ঢাকা:প্রত্যেক উপজেলায় পাবলিক পরীক্ষা নেয়ার জন্য স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসব কেন্দ্রে পাবলিক পরীক্ষা ও চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হবে। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিয়োগ দেয়া হবে আলাদা জনবল। দেয়া হবে আধুনিক অবকাঠামোগত সুবিধা । পাবলিক পরীক্ষায় নকলের প্রবণতা, প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষার সময় দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা কমাতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনের প্রস্তাবের আলোকে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু পাবলিক নয় স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগসহ অন্যান্য পরীক্ষাও নিতে পারবে। তবে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি এ তিনটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য বছরের পৌনে দুইমাস ক্লাস বঞ্চিত থাকে শিক্ষার্থীরা। এতে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সারা বছরের শিক্ষাসূচি এলোমেলো হয়ে যায়।
কেন্দ্র পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ে অন্য স্কুলের পাঠদান সূচি থেকে। এমন বাস্তবতায় প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র করার সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসকরা। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার প্রথম বৈঠকে বসে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মহিউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালাকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে মাউশি ও শিক্ষা বোর্ডের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। দ্রত সময়ের মধ্যে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে সে প্রস্তাব অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়নে যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কমিটি আহ্বায়ক ও ইইডি’র প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালা মানবজমিনকে বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে এমন একটি প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে আমরা প্রথম বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম অগ্রসর হবে। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, কমিটি সারা দেশে উপজেলার শিক্ষার্থী, অবকাঠামো, পরীক্ষার সময় কতগুলো কেন্দ্র আছে, ভেুন্য কেন্দ্র কতটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যালোচনা করে একটি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য মহানগর, বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলা শহরে কয়টা কেন্দ্র হবে তাও যাচাই-বাছাই করবে কমিটি। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় পাবলিক পরীক্ষা চলার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ পাঠবঞ্চিত হয় তাও উপস্থাপন করা হবে।
চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ব্যাপক হারে প্রশ্নফাঁস হওয়ার পর বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা কেন্দ্র, ভেন্যু কেন্দ্র বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন। সেখানেও পরীক্ষা নেয়ার জন্য আলাদা কোনো ব্যবস্থা করা যায় কীনা সেটি সরকারের কাছে তুলে ধরেন। শিক্ষা বোর্ডগুলো তথ্যমতে, এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় ফেব্রুয়ারি-মার্চ, এইচএসসি পরীক্ষা সময় মে-জুন এবং জেএসসি’র সময় নভেম্বর মাসে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত ছুটি থাকে।
শিক্ষকরা জানান, পরীক্ষা সময় পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা অন্য একাধিক বিদ্যালয় থেকে বেঞ্চ আনা হয়। এতে অন্যান্য স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র না থাকার পরও পাঠদান বিঘ্নিত হয়। এ সুযোগে শিক্ষকরা কোচিং করাতে চাপ প্রয়োগ করে। স্কুল বন্ধ তাই কোচিং-এ পড়িয়ে তা পুষিয়ে দেয়া হবে এমন কথা বলে শিক্ষার্থীদের চাপ দিয়ে বাধ্য করেন শিক্ষকরা।
পরীক্ষার সময় অনেক অভিভাবক স্ব-উদ্যোগে তাঁদের সন্তানকে কোচিংয়ে পাঠান। কিন্তু দরিদ্র অভিভাবকেরা টাকার অভাবে সন্তানকে কোচিং করাতে পারেন না। ফলে তাঁদের সন্তানেরা শ্রেণিপাঠ থেকে পিছিয়ে থাকে। এমন প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) বিভিন্ন সময় উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় বহুতল ভবন নির্মাণ করে বছরের সব পরীক্ষা সেখানে নেয়ার জন্য বলে আসছিলেন। এতে পাঠদান বিঘ্নিত হবে না বলে লিখিত সুপারিশ করেন তারা।
এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, এটা সময়ের দাবি। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা কেন্দ্র হলো পরীক্ষা নেয়ার চাপ অনেকাংশে কমে যাবে বোর্ডগুলোর। পরীক্ষাও একটি স্বচ্ছতায় চলে আসবে। প্রশ্ন ছাপিয়ে পরীক্ষার আগ মুর্হূতে অনলাইনে কেন্দ্র পাঠানোর সরকারের উদ্যোগ সহজীকরণ হবে। তিনি আরো বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে না। যে যার মতো পরীক্ষা ও ক্লাস নিবে। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পাঠদান বঞ্চিত হবে না।