অবাক কান্ড এক ধানে দুই চাল !

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি

kaligonj-mokbulঝিনাইদহ : শুনলে অবাক লাগে। আর কথাটা অবাক হওয়ারই মতো। আমরা জানি ধানে ধানে চাল। কিন্তু যদি এক ধানে ভেতর পাওয়া যায় দুই চাল তাহলে কেমন হয়? জলাবদ্ধ পতিত জমিতে দুই চালের ধান চাষ করে আলোচনায় এসেছেন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মকবুল হোসেন নামে এক বৃদ্ধ কৃষক।

সফল কৃষক মকবুল হোসেনের বাড়ি উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামে।

স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, এ অঞ্চলে দুই চালবিশিষ্ট ধান চাষ এটাই প্রথম।

সরেজমিনে দেখা যায়, কৃষক মকবুল হোসেন তার বাড়ির পাশের ৩ শতক জলাবদ্ধ ডোবা জমিতে চাষ করেছেন ২ চাল বিশিষ্ঠ ধান। এ জাতের ধান গাছগুলো মাঠের অন্য জাতের চেয়ে অপেক্ষাকৃত অনেক লম্বা এবং মোটা। ধানের বাইলগুলোও অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতিটি বাইলে অন্য জাতের চেয়ে অধিক সংখ্যক ধান ধরে রয়েছে।

কৃষক মকবুল হোসেন জানান, ৬ বছর আগে দেশের একটি এনজিও সংস্থা থেকে তিনি মাত্র ২০ গ্রাম দুই চাল বিশিষ্ট ধানবীজ পেয়েছিলেন। এ এলাকায় দুই চালের ধান চাষ নেই। তাই অতি আগ্রহে এগুলো বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে ভালো করে রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করেন। এরপর আমন মৌসুমে বীজতলার একপাশে চারা তৈরি করেন। ওই বছর অন্য জাতের ধান ক্ষেতের একপাশে রোপনের মাধ্যমে মাত্র ৬শ গ্রাম ধান পান। পরের বছর পুষ্ট বীজগুলো বেছে আগের বছরের চেয়ে একটু উঁচু জমিতে রোপন করেন। কিন্ত এ বছর ধানগাছগুলো অপেক্ষাকৃত চিকন হয়ে যায়।

পরবর্তী মৌসুমে বাড়ির পাশের ডোবা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে উঁচু জমির চেয়ে গাছগুলো সতেজ দেখতে পান। তখন বুঝতে পারেন এটা জলাবদ্ধ জমিতে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। এ বছরও তিনি বাড়ির পাশের ওই ডোবা ৩ শতক জমিতে চাষ করেছেন। প্রায় দেড় মন ধান পাবেন বলে আশা করছেন। সবটুকু ধান বীজ হিসেবে রেখে দিবেন।

তিনি জানান, জলাবদ্ধ বিলের জমিতে দেশি জাতের অনেক ধান চাষ করা হয়। সে ধানগুলো মোটা। কিন্ত তার এ জাতের ধানের মধ্যে দুটি করে চাল থাকায় সেটা অপেক্ষাকৃত চিকন। কৃষক মকবুলের দাবি পানি সহনশীল দেশি যেকোনো জাতের চেয়ে এ জাতীয় ধান বেশি পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারে। জলাবদ্ধ জমির যেকোনো ধানের চেয়ে ফলনশীল। চাল চিকন হওয়ায় বাজারে এ জাতীয় ধানের দামও বেশি পাবেন কৃষক।

এ ব্যাপারে স্থানীয় কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলার মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন তার জলাবদ্ধ একখণ্ড জমিতে এ ধানের চাষ করেছেন। তিনি তার ক্ষেতও পরিদর্শন করেছেন। তার জানামতে দুই চালের ধান এ অঞ্চলে এই প্রথম। দেশের আর কোনো অঞ্চলে এ জাতের ধান চাষ হয় কিনা তার জানা নেই।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. তমাল লতা আদিত্য জানান, এটা একটি দেশি জাতের ধান হতে পারে। দিনাজপুর জেলায় এমন জাতের ধান আগে দু’একজন কৃষক চাষ করেছেন। এটা জলাবদ্ধ নিচু জমিতে ভালো হয়। উঁচু জমিতে ফলন আশানুরূপ নয়। তবে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের সঙ্গে প্রজনন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফলন বাড়ানো সম্ভব হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *