চাঁদাবাজ ও যমুনা নিউজের মালিক জনি গ্রেফতার

বাংলার আদালত

5_187267কারওয়ান বাজারের কুখ্যাত চাঁদাবাজ ও ভুয়া সাংবাদিক জাহাঙ্গীর আলম জনিকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মঙ্গলবার ভোরে মগবাজারে তার মালিনাকাধীন অনলাইন যুমনা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর রমনা, গুলশান, চাঁদপুর, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এক ডজনেরও বেশি মামলা এবং জিডি রয়েছে। গ্রেফতারের পর তাকে রমনা থানার আরও দুটি ও গুলশান থানার একটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম জনি সম্পর্কে জানা গেছে, কারওয়ান বাজারে তার জুয়েলারি দোকান রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে সোনা পাচার ও প্রতারণাই তার মূল ব্যবসা। প্রতারণার কাজে সহযোগী হিসেবে সে এ সময় কয়েকজন আন্ডারগ্রাউন্ড সাংবাদিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে। পরে ‘একুশের বাণী’ নামে একটি পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে আইডি কার্ড তৈরি করে। এরপর বিভিন্ন সময়ে সে দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক জনতা, দৈনিক ইনকিলাবসহ বিভিন্ন পত্রিকার ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে ওই সব গণমাধ্যমের সাংবাদিক পরিচয় দিতে থাকে। বিভিন্ন জনকে হুমকি ও ব্ল্যাকমেইলিং করে অর্থ আদায় করাই ছিল তার পেশা। এক পর্যায়ে সে ‘যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম’ নামে একটি অনলাইন চালু করে। এর অফিস নেয়া হয় ৩২৪, টঙ্গী ডাইভারশন রোড মগবাজারে। দেশের অন্যতম প্রধান শিল্প প্রতিষ্ঠান যমুনা গ্র“পের আদলে সে যমুনা নিউজের লোগো তৈরি করে। যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম যমুনা গ্র“পেরই একটি প্রতিষ্ঠান বলে পরিচয় দিয়ে জাহাঙ্গীর আলম জনি বিভিন্ন জনের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।
এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়েরের পর তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর বন্ধ করে জাহাঙ্গীর আলম জনির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিটিআরসিকে নির্দেশ দেয়া হয়। এরপরও রহস্যজনক কারণে তার যমুনা নিউজ বন্ধ করা হয়নি।
এছাড়াও সে নগরীর বিভিন্ন থানায় আসামি ধরিয়ে দেয়া, ছাড়িয়ে নেয়াসহ দালালি এবং তদবিরের কাজ শুরু করে। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ডিএমপির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গেও সে সখ্য গড়ে তোলে। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন তদবির ও মানুষকে জিম্মি করে অর্থ আদায় করাটাই ছিল জাহাঙ্গীর আলম জনির পেশা। একসময় সে দ্রুত টাকা কামানোর জন্য ভিওআইপি ব্যবসা শুরু করে। এলিট ফোর্স র‌্যাব জনির অফিস থেকে ভিওআইপি সরঞ্জাম উদ্ধার করে তাকে আটক ও তার বিরুদ্ধে রমনা থানায় মামলা করে। এ মামলায়ও তাকে আটকে রাখা যায়নি। মাত্র দু’দিনের মাথায় সে জামিনে বের হয়ে আসে।
গত ২ নভেম্বর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিদর্শক আজিজুল ইসলাম রমনা মডেল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকমের চেয়ারম্যান মেহবুবা আক্তার সাথী ও সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম ও সংশ্লিষ্ট রিপোর্টার তার বিরুদ্ধে মিথ্যা, অসত্য ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করতে থাকে। সংবাদ প্রকাশের পর জনি বিভিন্ন মোবাইল ফোনে আজিজুল ইসলামকে হুমকি দেন। এ কারণে তিনি তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের করেন। চতুর জনি আগেই হাইকোর্ট থেকে এই মামলায় জামিন নিয়ে রাখেন। পরে তাকে চাঁদাবাজি ও ভিওআইপির মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোরের চেয়ারম্যান মেহবুবা আক্তার সাথী সম্পর্কেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। বিয়ে না হলেও জনি বিভিন্ন স্থানে সাথীকে তার স্ত্রী পরিচয় দেয়। সাথীর বিরুদ্ধেও ব্ল্যাকমেইলিং ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। যমুনা নিউজ টুয়েন্টিফোর থেকে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে বেতন না দিয়ে বের করে দেয়াসহ অসংখ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, জনির বিরুদ্ধে রমনা থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনে দুটি, ভিওআইপির একটি এবং গুলশান থানায় চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। এছাড়া কুমিল্লায় একটি ও চাঁদপুরে দুটি মানহানির মামলা রয়েছে। এসএ টিভির সাংবাদিক ওয়াহিদ মিল্টন যুগান্তরকে জানান, তার কাছে চাঁদা দাবি করার অভিযোগে তিনি ৯ নভেম্বর গুলশান থানায় জনির বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জনি তার কাছেও মোটা অংকের চাঁদা দাবি করেছিল। চাঁদা না দেয়ায় তার মালিকানাধীন অনলাইন পত্রিকায় একের পর এক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করে।
রমনা থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, ডিবি পুলিশের একটি টিম জনিকে আটক করে থানায় সোপর্দ করেছে। তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।- যুগান্তর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *