মস্কো, রাশিয়া: ইতিহাসের খাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা হল ফ্রান্সের নাম। দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বসেরার ট্রফি ঘরে তুললো ফরাসিরা। মাথা উঁচু করে বীরের বেশে দেশে ফেরার পালা তাদের। তবে ইতিহাস রচনা করেছে ক্রোয়েশিয়াও। তারা প্রথমবার রানার্সআপের ব্যাচ ধারণ করল বুকে।
লড়াইটা শুরু হয়েছিল ১৪ই জুন মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। আবারও সেই লুঝনিকি স্টেডিয়াম।
এখানেই পর্দা নামলো ২১তম বিশ্বকাপের। ৩২ দলের ৬৪ ম্যাচের ক্ষণ গণনা শেষে বিশ্ব পেল চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে।
ফ্রান্স ৪-২ ক্রোয়েশিয়া
রাশিয়া বিশ্বকাপ ২০১৮’র ফাইনাল ম্যাচ। মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স-ক্রোয়েশিয়া। খেলায় প্রতিনিয়ত বদলাতে থাকে খেলার রং। ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে গিয়েছিল ফরাসিরা। খেলার ১৭ মিনিটে ফ্রি কিক পায় ফ্রান্স। ডি বক্সের সামান্য বাইর থেকে নেয়া সেই কিকে মাথা ছুঁয়ে বিপদ ডেকে আনেন মারিও মানজুকিচ। দিয়ে দেন আত্মঘাতী গোল। খেলায় ফিরতে সময় নেয়নি ক্রোয়েটরা। ২৮ মিনিটে পেরিসিচের গোলে সমতায় ফেরে তারা। জমজমাট লড়াইয়ের ম্যাচে ৩৫ মিনিটে আবারও ভাগ্য সহায় হয় ফরাসিদের। পেয়ে যান পেনাল্টি। স্কোর করবার সুবর্ণ সুযোগ মিস করেননি গ্রিজম্যান। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের পর খেলায় ফিরতে মরিয়া ক্রোয়েশিয়া শুরু করে মাঠের লড়াই। কিন্তু ৫৯ মিনিটে পগবা ডি বক্সের ভিতরের জটলা থেকে অসাধারণ শটে এগিয়ে নেন ফ্রান্সকে। আবারও ৬৪ মিনিটে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এবারের স্কোরার এমবাপ্পে। ৬৯ মিনিটে খেলায় ফেরার বার্তা দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। আত্মঘাতী গোলের চাপ সামলে নিয়ে গোল করেন মানজুকিচ। তবে আর গোলের সন্ধান না পাওয়ায় হারের স্বাদ পেতে হয় তাদের।
ফ্রান্স বনাম ক্রোয়েশিয়া
ফ্রান্স ও ক্রোয়েশিয়া পরস্পর মুখোমুখি হয়েছে ৬ ম্যাচে। ফরাসিরা জয় পেয়েছে ৪ ম্যাচে এবং ড্র হয় ২ ম্যাচ। বিশ্বকাপে ২ বারের দেখায় ২ বারই জয় পেল ফ্রান্স।
ফ্রান্স
র্যাঙ্কিং: ৭
তৃতীয়বারের মত ফাইনালে খেলে ফ্রান্স। ১৯৯৮ সালে ঘরের মাঠে ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে অর্জন করেছিল তাদের একমাত্র শেষ্ঠ্রত্বের ট্রফি। আর ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপে ইতালির কাছে খুইয়েছিল শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট। এবারের জয়ে হাসিল হল দ্বিতীয় শিরোপা।
রোড টু ফাইনাল
ফ্রান্স প্রথম রাউন্ডের ৩ ম্যাচের ২ টিতে পায় জয়ের দেখা এবং ১ ম্যাচে করে ড্র। ৭ পয়েন্ট নিয়ে তারা হয়েছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্স ৪-৩ গোলে আর্জেন্টিনাকে হারায় এবং কোয়ার্টার ফাইনালে ২-০ গোলে জয় পায় উরুগুয়ের বিপক্ষে। সেমিতে বেলজিয়ামকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথমবারের মত পা রাখে ফাইনালে।
ক্রোয়েশিয়া
র্যাঙ্কিং: ২০
ক্রোয়েশিয়ার এটিই ছিল তাদের প্রথম ফাইনাল ম্যাচ। তাই এই ম্যাচে পরাজয়েও তাদের রঙিন হল ইতিহাস। প্রথমবার হল রানার্সআপের খেতাব পেল তারা। নিজেদের খেলা প্রথম বিশ্বকাপে ক্রোয়েটরা ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপে হয়েছিল চার নম্বর, এটিই ছিল তাদের এতদিন গৌরবের অধ্যায়।
রোড টু ফাইনাল
ক্রোয়েশিয়া প্রথম রাউন্ডে ৩ ম্যাচেই জয় নিয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে হয়েছিল গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন। দ্বিতীয় রাউন্ডে ডেনমার্কের বিপক্ষে টাইব্রেকারে জয় পায় তারা। কোয়ার্টারে আবারও সেই টাইব্রেকারে হারায় স্বাগতিক রাশিয়াকে। সেমিতে পিছিয়ে থেকেও ২-১ গোলের জয় ছিনিয়ে নেয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
ফ্রান্স একাদশ
হুগো লরিস (গোলরক্ষক, অধিনায়ক), স্যামুয়েল উমতিতি, রাফায়েল ভারানে, লুকাস হার্নান্দেজ, বেনজামিন পাভার্দ, আন্তোনিও গ্রিজম্যান, এনগোলা কন্তে, পল পগবা, অলিভিয়ের জিরু, মাতুইদি ও কাইলিয়ান এমবাপ্পে।
ফরমেশন: ৪-২-৩-১
ক্রোয়েশিয়া একাদশ
ড্যানিয়েল সুবাসিচ, সিমে ভ্রাসালকো, ইভান স্ট্রিনিচ, ডেজান লভরেন, ডোমাগজ ভিদা, ইভান রাকিটিচ, লুকা মদরিচ (অধিনায়ক), ইভান পেরিসিচ, ব্রোজোভিচ, মারিও মানজুকিচ, আনতে রেবিচ।
ফরমেশন: ৪-২-৩-১