ঢাকা: লাহোর বিমানবন্দরে গ্রেপ্তারের পর পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে হেলিকপ্টারে করে ইসলামাবাদে নেওয়া হয়। ইসলামাবাদ থেকে তাঁদের রাওয়ালপিন্ডির রিয়ালের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়া হয়। সেখানে নওয়াজ ও মরিয়মের শারীরিক পরীক্ষা করা হয়। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়েছে।
একই সময়ে ‘শিহালা ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউস’কে সাব-জেল ঘোষণা করে ইসলামাবাদের চিফ কমিশনার একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেন। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ এবং মরিয়ম নওয়াজকে রাখতে শিহালা ট্রেনিং কলেজ রেস্ট হাউসকে সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’
এপর আরেকটি প্রজ্ঞাপনে শিহালা সাব-জেলে শুধু মরিয়মকে রাখার নির্দেশ জারি করা হয় এবং আগের প্রজ্ঞাপনটি অকার্যকর ঘোষণা করা হয়।
তবে নওয়াজ শরিফকে রিয়ালের কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হবে না কি অন্য কোথাও নেওয়া হবে এ বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই গ্রেপ্তার হন পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। ডন নিউজের খবরে বলা হয়, লাহোর বিমানবন্দরে নামার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই নওয়াজ ও তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুক্রবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৫০ মিনিটে লাহোর বিমানবন্দরে নামেন তাঁরা।
দুর্নীতির দায়ে ৬ জুলাই নওয়াজ শরিফকে ১০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁর মেয়ে মরিয়ম নওয়াজকে ৭ বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।
আদালতের রায় ঘোষণার সময় নওয়াজ ও মরিয়ম লন্ডনে অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার লন্ডন থেকে আবুধাবি হয়ে দেশে ফিরলেন তাঁরা। তাঁদের আগমন উপলক্ষে নওয়াজের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) লাহোরে ব্যাপক শোডাউনের আয়োজন করে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
আদালত নওয়াজ-মরিয়মের সঙ্গে ক্যাপ্টেন সফদারকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন। সফদার হলেন মরিয়মের স্বামী। পাকিস্তানের অ্যাকাউন্টিবিলিটি কোর্ট ওই রায় দেন। কারাদণ্ডাদেশের পাশাপাশি নওয়াজকে ৮০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড ও মরিয়মকে ২০ লাখ ব্রিটিশ পাউন্ড জরিমানা করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন সফদার গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে।
সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, লন্ডনে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনাকে কেন্দ্র করে নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনে পার্ক লেনের অ্যাভেনফিল্ড হাউসে চারটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনে নওয়াজের পরিবার। নওয়াজ শরিফ বরাবরই দুর্নীতির এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে আসছেন। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ফ্ল্যাট কেনার অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন নওয়াজ।
এর আগে ২০১৫ সালে পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে নাম আসে নওয়াজের। ওই সময় জানা গিয়েছিল, বেশ কয়েকটি অফশোর কোম্পানির সঙ্গে নওয়াজ শরিফের ছেলে-মেয়েদের যোগসূত্র রয়েছে। অভিযোগ আছে, এই কোম্পানিগুলোকে ব্যবহার করে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে এবং বিদেশে নানা সম্পদ কেনা হয়েছে। আলোচনায় ছিল লন্ডনে কেনা এই বিলাসবহুল ফ্ল্যাটগুলোও।
পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে যেতে হয় নওয়াজ শরিফকে। দেশের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে অযোগ্য ঘোষণা করেন। আদালত তাঁকে রাষ্ট্রীয় যেকোনো পদে আজীবন নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। পরে আদালতের রায়ে দলীয় প্রধানের পদও ছাড়তে হয় নওয়াজকে।