প্রায় এক যুগ জার্সি গায়ে বিভিন্ন পর্যায়ের জার্মান দলের প্রতিনিধিত্ব করার পর, বর্ণবাদী বৈষম্যের কারণে অবসর নিলেন মেসুত ওজিল। চলুন এক নজরে দেখে নেয়া যাক ওজিলের বর্ণিল ক্যারিয়ার।
বিস্ময় বালক
২০০৫ সালে ওজিল নিজের শহর গালসেনকিয়র্শেনে বুন্ডেসলিগার দল শালকের যুবা দলে যোগ দেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার সাফল্য আসে বেশ দ্রুতই। ২০০৯ সালে জার্মানির হয়ে অনূর্ধ্ব-২১ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন তিনি।
ব্রেমেন এবং তারপর
যারা একসময় ‘ভবিষ্যতের তারকা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন, তাদের হতাশ করেননি প্রতিভাবান ওজিল। শালকের সাথে বেতন নিয়ে বনিবনা না হওয়ার পর ২০০৮ সালে ভ্যার্ডার ব্রেমেনে যোগ দেন তিনি। ২০১০ সালের বিশ্বকাপে তার নজরকাড়া নৈপুণ্য ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ২০১০ সালে ওজিল রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন, পরে তৎকালীন সময়ে ৫০ মিলিয়ন ইউরোর রেকর্ড ট্রান্সফার মানিতে যোগ দেন ইংলিশ দল আর্সেনালে।
সম্মননা
২০১০ সালে ওজিল জার্মানির সর্বোচ্চ মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড ‘বাম্বি’ জিতে নেন৷ জার্মানিতে ওজিল তার পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম। তুর্কি ঐতিহ্য নিয়ে গর্ববোধ করলেও, ওজিল জার্মানির প্রতি তার আনুগত্যের কথা বরাবরই জানিয়ে এসেছেন। ও্যজিল একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। ২০১৬ সালে মক্কায় হজ করে এসেছেন তিনি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছবিও পোস্ট করেছেন।
অ্যাওয়ার্ড ‘বাম্বি’
জয় করেছেন হৃদয়
২০১২ সালে জার্মানির হয়ে তুরস্ককে হারানোর পরে খেলোয়াড়দের কেবিনে গিয়ে ওজিলের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল। নিজের শান্ত মেজাজ ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার অনেক ভক্তকে কাছে টেনেছেন। ২০১৪ সালে নিজের বিশ্বকাপ জয়ের উপার্জন ব্রাজিলের দুস্থ শিশুদের চিকিৎসার জন্য দান করে সবার মন জয় করে নেন তিনি।
জার্মান চ্যান্সেলরের সাথে ওজিল
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন
২০১৪ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পথে সাতটি ম্যাচই শুরুর করেছিলেন ওজিল। জার্মান কোচ জোয়া কি লোর সঙ্গে বরাবরই সুসম্পর্ক ছিল তার। সবচেয়ে বেশি সফল পাসের তালিকায় সেবার তৃতীয় হয়েছিলেন ওজিল। সবচেয়ে বেশি গোলের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার ক্ষেত্রে আর্জেন্টাইন তারকা মেসিই ছিলেন কেবল তার চেয়ে এগিয়ে।
এরদোগান বিতর্ক
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেসিপ তাইয়েপ এরদোগানের সঙ্গে আগেও দেখা করেছেন ওজিল। কিন্তু চলতি বছরের মে মাসে এরদোগানের সাথে এমনই এক সাক্ষাতের পর তোলা ছবি বিতর্ক উসকে দেয়। বামপন্থিরা এই বৈঠক ও ছবিকে বর্ণনা করেছেন স্বৈরাচারী এক শাসকের পক্ষে সমর্থনের প্রতীক বলে, অন্যদিকে, চরম ডান থেকে অভিযোগ এসেছে ওজিলের জার্মানির প্রতি আনুগত্যের অভাবের।
একটি অধ্যায়ের অবসান
রাশিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় জার্মানি। কয়েক দশকের মধ্যে যা ছিল দেশটির সবচেয়ে বাজে পারফর্ম্যান্স। জার্মন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (ডিএফবি) প্রধান রাইনহার্ড গ্রিন্ডেল নিজের দিকে আসতে থাকা সমালোচনার তীর ঘুরিয়ে দেন ওজিলের দিকে৷ তিনি অভিযোগ করেন, এরদোগানের সঙ্গে বৈঠকের পর দলে বিক্ষিপ্ত মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। এর সমালোচনায় মুখর হয়েছেন রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে জার্মান ফুটবল ফ্যানরাও।
জিতলে ‘জার্মান’, হারলে ‘অভিবাসী’
মাত্র ২৯ বছর বয়সেই টুইটারে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে অবসরের ঘোষণা দিলেন ওজিল। গ্রিন্ডেলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তার অদক্ষতার জন্য আমি বলির পাঁঠা হতে রাজি না’। ডিএফবি প্রধানের বিরুদ্ধে বর্ণবাদের অভিযোগও তোলেন তিনি। বাজে সময়ে পাশে থাকায় জার্মান কোচ জোয়া কিম লো এবং সতীর্থদের ধন্যবাদ জানান তিনি। জার্মানির হয়ে মোট ৯২ আন্তর্জাতিক ম্যাচে ২৩টি গোল নিজে করেছেন এবং ৪০টি গোলে সহায়তা করেছেন ওজিল।