেন তার শেষ আলোকবর্তিকা। দুভার্গ্যবশত বাংলাদেশ এখন উৎকর্ষেও সাধনার পরিবেশ অনুকূল নয়। আমাদের সমাজ গ্রেশামবিধির ব্যমোতে আক্রান্ত। অর্থনীতিতে গ্রেশামের সূত্র অনুসারে, বাজারে খারাপ ও ভালো মুদ্রা একসঙ্গে চালু থাকলে ভালো মুদ্রা খারাপ মুদ্রাকে তাড়িয়ে বাজার দখল করে। বাংলাদেশেও অনেকক্ষেত্রে অযোগ্য ব্যক্তিরা যোগ্য ব্যক্তিদেরকে তাড়িয়ে আসন দখল করে আছে।
বাংলায় ইসলাম ধর্মের প্রসার প্রসঙ্গে আকবর আলি খান বলেন, ১৮৭১ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম আদম শুমারি সম্পন্ন হওয়ার আগে মনে করা হতো বাংলা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের মতো একটি হিন্দু প্রধান প্রদেশ। কিন্তু প্রথম শুমারিতে প্রমাণ হলো, বাংলার প্রায় ৫০ শতাংশ মুসলমান। বিশ্বেও ২০ কোটি মুসলামানের মধ্যে বাংলায় এককোটি ৭৬ লাখ। তিনি একটি সারণিতে ১৯০০ সালে বাংলা প্রদেশে ও মুসলিম দেশসমুহের জনসংখ্যার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরে বলেন, ১৯০১ সালে বাংলার মুসলমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি ১৫ লাখ। অর্থাৎ পৃথিবীর মোট মুসলমানদের ১০.৭৫ শতাংশ মুসলমান বাংলাদেশে বাস করেছে। সংখ্যার বিচারে এটি ছিল এককভাবে বিশ্বের প্রথম মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশ। শুধু অটোম্যান সাম্রাজ্যের লোক সংকসংখ্যা ছিল এর চেয়ে বেশি। মিসরের মুসলামের সংখ্যা ছিল এর অধের্ক।
এ বিষয়ে উনবিংশ শতাব্দির সেরা বুদ্ধিজীবী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বঙ্কিম বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রবন্ধের প্রশ্ন তুলে ছিলেন, ‘দেশীয় লোকের অর্ধেক কবে মুসলমান হইল? কেন স্বধর্ম ত্যাগ করিল? কেন মুসলমান হইল? বাঙ্গালার ইতিহাসে ইহার অপেক্ষা গুরুতর তত্ত্ব আর নাই। এরপর যেসব তত্ত্ব আবিস্কার হয়েছে, রিচার্ড এম ইটন, অসীম রায়দের তত্ত্ব খন্ডন করে আকবর আলি খান বলেন, বাংলায় পীরদের আগমনের ফলে ইসলাম প্রসারিত হয়েছে। আরব বণিকদের মাধ্যমে নয়। তিনি ৫১ জন পীরের একটি সারণি তুলে ধরে বলেন, এসব পীরদের ৮২ ভাগ মোগল শাসন প্রতিষ্ঠার আগে বাংলায় এসেছে। মাত্র ১৭ শতাংশ এসসেছে মোগল আমলে।